প্রহসনের নির্বাচনে অনিয়মে আরও যাঁরা জড়িত ছিলেন, তাঁদের আমরা খুঁজছি: রাষ্ট্রপক্ষ

সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদাকে আদালত থেকে হাজতখানায় নিয়ে যাচ্ছে পুলিশ। আজ শুক্রবার বিকেলে ঢাকার সিএমএম আদালত প্রাঙ্গণেছবি: আসাদুজ্জামান

চার দিনের জিজ্ঞাসাবাদে সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদা ২০১৮ সালের নির্বাচনে ‘দিনের ভোট রাতে করার’ অভিযোগসহ বিভিন্ন বিষয়ে অনেক তথ্য দিয়েছেন বলে জানিয়েছে রাষ্ট্রপক্ষ। তাঁকে আবারও রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার পক্ষে যুক্তি তুলে ধরে রাষ্ট্রপক্ষ বলেছে, ওই প্রহসনের নির্বাচনে অনিয়মের সঙ্গে আর যাঁরা যাঁরা জড়িত ছিলেন, তাঁদের প্রত্যেককে খুঁজছে তারা। এ–সম্পর্কিত তথ্য উদ্‌ঘাটনের জন্য নূরুল হুদাকে আবারও জিজ্ঞাসাবাদ করা প্রয়োজন।

প্রহসনের নির্বাচন করার অভিযোগে এক বিএনপি নেতার করা মামলায় চার দিনের রিমান্ড শেষে আজ শুক্রবার দুপুরে সাবেক সিইসি নূরুল হুদাকে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে হাজির করা হয়। নতুন করে তাঁর আরও ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) শামসুজ্জোহা সরকার। তাঁর সঙ্গে আবেদনের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরেন ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের প্রধান পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ওমর ফারুক ফারুকী। তাঁদের বক্তব্যে ২০১৮ সালের নির্বাচন ঘিরে সহিংসতা ও অনিয়মের কথা উঠে আসে। এ ঘটনায় কারা কারা জড়িত ছিলেন, তাঁদের খুঁজে বের করার জন্য আরও তথ্য প্রয়োজন বলে উল্লেখ করেন তাঁরা।

এর আগে বেলা আড়াইটার দিকে কালো গ্লাসের একটি মাইক্রোবাসে করে নূরুল হুদাকে সিএমএম আদালতে আনা হয়। প্রায় এক ঘণ্টা হাজতখানায় রাখার পর নূরুল হুদাকে হাজতখানা থেকে বের করে আনে পুলিশ। তখন দেখা যায়, নূরুল হুদার মাথায় পুলিশের হেলমেট। তাঁর দুই হাত পেছনে, দুই হাতেই হাতকড়া। মাথা নিচু করে নূরুল হুদাকে হাজতখানার ফটক থেকে আদালতের লিফটের কাছে আনা হয়। পরে তাঁকে লিফটে করে সিএমএম আদালতের নবম তলায় এজলাসকক্ষে নেওয়া হয়। তখন সময় বেলা ৩টা ৪০ মিনিট।

কাঠগড়ায় তোলার পর নূরুল হুদা মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে ছিলেন। তখন পুলিশের একজন কনস্টেবল তাঁর দুই হাত পেছনে নিয়ে পরিয়ে দেওয়া হাতকড়া খুলে দেন। এরপর মাথার হেলমেটটিও খুলে দেন। তখন নূরুল হুদা কাঠগড়ার লোহার রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে থাকেন।

এ সময় নূরুল হুদার আইনজীবী ওবায়দুল ইসলাম তাঁর কাছে এগিয়ে যান। তিনি কথা বলতে থাকেন। এর ১০ মিনিট পর বেলা ৩টা ৫০ মিনিটের দিকে ম্যাজিস্ট্রেট আওলাদ হোসাইন মুহাম্মদ জুনাইদ এজলাসে আসেন।

এ সময় সাক্ষীর কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে থাকা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা শেরেবাংলা নগর থানার এসআই শামসুজ্জোহা সরকার নূরুল হুদাকে রিমান্ডে নেওয়ার পক্ষে পাঁচটি কারণ একে একে তুলে ধরতে শুরু করেন।

রিমান্ডে নেওয়ার পক্ষে যেসব যুক্তি দিল পুলিশ

তদন্ত কর্মকর্তা এসআই শামসুজ্জোহা আদালতকে বলেন, ‘আদালতের নির্দেশ পাওয়ার পর নূরুল হুদাকে চার দিন রিমান্ডে নিয়ে আমি জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। ২০১৮ সালের দিনের ভোট রাতে করার নির্বাচনের অভিযোগসহ মামলাসংক্রান্ত বিষয়ে নূরুল হুদা অনেক তথ্য দিয়েছেন। নূরুল হুদার দেওয়া এসব তথ্য যাচাই-বাছাই করার জন্য তাঁকে আবারও ১০ দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা প্রয়োজন।’

