স্বাধীন বিচারকার্যের জন্য বিচারককে মন-মননে স্বাধীন হতে হবে: বিচারপতি বোরহান উদ্দিন

আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি বোরহান উদ্দিন
ছবি: সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইট থেকে নেওয়া

আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি বোরহান উদ্দিন বলেছেন, স্বাধীনভাবে বিচারকার্য পালনের জন্য বিচারককে মন ও মননে স্বাধীন হতে হবে। এই কারণে বিচারককে নিজের স্বাতন্ত্র্য বজায় রাখতে হবে।

আপিল বিভাগের ১ নম্বর বিচারকক্ষে (প্রধান বিচারপতির এজলাস) আজ মঙ্গলবার দুপুরে এক বিদায়ী সংবর্ধনায় এসব কথা বলেন বিচারপতি বোরহান উদ্দিন।

বিদায়ী সংবর্ধনায় আইনজীবী ও আসা ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে আদালতকক্ষ ছিল পূর্ণ। প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ও আপিল বিভাগের অপর চার বিচারপতি এ সময় বেঞ্চে ছিলেন।

১৯৫৭ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রামে জন্মগ্রহণ করা আপিল বিভাগের বিচারপতি বোরহান উদ্দিনের ৬৭ বছর পূর্ণ হচ্ছে আজ। এ হিসেবে আজ তাঁর শেষ কর্মদিবস।

প্রথা অনুসারে আজ এই বিচারপতিকে বিদায়ী সংবর্ধনা জানানো হয়। সংবর্ধনায় প্রথমে অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন ও পরে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি মো. মোমতাজ উদ্দিন ফকির বিদায়ী বিচারপতি বোরহান উদ্দিনের কর্মময় জীবন নিয়ে বক্তব্য দেন।

বিচারপতি বোরহান উদ্দিন বলেন, বাংলাদেশের সংবিধান দেশের সর্বোচ্চ আইন। নির্বাহী বিভাগ, আইনসভা ও বিচার বিভাগ একে অপরের পরিপূরক। তা সত্ত্বেও বিচার বিভাগের দায়িত্ব সংবিধানের অভিভাবক হিসেবে অনন্য। কারণ, আইনসভা প্রণীত কোনো আইন সংবিধানের সঙ্গে অসামঞ্জস্য কি না, তা দেখার অধিকার বিচার বিভাগের। পাশাপাশি নির্বাহী বিভাগের কোনো কার্যকলাপ সংবিধানের তৃতীয় ভাগে বর্ণিত মৌলিক অধিকারের সঙ্গে সাংঘর্ষিক কি না, তা দেখার ক্ষমতা বিচার বিভাগের। এ কারণেই বিচার বিভাগের স্বাধীনতা অপরিহার্য।

সুশাসন ও আইনের শাসন সমার্থক বলে মন্তব্য করেন বিচারপতি বোরহান উদ্দিন। তিনি বলেন, সুশাসন তথা আইনের শাসন নিশ্চিত করে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা। একই সঙ্গে এ কথাও অত্যন্ত ঠিক যে বিচারিক স্বাধীনতা অনেকাংশে নিশ্চিত করে বিচারকের অন্তরের স্বাধীনতা। স্বাধীনভাবে বিচারকার্য পালনের জন্য বিচারককে মন ও মননে স্বাধীন হতে হবে। এই কারণে বিচারককে নিজের স্বাতন্ত্র্য বজায় রাখতে হবে।

সাংবিধানিক আদালতকে দেশের সর্বোচ্চ আদালত হিসেবে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কণ্ঠস্বর হতে হবে বলে মন্তব্য করেন বিচারপতি বোরহান উদ্দিন। তিনি বলেন, দেশের সম্পদ লুণ্ঠনকারীদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা নিলে খেটে খাওয়া মানুষ বাঁচার পথ করে নিতে পারে।

বিচারপতি বোরহান উদ্দিন ২০২২ সালের ৯ জানুয়ারি আপিল বিভাগের বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান। এর আগে ২০০৮ সালের ১৬ নভেম্বর হাইকোর্ট বিভাগের অতিরিক্ত বিচারক হিসেবে নিয়োগ পান তিনি। দুই বছর পর ২০১০ সালের ১১ নভেম্বর তিনি হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি হিসেবে স্থায়ী হন।