ছিনতাই, চাঁদাবাজিতেও ছাত্রলীগের নাম আসছে

চাঁদাবাজি, ছিনতাই, প্রশ্নপত্র ফাঁসসহ বিভিন্ন অপরাধে জড়িত ছাত্রলীগের ৪৫ নেতা-কর্মীকে গত ছয় বছরে বহিষ্কার করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

ছিনতাই
প্রতীকী ছবি

প্রতিপক্ষের ওপর হামলা, মাঝেমধ্যে নিজেরাই মারামারিতে জড়ানো—এই প্রবণতা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের মধ্যে আগের মতোই রয়ে গেছে। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে চাঁদাবাজি ও ছিনতাই। গত ফেব্রুয়ারি মাসেই ছিনতাই-চাঁদাবাজির ঘটনায় ছাত্রলীগের পাঁচজন নেতা-কর্মীকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

এ ছাড়া প্রশ্নপত্র ফাঁস এবং অপহরণের মতো অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডেও বিভিন্ন সময়ে এই সংগঠনের নেতা-কর্মীদের নাম এসেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সূত্রগুলো বলছে, ২০১৭ সালের জানুয়ারি থেকে গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ছয় বছরে অপরাধের বিভিন্ন ঘটনায় ছাত্রলীগের অন্তত ৪৫ জন নেতা-কর্মীকে বিশ্ববিদ্যালয় ও হল থেকে স্থায়ী ও সাময়িকভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে। এর মধ্যে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে অন্তত ২০ জনকে (এর মধ্যে একজনের স্থায়ী বহিষ্কারাদেশ কমিয়ে পরে দুই বছর করা হয়)। এ ছাড়া অপরাধের বিভিন্ন ঘটনায় অনেকের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছে। তবে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার পরও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের মধ্যে অপরাধপ্রবণতা কমছে না।

ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রসংগঠনের ধারাবাহিক অপরাধপ্রবণতা খুবই দুঃখজনক ও নিন্দনীয়। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ—সবারই এ বিষয়ে সজাগ ও সাবধান হওয়া উচিত।
অধ্যাপক নজরুল ইসলাম, সাবেক চেয়ারম্যান, ইউজিসি

সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর নির্যাতনের বিভিন্ন ঘটনায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের নাম আসছে। অপরাধ ও নির্যাতনের ঘটনাগুলোতে জড়িত নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে ছাত্রলীগ নেতৃত্ব সাংগঠনিকভাবে বিভিন্ন ব্যবস্থাও অবশ্য নিচ্ছে। গত ছয় বছরে শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের বিভিন্ন ঘটনায় কমপক্ষে ৫০ জনকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করেছে ছাত্রলীগ।

আরও পড়ুন

গত বছরের ডিসেম্বরে নেতৃত্বে আসার কয়েক দিনের মধ্যেই ‘স্মার্ট ছাত্রলীগ’ গড়তে সারা দেশের সব ইউনিটের উদ্দেশে ১০ দফা সাংগঠনিক নির্দেশনা দেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাদ্দাম হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ। এসব নির্দেশনার মধ্যে ছিল প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের একাডেমিক পরিবেশ বজায় রেখে সাংগঠনিক কর্মসূচি পরিচালনা করা এবং শিক্ষার্থীদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিটি বিষয়ে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন। কেন্দ্রের নির্দেশনার কয়েক দিন পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মাজহারুল কবির ও সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান ৮ দফা নির্দেশনা দেন। এর মধ্যে অন্যতম ছিল আবাসিক হলগুলোয় শিক্ষার পরিবেশ নিশ্চিত করতে ভূমিকা রাখা।