শামসুজ্জোহা বলেন, ‘নূরুল হুদা যেসব তথ্য দিয়েছেন, সেসব তথ্য নথিসংক্রান্ত বিষয়। মামলার তদন্তের স্বার্থে এসব নতি উদ্ধার করা একান্ত প্রয়োজন। নথি উদ্ধার করার জন্য তাঁকে আবারও রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা দরকার।’

এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ‘নূরুল হুদা প্রধান নির্বাচন কমিশনার থাকাকালে ২০১৮ সালে একটি পাতানো নির্বাচন হয়। এটি ছিল দাপ্তরিক সংঘবদ্ধ অপরাধ। নূরুল হুদার নির্দেশে অন্যান্য অফিসের সঙ্গে যোগাযোগ করে কীভাবে তখন একটি পাতানো জাতীয় সংসদ নির্বাচন করা হয়েছে, সেই রহস্য উদ্‌ঘাটনের জন্য তাঁকে রিমান্ডে নেওয়া দরকার।’

পুলিশ কর্মকর্তা শামসুজ্জোহা বলেন, ‘মাননীয় আদালত, ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বাজেট বাস্তবায়ন–সংক্রান্ত তথ্য উদ্‌ঘাটন করা জরুরি। এ জন্যই তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা প্রয়োজন।’

সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদাকে আদালত থেকে হাজতখানায় নিয়ে যাচ্ছে পুলিশ। আজ শুক্রবার বিকেলে ঢাকার সিএমএম আদালত প্রাঙ্গণে
ছবি: আসাদুজ্জামান

যেসব যুক্তি দিলেন পিপি

তদন্ত কর্মকর্তা বক্তব্য শেষ করার পর নূরুল হুদাকে আবার ১০ দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার পক্ষে যুক্তি তুলে ধরেন পিপি ওমর ফারুক ফারুকী। তিনি বলেন, ‘আমরা নূরুল হুদাকে চার দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসা করেছি। রিমান্ডে তিনি অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য আমাদের দিয়েছেন। কিন্তু আইন অনুযায়ী তদন্তের স্বার্থেই এসব তথ্য প্রকাশ করা হচ্ছে না। তদন্ত কর্মকর্তা যখন আদালতে প্রতিবেদন দেবেন, তখন এই বিষয়ে সবকিছুই জানা যাবে।’

ওমর ফারুক ফারুকী বলেন, ‘মাননীয় আদালত, আপনি জানেন, একটি জাতীয় সংসদ নির্বাচন বিরাট কর্মযজ্ঞ। এই নির্বাচনপ্রক্রিয়ার সঙ্গে যেমন নির্বাচন কমিশনাররা থাকেন, নির্বাচন কমিশন সচিব থাকেন, তেমনি সারা দেশে ৬৪ জন জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপারসহ ১৬–১৭ লাখ কর্মকর্তা–কর্মচারী জড়িত থাকেন। ২০১৮ সালের দিনের ভোট রাতে করার এ প্রক্রিয়ার সঙ্গে বহু রিটার্নিং কর্মকর্তা, প্রিসাইডিং কর্মকর্তা জড়িত ছিলেন।’

পিপি বলেন, ‘মাননীয় আদালত, নূরুল হুদা ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় বসানোর জন্য দিনের ভোট রাতে করেছেন। এই রাতের ভোট আয়োজনের জন্য তাঁর নির্দেশে অনেক প্রিসাইডিং কর্মকর্তা দিনের ভোট রাতে করেছিলেন। এর সঙ্গে জড়িত আছেন ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার সাবেক মন্ত্রী, এমপি এবং তাঁর দলের অনেক নেতা–কর্মী। এই প্রহসনের নির্বাচনের অনিয়মের সঙ্গে যাঁরা যারা জড়িত ছিলেন, তাঁদের প্রত্যেককে আমরা খুঁজছি। এত বড় নির্বাচনী জালিয়াতির সঙ্গে যাঁরা জড়িত, তাঁদের ব্যাপারে তথ্য সংগ্রহের জন্য নূরুল হুদাকে রিমান্ডে নিয়ে আরও জিজ্ঞাসাবাদ করা দরকার।’

