১৪ দিনে সৌদি গেছেন ৪৭ হাজার হজযাত্রী

ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে চূড়ান্ত নিরাপত্তা তল্লাশি শেষে সারবদ্ধভাবে বোর্ডিং ব্রিজের দিকে যাচ্ছেন হজযাত্রীরা। গত বুধবার তোলাছবি: প্রথম আলো

হজযাত্রা শুরুর প্রথম ১৪ দিনে বাংলাদেশ থেকে ৪৭ হাজার ১৮১ জন হজযাত্রী সৌদি আরব গেছেন। বাংলাদেশ ও সৌদি আরবের তিনটি এয়ারলাইনসের ১২২টি ফ্লাইটে এ হজযাত্রীদের সৌদিতে পাঠানো হয়েছে। আজ রোববার এসব তথ্য জানিয়েছে ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ।

শাহজালাল বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন মোহাম্মদ কামরুল ইসলাম প্রথম আলোকে জানান, সব ফ্লাইটই নির্ধারিত সময়ে ঢাকা থেকে ছাড়ে। হজযাত্রার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সমন্বিত প্রচেষ্টার কারণে কোনো ধরনের ভোগান্তি ছাড়াই ঢাকা ছাড়তে পেরেছেন হজযাত্রীরা।

এ বছরের হজযাত্রা শুরু হয় গত ২১ মে। ১৯ মে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাজধানীর আশকোনা হজ ক্যাম্পে আনুষ্ঠানিকভাবে হজযাত্রার উদ্বোধন করেন। ধর্ম মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, এ বছর ১ লাখ ২২ হাজার ২২১ জন বাংলাদেশি পবিত্র হজ পালনের জন্য সৌদি আরবে যাবেন।

বিমানবন্দরের তথ্য অনুযায়ী, এসব হজযাত্রীর মধ্যে ৬১ হাজার ১১১ জনকে পরিবহন করবে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস। আর বাকি হজযাত্রীরা সৌদি আরবের সৌদিয়া এয়ারলাইনস ও ফ্লাইনাস এয়ারলাইনসের মাধ্যমে সৌদি যাবেন। মোট ৩২৮টি ফ্লাইটে তাঁদের পরিবহন করা হবে।

শাহজালাল বিমানবন্দরের ব্যবস্থাপক (বিমানবন্দর নিরাপত্তা) ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মো. মাহমুদুল হাসান মাসুদ প্রথম আলোকে জানান, হজযাত্রা শুরুর পর থেকে ৩ জুন পর্যন্ত বিমানের ৫৪টি, সৌদিয়ার ৪৫ ও ফ্লাইনাসের ২৩টি ফ্লাইট হজযাত্রীদের নিয়ে সৌদির উদ্দেশে ঢাকা ছাড়ে। এসব ফ্লাইটে পরিবহন করা হজযাত্রীর ২১ হাজার ৫৯০ জন গেছেন বিমান বাংলাদেশের ফ্লাইটে।

এ বছরের হজযাত্রায় ভোগান্তি না হওয়ার পেছনে হজ ক্যাম্পেও বিমানবন্দরের টার্মিনালের মতো সুবিধা, সেখানে ইমিগ্রেশনের কাজ সম্পন্ন করা, টার্মিনালের একটি গেট (ফটক) শুধু হজযাত্রীদের ব্যবহারের জন্য বরাদ্দসহ নানা সেবার কথা উল্লেখ করেছেন বিমানবন্দরের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা।

গত বুধবার সরেজমিনে দেখা যায়, আশকোনা হজ ক্যাম্পে লাগেজ ব্যবস্থাপনাসহ হজযাত্রীদের ইমিগ্রেশনের কাজ করা হচ্ছে। সেখানে বিমান, সৌদিয়া ও ফ্লাইনাসের পৃথক কাউন্টারও আছে। আর লাগেজ তল্লাশির জন্য বসানো হয়েছে তিনটি স্ক্রিনিং মেশিন এবং ১৭টি চেক-ইন কাউন্টার।

লাগেজ ব্যবস্থাপনা ও ইমিগ্রেশনের কাজ শেষে নির্ধারিত বাসে করে হজযাত্রীদের বিমানবন্দরের টার্মিনালে আনা হয়। যাত্রীদের লাগেজ ‘হ্যাঙ্গার গেট’–৮ দিয়ে বিমানবন্দরের ভেতরে নেওয়া হয়। এরপর ৫ নম্বর গেট দিয়ে টার্মিনালের ভেতরে আসেন হজযাত্রীরা। সারবদ্ধভাবে এই ফটক দিয়ে প্রবেশ করেন হজযাত্রীরা। সারির শুরুতে ও একেবারে শেষে দুজন করে মোট চারজন আনসার সদস্য হজযাত্রীদের টার্মিনালের ভেতর নিয়ে যান। এখানেই হজযাত্রীদের চূড়ান্ত নিরাপত্তা তল্লাশি করা হয়। দ্রুত তল্লাশির কাজ শেষ করার জন্য সেখানে পৃথক দুটি স্ক্রিনিং মেশিনও বসানো হয়েছে।

সরেজমিনে টার্মিনাল ঘুরে দেখা যায়, হজযাত্রীদের জন্য পৃথক দুটি ‘বোর্ডিং ব্রিজের’ (১০ ও ১১) ব্যবস্থা করেছে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ। সৌদি পৌঁছানোর পর হজযাত্রীদের যাতে কোনো ভোগান্তিতে না পড়তে হয়, সে জন্য এ দুই বোর্ডিং ব্রিজে সৌদি আরবের ইমিগ্রেশনের কাজও সম্পন্ন করা হয়।

গত বছর সৌদি আরবের সরকারি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে স্বাক্ষরিত একটি চুক্তির আওতায় ‘রুট টু মক্কা সার্ভিসের’ অংশ হিসেবে এখানে সৌদি কর্তৃপক্ষের ১৫টি ইমিগ্রেশন ডেস্ক থেকে সেবা দেওয়া হয়।

বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক কামরুল ইসলাম বলেন, একসময় হজযাত্রায় ছিল নানা রকম ভোগান্তি। সময়মতো ফ্লাইট ছাড়ত না। গত বছর থেকে সে সমস্যা আর নেই। রুট টু মক্কা সার্ভিস চালু হওয়ায় হজযাত্রা এখন আরও সহজ হয়েছে। ঢাকাতেই সৌদি আরবের ইমিগ্রেশনের কাজ শেষ হওয়ায় মক্কায় পৌঁছানোর পর হজযাত্রীরা সরাসরি তাঁদের হোটেলে যেতে পারেন। সবার সমন্বিত উদ্যোগের কারণে এবারের হজযাত্রা–সংক্রান্ত কাজ সুষ্ঠুভাবে শেষ হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।