রাজনৈতিক দলগুলো যদি চায় সংস্কার ভুলে যাও, নির্বাচন দাও, তাহলে সেটা হবে

সম্প্রতি আজারবাইজানের রাজধানী বাকুতে অনুষ্ঠিত জাতিসংঘের জলবায়ু সম্মেলনের (কপ২৯) ফাঁকে আল–জাজিরাকে এই সাক্ষাৎকার দেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসছবি: আল–জাজিরার ভিডিও থেকে নেওয়া

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, সরকার, নির্বাচন ও সংস্কারের কাজ একসঙ্গে চলছে। তবে জনগণ ও রাজনৈতিক দলগুলো যদি চায় সংস্কার ভুলে যাও, নির্বাচন দাও, তাহলে তাই করবো।

সম্প্রতি আজারবাইজানের রাজধানী বাকুতে অনুষ্ঠিত জাতিসংঘের জলবায়ু সম্মেলনের (কপ২৯) ফাঁকে আল–জাজিরাকে সাক্ষাৎকার দেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। গতকাল রোববার এই ভিডিও সাক্ষাৎকার সম্প্রচার করেছে আল–জাজিরা। সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন।

ওই সাক্ষাৎকারে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বাংলাদেশ যেসব সংকট মোকাবিলা করছে, সেগুলো নিয়ে কথা বলার পাশাপাশি বাংলাদেশে চলমান সংস্কারপ্রক্রিয়া, আগামী নির্বাচন, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে কূটনৈতিক সম্পর্ক এবং যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে কথা বলেছেন তিনি।

বাংলাদেশে আগামী নির্বাচনের সঠিক সময় কখন হবে, সে বিষয়ে ড. ইউনূসের কোনো ভাবনা আছে কি না, সে প্রশ্নের জবাবে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘না। আমার মাথায় এমন কিছু নেই।’তিনি আরও বলেন, ‘যদি রাজনৈতিক দলগুলো চায় এটা (সংস্কার) ভুলে যাও, নির্বাচন দাও। তাহলে সেটা করা হবে।’

এক প্রশ্নের জবাবে ড. ইউনূস বলেন, সাধারণত নিয়মিত সরকারের মেয়াদ পাঁচ বছর। মানুষ সরকারের মেয়াদ কম চায়। সংবিধানে নতুন করে চার বছরের প্রস্তাব করা হচ্ছে। সুতরাং এটা চার বছর বা তারও কম হতে পারে। এটা পুরোটা নির্ভর করছে মানুষ কী চায়, রাজনৈতিক দলগুলো কী চায় তার ওপরে।

তাহলে অন্তর্বর্তী সরকারপ্রধান হিসেবে তিনি চার বছর থাকছেন কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘আমি তা বলিনি যে চার বছর। আমি বলেছি, এটা সর্বোচ্চ মেয়াদ হতে পারে। তবে আমাদের উদ্দেশ্য তা নয়। আমাদের উদ্দেশ্য যত দ্রুত সম্ভব শেষ করা।’

আরও পড়ুন
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস
ছবি: আল–জাজিরার ভিডিও থেকে নেওয়া

চলমান সংস্কার কার্যক্রম নিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, পুরো সরকারব্যবস্থা সংস্কার হবে। মানুষ নতুন কিছু চায়। সেখানে সব ক্ষেত্রে সংস্কার হবে। এমনকি সংবিধানও সংস্কার হচ্ছে। এ লক্ষ্যে বিভিন্ন সংস্কার কমিশন করার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, দুটো প্রক্রিয়া একসঙ্গে চলছে—নির্বাচনের প্রস্তুতি এবং সব সংস্কার শেষ করার প্রস্তুতি।
সারা দেশ নতুন কিছু চেয়েছে জানিয়ে ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, নতুন বাংলাদেশ শুধু নির্বাচনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়।

এখানে কোনো কিছু চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশের মানুষের কাছে জানতে চাইছি, তোমরা কি এখনই নির্বাচনে যেতে চাও নাকি এসব সংস্কার শেষ করা হোক তা চাও।’ সবকিছু জনগণের সঙ্গে, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে পরামর্শ করে তাদের মতামতের ভিত্তিতেই হচ্ছে বলে জানান তিনি।
ছাত্র–জনতার আন্দোলনের মুখে ভারতে পালিয়ে যাওয়া শেখ হাসিনার প্রসঙ্গও উঠে এসেছে সাক্ষাৎকারে। প্রশ্নের জবাবে ড. ইউনূস বলেছেন, তিনি বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছেন। সেখান থেকে বাংলাদেশে বিক্ষোভের ডাক দিচ্ছেন। এগুলো বাংলাদেশের জন্য উপকারী নয়। তাই ভারতের কাছে তাঁরা এসব বিষয়ে বলছেন। তাঁকে আশ্রয় দিচ্ছে, ঠিক আছে। কিন্তু এমনটা হতে থাকলে তাঁদের কাছে আবার অভিযোগ করা হবে।

আরও পড়ুন

১০ নভেম্বর শহীদ নূর হোসেন দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগের দেওয়া এক বিবৃতিতে শেখ হাসিনাকে ‘বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়। সাক্ষাৎকারে বিষয়টিতে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে ড. ইউনূস বলেন, ‘তিনি (শেখ হাসিনা) নিজেকে অনেক কিছু বলতে পারেন। কিন্তু বাস্তবতা তা নয়। এমনকি ভারতও তাঁকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বলেছে। সুতরাং আশ্রয়দাতাও তাঁকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ছাড়া কিছু বলছে না।’

শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেওয়া হবে কি না, সে প্রশ্নের জবাবে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আইনি প্রক্রিয়া চলছে। দোষী সাব্যস্ত হলে তাঁর প্রত্যাবর্তন চাওয়া হবে।

ভারতের সঙ্গে মিলে অভিন্ন নদীগুলোর পানি ব্যবস্থাপনা করতে চান বলে উল্লেখ করেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, গত ১৬ বছরে দুর্নীতির নিমজ্জিত ছিল বাংলাদেশ। সেখান থেকে দেশকে বের করে চেষ্টা করছে তাঁর সরকার।

আরও পড়ুন

সংশোধনী: আল জাজিরাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারের ভিডিও অনুসরণ করে দেওয়া প্রতিবেদনে আগে যে শিরোনামটি দেওয়া হয়, তাতে বিভ্রান্তি থাকায় শিরোনামটি পরিবর্তন করা হলো।