পিপি বলেন, ‘নির্বাচনের শিডিউল (তফসিল) ঘোষণার পর সশস্ত্র বাহিনী, পুলিশ, র‍্যাব, বিজিবিসহ কয়েক লাখ কর্মকর্তা নির্বাচন কমিশনারের তত্ত্বাবধানে থাকেন। প্রধান নির্বাচন কমিশনারের পদটি সাংবিধানিক। নির্বাচনের সময় প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ অন্য নির্বাচন কমিশনারদের সর্বোচ্চ ক্ষমতা থাকে। ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে গায়েবি মামলা দিয়ে সারা দেশে হাজার হাজার বিএনপি নেতা-কর্মীকে ধরে নিয়ে যায় পুলিশ। প্রার্থীদের বাড়িঘরে ভাঙচুর করা হয়, কোনো কোনো প্রার্থীর বাড়িতে আগুন দেওয়া হয়। তখন নির্বাচনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ছিল। বিএনপির পক্ষ থেকে নির্বাচন কমিশনে এসব ব্যাপারে লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছিল। তখন প্রধান নির্বাচন কমিশনার নূরুল হুদা এ ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ নেননি।’

পিপি ওমর ফারুক ফারুকী বলেন, ‘মাননীয় আদালত, ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় বসানোর জন্য নূরুল হুদার নেতৃত্বে একটি দাপ্তরিক নির্বাচন কমিশন ছিল। নূরুল হুদা রাতের ভোট দিনে করার বিষয় কাকে কাকে নির্দেশনা দিয়েছিলেন, সেসব তথ্য উদ্‌ঘাটন করা জরুরি। ২০১৮ সালের পাতানো নির্বাচনের যে নির্বাচনী বাজেট, সেই বাজেট থেকে অর্থ আত্মসাৎ করা হয়েছে। অর্থ আত্মসাৎ–সংক্রান্ত নথিপত্র সংগ্রহের জন্যও নূরুল হুদাকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা জরুরি।’

পিপি বলেন, ‘মাননীয় আদালত, সাবেক সেনাপ্রধান মইন ইউ আহমেদের ছোট ভাই মিনহাজ আহমেদ জাবেদকে নোয়াখালী-৩ (বেগমগঞ্জ) আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দিয়েছিলেন ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা। তাঁর বিপরীতে একজন অপরিচিত নারী আওয়ামী লীগ নেত্রীকে দাঁড় করিয়ে দেওয়া হয়েছিল।’

এ কথা শোনার পর আদালত পিপি ওমর ফারুক ফারুকীর কাছে জানতে চান, ‘সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার নূরুল হুদার কোনো আত্মীয় সংসদ সদস্য ছিলেন কি না?’ জবাবে পিপি বলেন, ‘মাননীয় আদালত, সাংবিধানিক পদে থেকে নূরুল হুদা ক্ষমতার অপব্যবহার করে নিজের ভাগনে এস এম শাহজাদাকে পটুয়াখালী-৩ (দশমিনা-গলাচিপা) আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত করেছিলেন।’

পরে আদালত পিপির কাছে আরও জানতে চান, নূরুল হুদা নির্বাচন কমিশনারের পদে থাকাকালে নির্বাচন কমিশনের সচিব কে ছিলেন? জবাবে পিপি বলেন, ‘মাননীয় আদালত, ২০১৮ সালের দিনের ভোট রাতের নির্বাচনে নূরুল হুদার নির্বাচন কমিশন সচিব ছিলেন হেলালুদ্দিন আহমেদ।’

সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদার দুই হাত পেছনে নিয়ে হাতকড়া পরানো হয়, মাথায় দেওয়া হয় পুলিশের হেলমেট। আজ শুক্রবার বিকেলে ঢাকার সিএমএম আদালত থেকে হাজতখানায় নেওয়ার সময়
ছবি: আসাদুজ্জামান

রিমান্ডের বিপক্ষে যেসব যুক্তি দেন নূরুল হুদার আইনজীবী

নূরুল হুদাকে আবারও ১০ দিন রিমান্ডে নেওয়ার আবেদনের তীব্র বিরোধিতা করেন তাঁর আইনজীবীরা। পিপির বক্তব্যের পর নূরুল হুদার আইনজীবী তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ‘মাননীয় আদালত, চার দিন আগেই রাষ্ট্রপক্ষ থেকে নূরুল হুদাকে রিমান্ডে নেওয়ার যেসব কারণ উল্লেখ করা হয়েছিল, আজও রাষ্ট্রপক্ষ একই আবেদন করেছে। চার দিন রিমান্ডে নিয়ে যে ডেভেলপমেন্ট (তদন্তের অগ্রগতি), তার কোনো কিছুই কিন্তু আবেদনে উল্লেখ নেই।’

