জি এম কাদেরের দায়িত্ব পালন নিয়ে হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত চেয়ে আবেদন

জি এম কাদের
ছবি: সংগৃহীত

জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান হিসেবে গোলাম মোহাম্মদ (জি এম) কাদেরের দায়িত্ব পালন নিয়ে হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত চেয়ে আজ বৃহস্পতিবার আবেদন করা হয়েছে। এর আগে আবেদন দায়েরের জন্য গতকাল বুধবার অনুমতি নেওয়া হয়।

জাপা থেকে বহিষ্কৃত নেতা জিয়াউল হক মৃধা আবেদনটি করছেন বলে জানিয়েছেন তাঁর আইনজীবী মোহাম্মদ সাঈদ আহমেদ। আজ বৃহস্পতিবার তিনি প্রথম আলোকে বলেন, গতকাল বুধবার আবেদনটি দায়েরের জন্য আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত থেকে অনুমতি নেওয়া হয়েছে। আগামী রোববার আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতে আবেদনের ওপর শুনানি হতে পারে।

আরও পড়ুন

জাপার চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালনের ওপর দেওয়া অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা প্রশ্নে জি এম কাদেরের করা বিবিধ আপিল খারিজ করে গত ১৯ জানুয়ারি আদেশ দেন ঢাকার জেলা ও দায়রা জজ। ফলে জি এম কাদেরের দায়িত্ব পালনে গত ৩০ অক্টোবর ঢাকার প্রথম যুগ্ম জেলা জজ আদালতের আদেশ বহাল থাকে।

এ অবস্থায় গত ১৯ জানুয়ারি ঢাকার জেলা ও দায়রা জজের দেওয়া আদেশের বিরুদ্ধে জি এম কাদের হাইকোর্টে রিভিশন আবেদন করেন। এই আবেদনের শুনানি নিয়ে ৫ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট রুল দিয়ে ১৯ জানুয়ারি জেলা জজের দেওয়া আদেশ আট সপ্তাহের জন্য স্থগিত করেন। ফলে, জি এম কাদেরের দায়িত্ব পালনের পথ খোলে।

এমন প্রেক্ষাপটে হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত চেয়ে আপিল বিভাগে আবেদন দায়ের করতে গতকাল চেম্বার আদালত থেকে অনুমতি নেন জাপার সাবেক সংসদ সদস্য জিয়াউল হক। তাঁর আরেক আইনজীবী হেলাল উদ্দিন প্রথম আলাকে বলেন, ‘আবেদনের অনুমতি নেওয়া হয়েছে। আনুষঙ্গিক প্রক্রিয়া শেষে আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে আবেদনটি দায়ের করা হয়।’

গত বছরের ৪ অক্টোবর জিয়াউল হক মৃধা নিষেধাজ্ঞা চেয়ে মামলাটি করেন। বাদীর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত ৩০ অক্টোবর ঢাকার প্রথম যুগ্ম জেলা জজ আদালত জাপার চেয়ারম্যান হিসেবে জি এম কাদেরের দলীয় কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও দায়িত্ব পালন থেকে বিরত রাখতে অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার আদেশ দেন।

আরও পড়ুন

পরে এই আদেশ প্রত্যাহার চেয়ে জি এম কাদের আবেদন করেন। তাঁর আবেদন গত ১৬ নভেম্বর খারিজ করে দেন আদালত। এর বিরুদ্ধে জেলা জজ আদালতে আপিল করেন তিনি। আপিলের গ্রহণযোগ্যতার ওপর শুনানির জন্য ৯ জানুয়ারি দিন রাখা হয়। এ অবস্থায় শুনানি এগোনোর জন্য আবেদন করেন জি এম কাদের, যা গত ২৪ নভেম্বর খারিজ হয়। এর বিরুদ্ধে তিনি হাইকোর্টে রিভিশন আবেদন করেন।

এর শুনানি নিয়ে গত ২৯ নভেম্বর হাইকোর্ট রুলসহ স্থগিতাদেশ দেন। এর বিরুদ্ধে জিয়াউল হক মৃধা আপিল বিভাগে যান। আপিল বিভাগ জিয়াউল হক মৃধার করা আবেদন নিষ্পত্তি করে গত ১৪ ডিসেম্বর আদেশ দেন। পাশাপাশি জেলা জজ আদালতে থাকা জি এম কাদেরের আপিল দ্রুত শুনানি করতে নির্দেশ দেওয়া হয়। এই বিবিধ আপিল জেলা জজ আদালতে ১৯ জানুয়ারি খারিজ হয়।

জি এম কাদেরের আইনজীবী শেখ মুহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম আজ বেলা পৌনে একটার দিকে প্রথম আলোকে বলেন, ‘৫ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টের দেওয়া আদেশের পর ক্যাভিয়েট (অবহতি করতে) দায়ের করা হয়। তাই কোনো পক্ষ হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আবেদন করলে স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় আনুষ্ঠানিকভাবে তা জানানো ও আবেদনের কপি দেওয়ার কথা। কিন্তু আমরা এখন পর্যন্ত কোনো আবেদনের কপি পাইনি।’

আরও পড়ুন

জিয়াউল হক মৃধার মামলার অভিযোগে বলা হয়, জাপার প্রতিষ্ঠাতা সাবেক রাষ্ট্রপতি এইচ এম এরশাদ ২০১৯ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর মৃত্যুবরণ করেন। এরপর বিবাদী জি এম কাদের হাইকোর্ট বিভাগের একটি রিট মামলা বিচারাধীন থাকার পরও জালজালিয়াতির মাধ্যমে একই বছর ২৮ ডিসেম্বর কাউন্সিল করেন। তিনি নিজেকে জাপার চেয়ারম্যান হিসেবে ঘোষণা করেন। গত বছরের ৫ মার্চ গাজীপুর মহানগর কমিটির উপদেষ্টা আতাউর রহমান সরকারসহ কয়েকজনকে তিনি দল থেকে বহিষ্কার করেন। গত ১৪ সেপ্টেম্বর মসিউর রহমান রাঙ্গাকে দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য পদ থেকে বহিষ্কার করেন তিনি। আর গত ১৭ সেপ্টেম্বর তাঁকে (জিয়াউল হক মৃধা) জাপা থেকে বহিষ্কার করেন জি এম কাদের, যা অবৈধ।