নতুন বছরে নতুন বই হাতে পেয়ে শিক্ষার্থীদের উচ্ছ্বাস

নতুন বই হাতে পেয়ে বন্ধুরা মিলে আনন্দে মেতেছে
ছবি: প্রথম আলো

তাসনিমা জামান চট্টগ্রাম নগরের বাংলাদেশ মহিলা সমিতি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের (বাওয়া) অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী। বছরের প্রথম দিন আজ রোববার দুটি বই পেয়েছে সে। সব বই না পেলেও তার মনে ক্ষোভ নেই; বরং নতুন বই পেয়ে দারুণ উচ্ছ্বসিত সে।

বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে বেলা ১১টার দিকে তাসনিমা প্রথম আলোকে জানায়, নতুন বইয়ের ঘ্রাণ, নতুন ছবি, নতুন লেখা। বেশ ভালো লাগছে।

শুধু তাসনিমা নয়, নতুন বই পেয়ে তার মতো অন্য শিক্ষার্থীরাও উচ্ছ্বসিত, আনন্দিত। সব বই না পেলেও আনন্দের কমতি নেই কারও। ফাতেমা জামান একই বিদ্যালয়ে চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ে। সে–ও বই পেয়েছে দুটি; ইংরেজি ও ধর্ম। ফাতেমা বলল, নতুন বইতে অনেকগুলো ছবি আছে। দেখতে অনেক সুন্দর। অনেক ভালো লাগছে।

প্রথম আলোর দুজন প্রতিবেদক ও দুজন আলোকচিত্রী আজ সকাল থেকে নগরের সাতটি বিদ্যালয়ে ঘুরেছেন। এগুলো হলো হামজারবাগ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, রহমানিয়া উচ্চবিদ্যালয়, ডা. খাস্তগীর সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়, উত্তর কাট্টলি জয়তারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মিউনিসিপ্যাল মডেল উচ্চবিদ্যালয়, হামিদিয়া আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পূর্ব ষোলোশহর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।

এসব প্রতিষ্ঠান ঘুরে দেখা গেছে, সব শ্রেণির বই সব শিক্ষার্থীর হাতে ওঠেনি। কোনো শ্রেণিতে দেওয়া হয়েছে দুটি, কোনোটিতে তিনটি, আবার কোনোটিতে ৮টি বই দেওয়া হয়েছে শিক্ষার্থীদের। তবে সব শিক্ষার্থী বই পেয়েছে।

বাংলাদেশ মহিলা সমিতি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক রাজিয়া বেগম প্রথম আলোকে বলেন, প্রাক্‌–প্রাথমিক থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত তাঁদের অন্তত ৭ হাজার শিক্ষার্থী। বাংলা ও ইংরেজি দুই মাধ্যমে পড়াশোনা হয়। ইংরেজি মাধ্যমের বেশ কিছু বই এখনো পাননি। পাশাপাশি বাংলা মাধ্যমের সব বইও আসেনি। তবে যা এসেছে, তা সব শিক্ষার্থীকে ভাগ করে দেওয়া হয়েছে। কেউ খালি হাতে যায়নি।

প্রতিবছর ডিসেম্বরের মধ্যেই অধিকাংশ বই চলে আসে। কিন্তু বছরের প্রথম দিনও অর্ধেক বই এসে পৌঁছায়নি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এ বছর নতুন শিক্ষাবর্ষে প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত চট্টগ্রাম জেলায় ৪৭ লাখ ৫২ হাজার পাঠ্যবইয়ের চাহিদা রয়েছে। প্রতিবছর ডিসেম্বরের মধ্যেই অধিকাংশ বই চলে আসে। কিন্তু বছরের প্রথম দিনও অর্ধেক বই এসে পৌঁছায়নি। আজ পর্যন্ত ২৪ লাখ বই এসেছে। আর মাধ্যমিকেও আসেনি চাহিদার অন্তত ২০ শতাংশ বই। এ কারণে বই উৎসবে শিক্ষার্থীরা সব পাঠ্যপুস্তক হাতে পায়নি।

নতুন বইয়ের পাতা উল্টে দেখছে দুই বন্ধু
ছবি: প্রথম আলো
আরও পড়ুন

উত্তর কাট্টলি জয়তারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জেসমিন আক্তার চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত সব বই এখনো পাননি। আজ তৃতীয় শ্রেণির ১০০ শিক্ষার্থীকে দুটি করে বই দেওয়া হয়েছে। পাঁচ জানুয়ারি পর্যন্ত বই বিতরণ কর্মসূচি চলবে। কাল দেওয়া হবে চতুর্থ শ্রেণির বই।

জানা গেছে, ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য নতুন শিক্ষাবর্ষে চট্টগ্রাম জেলায় প্রায় ১ কোটি ৫৮ লাখ পাঠ্যবইয়ের চাহিদা রয়েছে। এখন পর্যন্ত প্রায় ১ কোটি বই পেয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি)।

ডলারের মূল্যবৃদ্ধির কারণে কাগজের সংকট ও লোডশেডিংয়ের কারণে এ বছর পাঠ্যবই মুদ্রণে প্রথম থেকেই ধীরগতি ছিল। এ ছাড়া বই ছাপানোর কার্যাদেশ দিতে দেরি করা, ভালো মানের মণ্ডের সংকট, প্রাক্কলিত দরের চেয়ে কম দামে কাজ নেওয়াসহ কয়েকটি কারণে এবার সব বই ছাপানো যায়নি।

ডলারের মূল্যবৃদ্ধির কারণে কাগজের সংকট ও লোডশেডিংয়ের কারণে এ বছর পাঠ্যবই মুদ্রণে প্রথম থেকেই ধীরগতি ছিল। এ ছাড়া বই ছাপানোর কার্যাদেশ দিতে দেরি করা, ভালো মানের মণ্ডের সংকট, প্রাক্কলিত দরের চেয়ে কম দামে কাজ নেওয়াসহ কয়েকটি কারণে এবার সব বই ছাপানো যায়নি।

বই পাওয়ার আনন্দে আত্মহারা শিশু–কিশোরেরা
ছবি: প্রথম আলো

এনসিটিবির কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পাঠ্যবই ছাপার কাগজ উৎপাদনের মূল উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করা হয় ‘ভার্জিন পাল্প’। ভার্জিন পাল্পের প্রায় পুরোটাই বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। আন্তর্জাতিক বাজারে এই উপকরণের দাম বেড়ে গেছে। বেড়েছে জাহাজভাড়াও। আবার ডলার–সংকটে আমদানিও কমে গেছে। এসব কারণে এবার পাঠ্যবই ছাপাতে হিমশিম খাচ্ছে ছাপাখানাগুলো।
চট্টগ্রাম জেলায় সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে ৪ হাজার ২৬৫টি। এসব প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থী প্রায় ১০ লাখ ১৮ হাজার। অন্যদিকে জেলায় মাধ্যমিক ও মাদ্রাসা মিলিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রায় ১ হাজার ২০০টি, শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১২ লাখ ৪৩ হাজারের মতো।

নগরের বন্দর থানাধীন ইসমাইল সুকানি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক উম্মে তুন রাশেদা প্রথম আলোকে বলেন, প্রাক্‌-প্রাথমিক থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত দুই শ শিক্ষার্থী আছে বিদ্যালয়ে। তৃতীয় থেকে পঞ্চম শ্রেণি পড়ুয়া প্রায় এক শ শিক্ষার্থীকে বই দেওয়া হয়েছে। পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা পেয়েছে তিনটি করে বই। আর তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থীরা দুটি করে। প্রাক্‌-প্রাথমিক থেকে দ্বিতীয় শ্রেণি পর্যন্ত কোনো বই এখনো আসেনি। এ কারণে এই শিক্ষার্থীদের কোনো বই-ই দেওয়া যায়নি।