তবে এসব নির্দেশনা কার্যত ‘কাগুজে দলিল’ হিসেবেই রয়ে গেছে। গত দুই মাসে শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হলে চারবার নিজেদের মধ্যে মারামারিতে জড়িয়েছে ছাত্রলীগ। এসব ঘটনায় সংগঠনের বিভিন্ন পক্ষের অন্তত ৩৩ নেতা-কর্মী আহত হন। শুধু তা-ই নয়, গত দুই মাসে অন্তত ছয়টি ছিনতাই-চাঁদাবাজির ঘটনায় অভিযুক্ত হয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। গত ১৫ জানুয়ারি রাতে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এক দম্পতিকে মারধর করে স্বর্ণালংকার ছিনতাইয়ের ঘটনায় করা মামলায় আসামি করা হয়েছে ছাত্রলীগের দুই নেতা রাহুল রায় ও তানজির আরাফাত ওরফে তুষারকে। রাহুল কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সদ্য সাবেক সদস্য আর তানজির কবি জসীমউদ্‌দীন হল শাখার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। আর ৩০ জানুয়ারি চাঁদার জন্য ‘তলব’ করার পর যেতে রাজি না হওয়ায় প্রথমে ফোনে হুমকি দেওয়া ও পরে লোক পাঠিয়ে রাজধানীর বঙ্গবাজারের এক ব্যবসায়ীর মালামাল ভাঙচুরের ঘটনায় নাম এসেছে অমর একুশে হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ইমদাদুল হাসানের।

গত অর্ধযুগে ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার নেতৃত্ব দিয়েছেন ছয় নেতা। নেতা বদলালেও পরিস্থিতি যে আগের মতোই রয়েছে, সেটি সাম্প্রতিক বিভিন্ন ঘটনাই প্রমাণ করে। এর মধ্যে গত ৪ ফেব্রুয়ারি রাতে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার এলাকায় ছিনতাই-মারধরের ঘটনায় করা একটি মামলার আসামি করা হয়েছে মাস্টারদা সূর্যসেন হল শাখা ছাত্রলীগের কমিটির সদস্য ফাহিম তাজওয়ার ও সাজিদ আহমেদকে। পরদিন ৫ ফেব্রুয়ারি গভীর রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসসংলগ্ন বুয়েট মসজিদের সামনে কাভার্ড ভ্যান আটকে ছিনতাই ও চালককে মারধরের মামলায় গ্রেপ্তার হন ছাত্রলীগের কর্মী ফজলে নাভিদ, সাদিক আহাম্মদ ও মো. রাহাত রহমান। সর্বশেষ ১৬ ফেব্রুয়ারি রাতে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে পুলিশ পরিচয় দিয়ে চাঁদাবাজির সময় হাতেনাতে গ্রেপ্তার হন সূর্যসেন হল শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি মোহাইমেনুল ইসলাম ও শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হল শাখার সহসভাপতি রাজীব হোসেন।

প্রশ্নপত্র ফাঁসে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের নাম

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস ও জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে ২০১৯ সালের ২৩ জুন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮৭ জন শিক্ষার্থীসহ ১২৫ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। ২০১৮ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৪ দফায় ৮৭ জন শিক্ষার্থীকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আজীবন বহিষ্কার করা হয়। তাঁদের মধ্যে ১৪ জন ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের পদধারী নেতা।

সিআইডি বলেছিল, আজীবন বহিষ্কৃত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্‌ হলের সাবেক শিক্ষার্থী মহিউদ্দিন রানা ছিলেন প্রশ্নপত্র ফাঁসের অন্যতম মূল হোতা। তখন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহসম্পাদক পদে ছিলেন তিনি। প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় তাঁকে তখন গ্রেপ্তারও করা হয়েছিল। জেল খেটে বের হওয়ার পর ২০২০ সালের নভেম্বরে তিনি যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হন।

আর প্রশ্নপত্র ফাঁসে আজীবন বহিষ্কৃত শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হল শাখা ছাত্রলীগের সাবেক আন্তর্জাতিকবিষয়ক উপসম্পাদক মো. বায়েজিদ এখনো হলে থাকছেন।

অভিযোগের শেষ নেই

২০১৭ সালের জানুয়ারি থেকে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত অর্ধযুগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সংঘটিত বিভিন্ন অপরাধের ঘটনা পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ২০১৭ ও ২০১৮ সালে ছাত্রলীগের কর্মসূচিতে না যাওয়ায় আবাসিক হলে শিক্ষার্থীদের মারধর, শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ততার অভিযোগ তুলে নির্যাতন ও রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের ওপর হামলা চালানোর ঘটনা বেশি ছিল। ২০১৮ সালের শেষ দিকে ছিনতাই-চাঁদাবাজির ঘটনা বাড়তে থাকে।

