কবিগুরুর গান–কবিতা নিয়ে সুর-ছন্দে আনন্দময় সন্ধ্যা

‘আলোকের এই ঝরনাধারায়’ অনুষ্ঠানে আবৃত্তি ও সংগীতের যুগল পরিবেশনায় বাঁয়ে ডালিয়া আহমেদ ও অদিতি মহসিন। সোমবার সন্ধ্যায় বনানীর শেরাটন হোটেলের বলরুমেছবি: প্রথম আলো

বসন্ত কিংবা বৈশাখ, বর্ষা অথবা শীত, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গান সব সময়ই সময়োপযোগী। আর ললিত কণ্ঠে গীত সেই গান শুনতে পাওয়া যে অপার আনন্দের, সে কথাও নতুন করে বলার নেই। সোমবার হেমন্তের মৃদু শীতের সন্ধ্যায় কবিগুরুর গানের সঙ্গে বাড়তি প্রাপ্তি ছিল তাঁর কবিতার আবৃত্তি আর নৃত্য পরিবেশনা। ফলে শ্রোতা-দর্শকদের মুগ্ধ করেছিল ‘আলোকের এই ঝরনাধারায়’ নামের আয়োজনটি।

সোমবার সন্ধ্যায় ঢাকায় সুইডেন দূতাবাস ও এইচএসবিসি বাংলাদেশ যৌথভাবে কবিগুরুর গান, আবৃত্তি, নৃত্যের এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বনানীর শেরাটন হোটেলের বলরুমে। সুধীজনদের সঙ্গে কবিগুরুর অনন্য সৃজনকর্মের আনন্দ উপভোগের পাশাপাশি তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন ছিল এই আয়োজনের লক্ষ্য।

অনুষ্ঠানের শুরুতেই মঞ্চের নেপথ্যজুড়ে বিশাল ডিজিটাল পর্দায় কবিগুরুর জীবন ও কর্মের ওপর একটি প্রামাণ্যচিত্র দেখানো হয়। এরপর সংক্ষিপ্ত আলোচনায় সুইডেনের রাষ্ট্রদূত নিকোলাস উইকস বলেন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর অসামান্য সৃজনপ্রতিভায় ১৯১৩ সালে নোবেল পুরস্কার পেয়েছিলেন। তাঁর রচনায় মানবতা, প্রকৃতি, উচ্চতর জীবনদর্শন প্রকাশিত হয়েছে। সৃজনশীলতার কোনো ভৌগোলিক সীমান্ত নেই বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের এই কালজয়ী সৃজনকর্ম বিশ্বজনীনতা লাভ করেছে। তিনি বলেন, এ ধরনের শিল্প, সংস্কৃতি, সৃজনশীল আয়োজনের মধ্য দিয়ে দুই দেশের জনগণের মধ্যে পারস্পরিক জানাশোনা ও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আরও নিবিড় হবে।

এইচএসবিসির নির্বাহী পরিচালক মাহবুব উর রহমান দর্শকদের স্বাগত জানিয়ে বলেন, ‘নোবেল পুরস্কার পাওয়ার পর রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর গান ও কবিতা সারা বিশ্বে প্রচারিত হয়েছিল। বাস্তবিক অর্থেই তিনি বিশ্বনাগরিকে পরিণত হয়েছিলেন। তিনি আমাদের দেশে অবস্থান করে তাঁর অনেক কালজয়ী রচনাকর্ম করেছেন। আমাদের জন্য গর্বের বিষয়, তাঁর গান আমাদের জাতীয় সংগীত। তাঁর রচনা আমাদের সব সময় মানবিকতা বোধ ও দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করে।’

অনুষ্ঠানের সঞ্চালনায় ছিলেন নাট্যজন ত্রপা মজুমদার। তিনি কবির সৃজনসম্ভার উপভোগের আহ্বান জানান অতিথিদের।

কবিতা আর গানের অনেকটা যুগলবন্দীর মতো ছিল প্রথম পর্বের পরিবেশনা। আবৃত্তিশিল্পী ডালিয়া আহমেদ কবির বিভিন্ন কবিতা, গান ও রচনার বিশেষ অংশ মূল ও ইংরেজিতে আবৃত্তি করেন। পরে গান পরিবেশন করেন অদিতি মহসিন। আবৃত্তি ও গান মিলিয়ে একটি পরিবেশন। ‘আজি এ প্রভাতে রবির কর’ দিয়ে শুরু করছিলেন ডালিয়া আহমেদ। পরে অদিতি মহসিন গাইলেন, ‘আনন্দধারা বহিছে ভুবনে’। পরের আবৃত্তি ‘তুমি একটু কেবল বসতে দিও কাছে’, প্রথম চরণের পর পুরোটাই ইংরেজিতে। আবৃত্তির পর গানটি গেয়ে শোনানো হলো শ্রোতাদের।

‘পথ বেঁধে দিল বন্ধনহীন গ্রন্থি’ আবৃত্তির পরে ছিল গান ‘সেদিন দুজনে দুলেছিনু বনে’। ডলিয়া পাঠ করলেন ‘নারীকে আপন ভাগ্য জয় করিবার অধিকার’; অদিতি গাইলেন ‘বঁধু, কোন আলো লাগল চোখে’।

নৃত্য পরিবেশন করেন ওয়ার্দা রিহাব ও তাঁর সহশিল্পীরা
ছবি: প্রথম আলো

এরপর লিপিকা থেকে ‘একটি চাহনি’ পাঠ, পরের গানটি ‘কী সুর বাজে আমার প্রাণে/ আমিই জানি মনই জানে’।

বাঙালির প্রাণের সঙ্গে মিলে আছে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গানের সুর। তাই তাঁর গানে কান পাততেই হয়। প্রথমে আবৃত্তি হলো বাংলা ও ইংরেজিতে ‘আমি কান পেতে রাই’। পরে সুরে সুরে ‘কোন গোপনবাসীর কান্নাহাসির/ গোপন কথা শুনিবারে—বারে বারে/ কান পেতে রই।’

আত্মশক্তির কথা বহুবার মনে করিয়ে দিয়েছেন কবিগুরু তাঁর বহু রচনায়। ডালিয়ার আবৃত্তিতে এল সেই বাণী ‘চিত্ত যেথা ভয় শূন্য/উচ্চ যেথা শীর’। অদিতি শেষ করলেন ‘সার্থক জনম আমার জন্মেছি এই দেশে’ গেয়ে।

আনন্দের গান দিয়ে শুরু, দেশপ্রেমের গানে গানে গানের পালা শেষ হলে ওয়ার্দা রিহাব ও তাঁর সহশিল্পীরা পরিবেশন করেন ‘আকাশভরা সূর্যতারা’, ‘আজি বাংলাদেশের হৃদয় হতে’ এবং ‘আলোকের এই ঝরনাধারায়’ গানের সঙ্গে তিনটি নৃত্য। আনন্দময় সময় ভেসে গেল সুরের ভেলায়।