সমগীতের ‘ভাষাবৈচিত্র্যের গান’-এ বাংলার সঙ্গে অন্যান্য ভাষাগোষ্ঠীর পরিবেশনা

সমগীত সংস্কৃত প্রাঙ্গণের আয়োজনে ‘ভাষাবৈচিত্র্যের গান’ কনসার্টে সাংস্কৃতিক পরিবেশনা নিয়ে আসেন বিভিন্ন ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর শিল্পীরা। বুধবার বিকেলে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির নন্দন মঞ্চেছবি: প্রথম আলো

বৈষম্যহীন সংস্কৃতির জমিন তৈরির প্রত্যাশা নিয়ে অনুষ্ঠিত হলো সমগীত সংস্কৃত প্রাঙ্গণের আয়োজন ‘ভাষাবৈচিত্র্যের গান’ কনসার্ট। বুধবার বিকেলে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির নন্দন মঞ্চে অনুষ্ঠিত এ আয়োজনে অংশ নিয়েছেন দেশের প্রখ্যাত শিল্পীরা ছাড়াও বিভিন্ন ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর শিল্পীরা। বম, মান্দি, মারমা, ত্রিপুরা ভাষার সাংস্কৃতিক পরিবেশনার পাশাপাশি ছিল চা–বাগানের শ্রমিকদের গান, ছিল ফয়েজ আহমদ ফয়েজের উর্দু কবিতা পাঠ।

‘ওরা আমার মুখের ভাষা কাইড়া নিতে চায়, ওরা কথায় কথায় শিকল পরায় আমার হাতে পায়’ এবং ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি’ পরিবেশনা দিয়ে শুরু হয় সমগীত সাংস্কৃতিক সংগঠনের এ আয়োজন। সমগীতের পক্ষ থেকে প্রথম দুটি পরিবেশনা ছিল এ গান দুটি।

শিল্পী সায়ান নিজের গান শুরুর আগে বললেন, ‘এই বহুভাষার সঙ্গে আরেকটি ভাষা আছে, যে বিষয় নিয়ে আমরা কথা কম বলি। সেটি প্রেম।’ সায়ান তাঁর কথায় ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীকে ‘উপজাতি’ সম্বোধনের প্রতিবাদ জানান। তিনি পরিবেশন করেন দুটি গান।

অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সমগীত সংস্কৃত প্রাঙ্গণের সভাপ্রধান দীনা তাজরিন ও সহসভাপ্রধান রেবেকা নীলা। তাঁরা বলেন, এই দেশের প্রতিটি আন্দোলনে দেশের সব জাতিগোষ্ঠীর ভাষার মানুষ অংশগ্রহণ করেছেন। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন এই বাংলায় শতফুল ফোটাবারই আন্দোলন। ২০২৪–এর শিক্ষার্থী-জনতার জুলাই অভ্যুত্থান নতুন আশার জন্ম দিয়েছে বাংলাদেশে বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠার অগ্রযাত্রার। তারই অংশ হিসেবে এই আয়োজন।

সমগীত সংস্কৃত প্রাঙ্গণের আয়োজিত ‘ভাষাবৈচিত্র্যের গান’ কনসার্টে সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। বুধবার বিকেলে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির নন্দন মঞ্চে
ছবি: প্রথম আলো

বিকেলে কনসার্ট শুরুর পরপরই ছিল মিথুন রাকসানের কণ্ঠে গারোদের মান্দি কবিতা আবৃত্তি। এরপর তিনি কবিতাটি বাংলায় অনুবাদ করে শোনান। সিলেটের চা–বাগানের শ্রমিকদের প্রতীক থিয়েটারের শিল্পীরা শোনান নারী চা–শ্রমিকদের নিয়ে রচনা করা গান ‘ঘণ্টাটা কলিজায় মারে বারেবারে’। এ গানের কথায় কথায় উঠে আসে শ্রমিকদের মানবেতর জীবনর দৃশ্যকল্প। এর আগে বাঁশনৃত্যের মধ্য দিয়ে নিজেদের সংস্কৃতিগত ঐতিহ্য তুলে ধরেন বম ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর শিল্পীরা। মারমা শিল্পীরা আসেন তাঁদের নৃত্য নিয়ে।

শিল্পী কফিল আহমেদ ও কৃষ্ণকলিও গান পরিবেশন করেন এই কনসার্টে। সমগীতের এই আয়োজন উপস্থিত হয়েছিলেন অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ ও মোশাহিদা সুলতানা ঋতুসহ অনেক শিল্পী, সাধারণ দর্শক–শ্রোতা। এ আয়োজনের সহযোগিতায় ছিল সিটি ব্যাংক, প্রাইম ব্যাংক ও বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি।