রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আজ থেকে ইসির সংলাপ

ইসি বলছে, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানে রাজনৈতিক দলগুলোর পরামর্শ নেওয়াই এ সংলাপের লক্ষ্য।

ফাইল ছবি

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে দেশের সব নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আজ রোববার আনুষ্ঠানিক সংলাপ শুরু করতে যাচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। কমিশন বলছে, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানে রাজনৈতিক দলগুলোর পরামর্শ নেওয়াই এ সংলাপের লক্ষ্য। তবে ইসির এ সংলাপে সুনির্দিষ্ট কোনো আলোচ্যসূচি থাকছে না।

সংলাপে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ, তাদের প্রধান রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপিসহ নিবন্ধিত ৩৯টি রাজনৈতিক দলকে আমন্ত্রণ জানানো হচ্ছে। তবে বিএনপি বলেছে, তারা ইসির সংলাপে অংশ নেবে না। এর বাইরে আরও কয়েকটি দলও সংলাপে অংশ নেবে না বলে জানিয়েছে। ফলে শেষ পর্যন্ত এ সংলাপ কতটুকু ফল বয়ে আনবে, তা নিয়ে সংশয় থাকছেই।

এর আগে গত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেও দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ করেছিল কে এম নূরুল হুদার নেতৃত্বাধীন কমিশন। সংলাপে যেসব সুপারিশ এসেছিল, সেগুলো বই আকারে প্রকাশ করেই নিজেদের দায়িত্ব শেষ করেছিল ইসি। এসব সুপারিশ বাস্তবায়নে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ দেখা যায়নি।

এবার কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন বলছে, সংলাপে আসা পরামর্শগুলো পর্যালোচনা করে তারা নির্বাচনের পথনকশা চূড়ান্ত করবে। গত ফেব্রুয়ারিতে দায়িত্ব নেওয়ার ১৫ দিনের মাথায় অংশীজনদের সঙ্গে সংলাপ শুরু করে ইসি। শিক্ষাবিদ, বিশিষ্ট নাগরিক, সম্পাদক, নির্বাচন বিশেষজ্ঞ, নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের সঙ্গে সংলাপ করেছে তারা।

ইসির তথ্য অনুযায়ী, আজ সকাল সাড়ে ১০টায় গণতান্ত্রিক আন্দোলনের (এনডিএম) সঙ্গে প্রথম সংলাপ হবে। এরপর দুপুর ও বিকেলে বিএনএফ, বাংলাদেশ কংগ্রেস ও বাংলাদেশ মুসলিম লীগের (বিএমএল) সঙ্গে সংলাপে বসার কথা রয়েছে। প্রতিদিন সর্বোচ্চ চারটি দলের সঙ্গে সংলাপে বসবে ইসি।

আওয়ামী লীগ

আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টি ছাড়া অন্য দলগুলোর জন্য এক ঘণ্টা করে সময় নির্ধারণ করা হয়েছে। ওই তিন দলের জন্য সময় রাখা হয়েছে দুই ঘণ্টা করে। বিএনপির সঙ্গে ২০ জুলাই সংলাপে বসার তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। আর সবার শেষে ৩১ জুলাই আওয়ামী লীগের সঙ্গে সংলাপের মধ্য দিয়ে ইসির এ কার্যক্রম শেষ হবে।

যে ৩৯টি দল ইসিতে নিবন্ধিত, তার মধ্যে তিনটি দল বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০–দলীয় জোটভুক্ত। বিএনপির পাশাপাশি এ দলগুলোরও সংলাপে অংশ নেওয়ার সম্ভাবনা কম বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে। এ ছাড়া বামপন্থী কয়েকটি এবং ধর্মভিত্তিক কিছু দলও সংলাপ বর্জন করতে পারে। গত জুন মাসে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে মতবিনিময় সভা করেছিল ইসি। তখন ১১টি দল অংশ নেয়নি। এ দলগুলো হলো বিএনপি, সিপিবি, বাসদ, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি), জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি), বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, বাংলাদেশ মুসলিম লীগ, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি ও বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি)।

বিএনপি জোটের শরিক দল কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম গতকাল বিকেলে বলেন, সংলাপে অংশ নিতে তাঁরা ইসির চিঠি পেয়েছেন। আগামী মঙ্গলবার সংলাপে যাওয়ার আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে তাঁদের। তবে সংলাপে অংশ নেওয়ার বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত নেননি তাঁরা।

সংলাপের চিঠি পেলেও অংশ না নেওয়ার বিষয়ে এখনো দলীয়ভাবে সিদ্ধান্ত হয়নি বলে জানান বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ।

বিএনপির দলীয় পতাকা
ফাইল ছবি

গত নির্বাচন কমিশন সাতটি করণীয় নির্ধারণ করে অংশীজনদের সঙ্গে সংলাপে বসেছিল। এসব বিষয়ে দলগুলোর পরামর্শ নেওয়া হয়েছিল। গত কমিশনের অধীনে অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে দেশ–বিদেশে নানা প্রশ্ন ও বিতর্ক ছিল। বিএনপিসহ ভোটে অংশ নেওয়া বিভিন্ন দল অভিযোগ করে আসছে, গত কমিশন দিনের ভোট রাতে করেছে।

এবারের সংলাপের বিষয়ে সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন বলেন, তাঁরা ইসির চিঠি পেয়েছেন। তবে সংলাপে যাবেন কি না, দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে বৈঠক করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

তিনি বলেন, ইসি চিঠিতে বলছে, সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য প্রয়োজনীয় আইনবিধি যুগোপযোগী করা হয়েছে, ইভিএমসহ আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তির উন্নয়ন করা হচ্ছে। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সবই যদি করা হয়ে যায়, তাহলে এ সংলাপের কী দরকার, সে প্রশ্ন তুলেছেন তিনি।