দেশে নীতি প্রণয়ন হয় জনস্বার্থ উপেক্ষা করে

বায়ুদূষণ পরিস্থিতি নিয়ে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে ক্যাপস এবং বেসরকারি উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান বারসিক
ছবি: প্রথম আলো

পৃথিবীর সব দেশের নীতি, আইন ও বিধিমালা প্রণয়ন করা হয় জনস্বার্থে। কিন্তু বাংলাদেশের নীতি প্রণয়ন হয় দুর্নীতির মাধ্যমে জনস্বার্থ উপেক্ষা করে; যা শুধু নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর স্বার্থ রক্ষা করে। এমন অভিযোগ করেছেন বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) সাধারণ সম্পাদক শরীফ জামিল।

বায়ুদূষণ পরিস্থিতি পর্যালোচনা, বিধিমালা ও নীতির পর্যবেক্ষণ এবং সুপারিশ নিয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বাপা সাধারণ সম্পাদক এসব কথা বলেন।

শনিবার সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবে যৌথভাবে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস) ও বেসরকারি উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান বারসিক।

সংবাদ সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে শরীফ জামিল বলেন, সম্প্রতি এমন নীতি তৈরির একটি উদাহরণ হচ্ছে, অগ্রহণযোগ্য বায়ুদূষণ বিধিমালা প্রণয়ন। সমন্বিত নির্মল বায়ু আইন প্রণয়ন না করে এটি করা হয়েছে। ফলে ঘনবসতির বাংলাদেশে পরিবেশদূষণ দিন দিন মানবিক বিপর্যয় তৈরি করছে। পরিবেশ রক্ষার সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন এখন অপরিহার্য।

হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের (এইচআরপিবি) প্রেসিডেন্ট মনজিল মোরসেদ বলেন, ‘আইন জনগণের হবে কি না, তা নির্ভর করে আইন প্রণয়নে কারা জড়িত তার ওপর। আমাদের সংসদে নেতৃত্ব দেন ব্যবসায়ীরা। নীতি নির্ধারিত হয় তাঁদের স্বার্থে। পরিবেশদূষণের জন্য প্রধানত দায়ী ওই ব্যবসায়ীরাই। সুতরাং আইন প্রণয়ন তাঁদের স্বার্থেই হবে, এটা স্বাভাবিক। এ ক্ষেত্রে জনগণকে জেগে উঠে আওয়াজ তুলতে হবে, পরিবেশ নিয়ে ছিনিমিনি খেলা চলবে না।’

সংবাদ সম্মেলনে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ক্যাপসের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার। তিনি দেশে বিদ্যমান বায়ুদূষণ–সংক্রান্ত আইন, বিধি ও নীতিমালার দ্বৈততার দিকগুলো তুলে ধরেন এবং বায়ুদূষণ রোধে দ্বৈততা পরিহারে সুপারিশ করেন।

বায়ুদূষণ–সংক্রান্ত বিভিন্ন আইন ও নীতিমালায় দ্বৈত নীতি বিদ্যমান বলে মন্তব্য করেন ইনস্টিটিউট ফর প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (আইপিডি) নির্বাহী পরিচালক আদিল মোহাম্মদ খান। তিনি বলেন, এই নীতিমালা দূষণের মানমাত্রা বাড়ানোর সুযোগ করে দেয়। এতে সামগ্রিক জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশকে মারাত্মক বিপর্যয়ের সম্ভাবনার দিকে নেওয়া হচ্ছে।

বারসিকের সমন্বয়কারী জাহাঙ্গীর আলম বলেন, বাংলাদেশে ২০ ভাগ মানুষের মৃত্যু হয় বায়ুদূষণের কারণে। অধিকাংশ শিক্ষিত মানুষ বায়ুদূষণের জন্য দায়ী; যাদের লোভনীয় কাজের কারণে দেশের বায়ুদূষণ সহনীয় মাত্রার চেয়ে চার ভাগ বেড়ে গেছে।

অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে ইনস্টিটিউট অব আর্কিটেকচারের সহসভাপতি ও স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের সাবেক উপাচার্য মোহাম্মদ আলী নকী বলেন, বায়ুদূষণ কমাতে আমরা আন্তর্জাতিকভাবে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। কিন্তু বিভিন্ন নীতিমালায় এর বিপরীতমুখী আইন পাস হচ্ছে; যা খুবই উদ্বেগজনক। এ বিষয়ে জনগণের সচেতনতা অত্যন্ত জরুরি। এ ক্ষেত্রে পুরো বিষয়টি সহজ–সরল ভাষায় ব্যাখ্যা করাও প্রয়োজন।
অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন ক্যাপসের গবেষক নাছির আহম্মেদ।