আইনজীবী তৌহিদুল বলেন, ‘মাননীয় আদালত, চার দিন আগে যখন নূরুল হুদাকে রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করা হয়েছিল, তখন কিন্তু রাষ্ট্রদ্রোহের অপরাধের অভিযোগ ছিল না। আমরা তখন বলেছিলাম, নূরুল হুদার বিরুদ্ধে যেসব ধারায় মামলা করা হয়েছে, তার প্রতিটি ধারা জামিনযোগ্য। যেহেতু জামিনযোগ্য ধারায় মামলা দেওয়া হয়েছিল, তাঁকে আটকে রাখার জন্য নতুন করে রাষ্ট্রদ্রোহের অপরাধ সংযুক্ত করা হয়েছে।’

আইনজীবী তৌহিদুল বলেন, ‘আইন অনুযায়ী, রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা কোনো ব্যক্তি করতে পারে না। রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা করবে সরকার। আবার ফৌজদারি কার্যবিধির ১৯৬ ধারা অনুযায়ী, রাষ্ট্রদ্রোহের মামলার আগে সরকারের পূর্ব অনুমোদন প্রয়োজন। কিন্তু আমরা এ ক্ষেত্রে দেখছি, সরকারের কোনো ধরনের পূর্ব অনুমোদন ছাড়াই রাষ্ট্রদ্রোহের ধারা সংযুক্ত করা হয়েছে।’

নূরুল হুদার আইনজীবী বলেন, ‘নূরুল হুদা তো কোনো রাষ্ট্রদ্রোহ অপরাধ করেননি। দণ্ডবিধির ১২৪–এর ক ধারায় রাষ্ট্রদ্রোহিতার সংজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। রাষ্ট্রদ্রোহের অপরাধ হয় তখন, যখন কোনো ব্যক্তি লিখিত বা কথার দ্বারা সরকারের প্রতি ঘৃণা বা বিদ্বেষ সৃষ্টি করেন। আমার মক্কেল নূরুল হুদা তো কোনো সরকারের প্রতি ঘৃণা বা বিদ্বেষ দেখাননি।’

নূরুল হুদার আইনজীবী বলেন, ‘মাননীয় আদালত, সরকারের পূর্ব অনুমোদন ছাড়া রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা চলতে পারে না। আইনের দৃষ্টিতে মামলাটি ত্রুটিপূর্ণ।’

আইনজীবী তৌহিদুল বলেন, ‘মাননীয় আদালত, রাষ্ট্রপক্ষ থেকে নূরুল হুদাকে রিমান্ডে নেওয়ার কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হচ্ছে বাজেট–সংক্রান্ত নথিপত্র উদ্ধার করা। কিন্তু একজন এসআই বাজেট–সংক্রান্ত তথ্য, আয়–ব্যয়ের হিসাব নির্ধারণ করবেন? বাজেট–সংক্রান্ত আয়–ব্যয়ের হিসাবসহ জবাবদিহি নেওয়ার জন্য আলাদা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। মহা হিসাব নিয়ন্ত্রক, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড রয়েছে।’

নূরুল হুদার আইনজীবীর এমন বক্তব্যের পর পিপি ওমর ফারুক ফারুকী তাঁর চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়ান। তিনি বলেন, ‘মাননীয় আদালত, রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা করার সময় সরকারের পূর্ব অনুমোদন নিতে হবে, এমন কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। রাষ্ট্রদ্রোহের মামলায় তদন্ত শেষে তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়ার আগে সরকারের পূর্ব অনুমোদন নেবে পুলিশ। আর রাষ্ট্রদ্রোহের অপরাধ আমলে নিতে পারেন না ম্যাজিস্ট্রেট আদালত। রাষ্ট্রদ্রোহের মামলার অভিযোগপত্র জমা দিতে হয় জেলা কিংবা মহানগর আদালতে। জেলা জজ এ অপরাধের অভিযোগ আমলে নেবেন।’

এ পর্যায়ে নূরুল হুদার আরেক আইনজীবী ওবায়দুল ইসলাম বলেন, ‘মাননীয় আদালত, উনি বয়স্ক মানুষ। ৮০ বছরের ওপরে বয়স। তিনি অসুস্থ। একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। জিজ্ঞাসাবাদের যদি প্রয়োজন হয়, তাহলে তাঁকে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদ করার অনুমতি দেওয়া হোক।’

শুনানির এক ঘণ্টা নূরুল হুদা মাথা নিচু করে কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে ছিলেন। উভয় পক্ষের শুনানি শেষ হলে আদালত নূরুল হুদাকে আবার চার দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার অনুমতি দেন। পরে কাঠগড়ায় আবারও তার দুই হাত পিছনে নিয়ে পরিয়ে দেওয়া হয় হাতকড়া। পরে পুলিশ হেলমেট পরিয়ে তাঁকে আবার আদালত থেকে হাজতখানায় নিয়ে যায়।