২০১৮ সালের ২৩ জানুয়ারি ‘নিপীড়নবিরোধী শিক্ষার্থীবৃন্দ’ ব্যানারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামানের কার্যালয়ের ফটক ভেঙে তাঁকে অবরুদ্ধ করেছিলেন বামপন্থী বিভিন্ন ছাত্রসংগঠনের নেতা-কর্মীরা। পরে ছাত্রলীগ তাঁদের পিটিয়ে উপাচার্যকে উদ্ধার করে। ওই ঘটনায় আন্দোলনকারীদের অন্তত ৪০ জন আহত হন। ওই বছরের ২২ অক্টোবর রমনা কালীমন্দির এলাকায় ছিনতাইয়ে জড়িত থাকার ঘটনায় করা মামলায় গ্রেপ্তার হন ছাত্রলীগ কর্মী নাফিউর রহমান, আবির হাসান ও কামরুল হাসান। একই বছরের ১৪ ডিসেম্বর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার এলাকা থেকে দুই ব্যক্তিকে তুলে নিয়ে জিম্মি করে তাঁদের পরিবারের কাছে মুক্তিপণ দাবি করেন ছাত্রলীগ নেতা আখতারুজ্জামানসহ পাঁচজন।

২০১৯ সালের ২২ ডিসেম্বর ডাকসু ভবনে তৎকালীন ভিপি নুরুল হকের কক্ষের বাতি নিভিয়ে তাঁকে ও তাঁর সহযোগীদের বেদম পেটান ছাত্রলীগ ও মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের নেতা-কর্মীরা।

২০২০ ও ২০২১ সালে করোনা পরিস্থিতির সময় ক্যাম্পাস বন্ধ ছিল। ওই সময় ক্যাম্পাস এবং আশপাশ এলাকায় ছিনতাই-চাঁদাবাজিতে নাম আসে মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হল শাখা ছাত্রলীগের তৎকালীন উপদপ্তর সম্পাদক আকতারুল করিমের। এসব কর্মকাণ্ডের জন্য তিনি ‘উদ্যানের রাজা’ হিসেবে পরিচিতি পান। ২০২১ সালের জুলাইয়ে একজনকে পিটিয়ে জখম করার ঘটনায় করা মামলায় গ্রেপ্তার হন তিনি। পরে তাঁকে বিশ্ববিদ্যালয় ও ছাত্রলীগ থেকে বহিষ্কার করা হয়।

ছিনতাই, মারধর, হেনস্তা, চাঁদাবাজিসহ নানা নেতিবাচক ঘটনায় যুক্ত থাকায় গত ১২ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৫ নেতা-কর্মীকে বহিষ্কার করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। তাঁদের মধ্যে পাঁচজনকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকেও বহিষ্কার করা হয়। এ ছাড়া চাঁদাবাজির অভিযোগে একই দিন অমর একুশে হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ইমদাদুল হাসান ওরফে সোহাগকে অব্যাহতি দেয় বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ।

এসব পদক্ষেপের পরও ১৬ ফেব্রুয়ারি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে একুশে বইমেলায় চার ব্যক্তির কাছ থেকে পুলিশ পরিচয় দিয়ে চাঁদাবাজির সময় গ্রেপ্তার হন ছাত্রলীগ নেতা মোহাইমেনুল ইসলাম ও রাজীব হোসেন। পরদিন তাঁদের ছাত্রলীগ থেকে বহিষ্কার করা হয়।

অপরাধের ঘটনায় ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের যুক্ততার বিষয়ে সংগঠনের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাদ্দাম হোসেন প্রথম আলোকে বলছেন, ‘যেসব ঘটনায় তথ্যপ্রমাণ পাওয়া গেছে, সেসব ঘটনায় আমরা ব্যবস্থা নিয়েছি। অপরাধকে অপরাধের দৃষ্টিতেই দেখতে হবে। রাজনৈতিক সংগঠনে সম্পৃক্ত হওয়ার কারণে কোনো অপরাধী পার পেয়ে যাবে, এটি ভাবার কোনো সুযোগ নেই৷ কোনো অপরাধ ঘটলে আমরা সর্বোচ্চ সাংগঠনিক শাস্তি নিশ্চিত করি। ফৌজদারি অপরাধের ক্ষেত্রে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য ছাত্রলীগ শর্তহীন সহযোগিতা করছে এবং করবে।’

