লোডশেডিংয়ে ক্ষোভ, প্রতিমন্ত্রী বললেন ‘একটু ধৈর্য’ ধরতে

জাতীয় পার্টি বলেছে, সরকারের ধারাবাহিক সাফল্যের একটি জায়গা ছিল বিদ্যুৎ, সেটি একেবারেই নষ্ট হয়ে গেল।

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ
ফাইল ছবি

দেশজুড়ে চলমান লোডশেডিং পরিস্থিতি নিয়ে জাতীয় সংসদে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্যরা। গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে সংসদে তাঁরা বলেছেন, বিদ্যুৎ খাতে সরকারের সফলতা ছিল। কিন্তু হঠাৎ পরিস্থিতি বদলে গেছে। লোডশেডিং যেভাবে বাড়ছে, তাতে জনরোষের সৃষ্টি হতে পারে। আগেভাগে কয়লা-গ্যাস আমদানি করলে এ অবস্থা হতো না।

২০২২-২৩ অর্থবছরের সম্পূরক বাজেটে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের মঞ্জুরি দাবির ওপর ছাঁটাই প্রস্তাবের আলোচনায় অংশ নিয়ে জাতীয় পার্টির (জাপা) সংসদ সদস্যরা এসব কথা বলেন।

বিরোধীদের সমালোচনার জবাবে এ সংকটকে আকস্মিক দাবি করে সবাইকে ‘একটু ধৈর্য’ ধরার অনুরোধ করেছেন বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। তিনি বলেছেন, আগামী ১৫-১৬ দিনের মধ্যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে।

সম্পূরক বাজেটে চলতি অর্থবছরে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের জন্য ৩২ কোটি ৪৬ লাখ ৪ হাজার টাকা মঞ্জুরি দাবি করেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। তাঁর এ দাবিতে ছাঁটাই প্রস্তাব দেন ১০ জন সংসদ সদস্য। তবে আলোচনায় অংশ নেন ছয়জন। বাকিরা অনুপস্থিত ছিলেন।

ছাঁটাই প্রস্তাবের আলোচনায় জাতীয় পার্টির পাঁচজন সংসদ সদস্য লোডশেডিং পরিস্থিতি নিয়ে বক্তব্য দেন। এ ছাড়া একজন স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য রেজাউল করিমও কথা বলেন।

লোডশেডিং
ফাইল ছবি

জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, মানুষ বিদ্যুৎ পাচ্ছে না। আগেই যদি কয়লা বা ডিজেল আমদানি করা যেত, আজকে এই সমস্যা হতো না। দ্রুত কয়লা আমদানি করে বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো চালু করার দাবি জানান তিনি।

কোথায় কখন বিদ্যুৎ থাকবে না, তা আগেভাগে জনগণকে জানিয়ে দেওয়ার দাবি জানান দলটির আরেক সংসদ সদস্য রুস্তম আলী ফরাজী।

সংসদ সদস্য ফখরুল ইমাম বলেন, ‘আমাদের ১৪ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ দরকার কিন্তু করে ফেলেছি ২৬ হাজার মেগাওয়াট। আর আজকে উৎপাদিত হচ্ছে ৭ হাজার মেগাওয়াট।’

বর্তমান পরিস্থিতিতে দেশের জ্বালানিনিরাপত্তা ও বিদ্যুৎ বিভাগ হুমকির মধ্যে পড়েছে বলে মন্তব্য করেন জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য রওশন আরা মান্নান।

জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, বিল পরিশোধ (কয়লার) করতে না পারার কারণে পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ করে দিতে হয়েছে। এই বিল কেন বাকি থাকছে?

এই সংসদ সদস্য বলেন, তিনি গণমাধ্যমে দেখেছেন, ৯০ হাজার কোটি টাকা ক্যাপাসিটি চার্জ (বিদ্যুৎকেন্দ্রের ভাড়া) এসেছে। তিনি প্রশ্ন রাখেন, কেন এত ক্যাপাসিটি চার্জ হয়? কেন চুক্তিটা এভাবে করা হলো যে ক্যাপাসিটি চার্জ দিতেই হবে? তিনি আরও বলেন, সরকারের ধারাবাহিক সাফল্যের একটি জায়গা ছিল বিদ্যুৎ। সেটি একেবারেই নষ্ট হয়ে গেল। তিনি মনে করেন, এ অবস্থা থেকে জনরোষের সৃষ্টি হতে পারে।

ধৈর্য ধরার আহ্বান প্রতিমন্ত্রীর

ছাঁটাই প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বর্তমান সংকটের প্রেক্ষাপট তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘আমরা সময়মতো কয়লার জন্য এলসি (ঋণপত্র) করতে পারিনি। বৈশ্বিক ব্যবস্থা ও বর্তমানে অর্থনৈতিক ব্যবস্থা সবকিছুর ওপর চিন্তা করে আমরা সময়মতো কয়লাটা আনতে পারি নাই। যার কারণে পায়রার এ অবস্থা হয়েছে। আগামী ১৫ দিনের মধ্যে প্ল্যান্ট (বিদ্যুৎকেন্দ্র) চালু করে দেব।’

সবাইকে একটু ধৈর্য ধরার আহ্বান জানিয়ে নসরুল হামিদ বলেন, বৈশ্বিক জ্বালানির দাম বেড়ে যাওয়ায় অর্থের জোগানের সমস্যা হয়ে গেছে। এটা বেশি দিনের জন্য নয়। ১৫ থেকে ১৬ দিনের মধ্যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে।

সংসদ সদস্যদের উদ্দেশে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আপনারা সকলেই একটু ধৈর্য ধরেন। বিশ্বের দিকে ও নিজের দেশের দিকে তাকিয়ে যদি আমরা ধৈর্য ধরি, তাহলে যে সমস্যাটা দেখতে পাচ্ছি, সেটা পার হতে পারব।’

বিরোধীদের বক্তব্যের জবাবে নসরুল হামিদ বলেন, লোডশেডিংয়ের বিষয়টি বারবার প্রচার করা হয়েছে। দুঃখ প্রকাশ করা হয়েছে।