অপরাধে প্রশ্রয়

২০১৮ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি সলিমুল্লাহ মুসলিম (এসএম) হলে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের নির্যাতনে চোখ হারাতে বসেছিলেন শিক্ষার্থী এহসান রফিক। তাঁর একটি চোখে গুরুতর জখম হয়। দেশ-বিদেশে দীর্ঘদিন চিকিৎসা নিতে হয়েছে তাঁকে। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে তিনি মালয়েশিয়ার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছেন৷

ওই ঘটনায় এসএম হল শাখা ছাত্রলীগের তৎকালীন সহসম্পাদক ওমর ফারুককে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করেছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এ ছাড়া হল শাখা ছাত্রলীগের তৎকালীন প্রশিক্ষণবিষয়ক উপসম্পাদক মেহেদী হাসান, সহসম্পাদক রুহুল আমিন ব্যাপারী ও ফারদিন আহমেদ, কার্যকরী সদস্য আহসান উল্লাহ ও সামিউল হককে দুই বছর এবং সহসভাপতি আরিফুল ইসলামকে এক বছরের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করা হয়। তবে ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে সাতজনেরই সাজার মেয়াদ কমিয়ে দেয় কর্তৃপক্ষ। ওমর ফারুকের সাজা কমে হয় দুই বছর আর পাঁচজনের দুই বছরের বহিষ্কারাদেশ কমে হয় এক বছর।

অবশ্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর এ কে এম গোলাম রব্বানী প্রথম আলোকে বলছেন, তাঁরা কোনো অপরাধকে প্রশ্রয় দেন না। নির্যাতন বা অপরাধের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে তথ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে কর্তৃপক্ষ বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়। বিভিন্ন সময়ে নানা অভিযোগে অনেককেই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।

গত বছরের ১৪ অক্টোবর রাতে এসএম হল শাখা ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে এহসান রফিককে নির্যাতনে অভিযুক্ত আহসান উল্লাহ ১ নম্বর সহসভাপতি হয়েছেন। এ ছাড়া ফারদিনকে ৩ নম্বর সহসভাপতি, সামিউলকে ৪ নম্বর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও রুহুলকে ৫ নম্বর সাংগঠনিক সম্পাদকের পদ দেওয়া হয়।

গত বছরের মার্চে দুই ছাত্রকে মারধরের ঘটনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজয় একাত্তর হল শাখা ছাত্রলীগের ছয় কর্মীকে হল থেকে স্থায়ী বহিষ্কার করে কর্তৃপক্ষ। কিন্তু ২৬ সেপ্টেম্বর ঘোষিত হল শাখার পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে তাঁদের সবাইকে পদ দেওয়া হয়েছে।

শুধু এসব ঘটনাই নয়, সাম্প্রতিক ছিনতাই-চাঁদাবাজির ঘটনা গণমাধ্যমে আলোচিত হওয়ার আগপর্যন্ত ছাত্রলীগ সাধারণত ব্যবস্থা নেয় না। প্রশ্রয় পেয়ে নেতা-কর্মীরা ছিনতাই-চাঁদাবাজিতে জড়াচ্ছেন—ক্যাম্পাসে এমন আলোচনা রয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক নজরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রসংগঠনের ধারাবাহিক অপরাধপ্রবণতা খুবই দুঃখজনক ও নিন্দনীয়। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ—সবারই এ বিষয়ে সজাগ ও সাবধান হওয়া উচিত। এই অপরাধপ্রবণতা যেন আর বাড়তে না পারে, সেটা দেখা উচিত। এ ধরনের প্রবণতাকে কোনো অবস্থাতেই প্রশ্রয় দেওয়া যায় না। এসবকে প্রশ্রয় দিলে শিক্ষাব্যবস্থার পাশাপাশি গোটা সমাজব্যবস্থাই ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়।