অন্তর্বর্তী সরকারকে সীমাবদ্ধতা বুঝে অগ্রাধিকার ঠিক করতে হবে: নুরুল হুদা

রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘নতুন বাংলাদেশ: অন্তর্বর্তী সরকারের ১০০ দিন—সফলতা ও চ্যালেঞ্জসমূহ’ শীর্ষক এক কর্মশালার আয়োজন করা হয়ছবি: প্রথম আলো

অন্তর্বর্তী সরকারকে নিজেদের সীমাবদ্ধতা বুঝে অগ্রাধিকার ঠিক করে সংস্কারকাজ করতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) নুরুল হুদা। তিনি বলেছেন, যে সংস্কার করতে চাওয়া হচ্ছে, তা অনন্তকাল ধরে চলতে পারে না। নির্বাচনের মাধ্যমে রাজনীতিকদের হাতে ক্ষমতা দিতে হবে।

আজ শনিবার রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে নুরুল হুদা এসব কথা বলেন। ‘নতুন বাংলাদেশ: অন্তর্বর্তী সরকারের ১০০ দিন—সফলতা ও চ্যালেঞ্জসমূহ’ শীর্ষক এ কর্মশালার আয়োজন করে কে আলী ফাউন্ডেশন।

সাবেক আইজিপি নুরুল হুদা বলেন, পলিথিন বাদ দেওয়া জরুরি, হর্নমুক্ত ঢাকাও জরুরি। কিন্তু এসব অগ্রাধিকার না। নিজেদের সীমাবদ্ধতা বুঝতে হবে। কারণ, দেশের সব ক্ষেত্রে বিরাট অবক্ষয় হয়েছে। ভালো লোকের প্রত্যাশা করতে হবে, সন্ধান করতে হবে।

জুলাই–আগস্টে অভ্যুত্থানে আহত ব্যক্তিদের চিকিৎসার বিষয়টি অগ্রাধিকার তালিকায় থাকা উচিত ছিল উল্লেখ করে নুরুল হুদা আরও বলেন, যাঁরা জুলাই-আগস্টে আহত হয়েছেন, চিকিৎসার জন্য তাঁদের রাস্তায় নামতে হচ্ছে। এই সরকারের এখানে সফলতার সুযোগ ছিল। আহত ব্যক্তিদের চিকিৎসার বিষয়টি প্রথম অগ্রাধিকার হওয়া উচিত ছিল। অথচ তিন মাস পার হয়ে যাওয়ার পরও আহতদের আন্দোলন করতে হচ্ছে। এটাকে ব্যর্থতা হিসেবে দেখতে হবে।

সংস্কার প্রসঙ্গে পুলিশের সাবেক এই কর্মকর্তা বলেন, রাজনীতিবিদেরা দেশ শাসন করতে চান, সেটা বৈধ। রাজনীতিকদের হাতে ক্ষমতা দিতেই হবে। তাঁরা ভালো হবেন, এমনটাই আশা-চিন্তা করে তাঁদের কাছেই ক্ষমতা দিতে হবে। যে সংস্কার করতে চাওয়া হচ্ছে, এটা অনন্তকাল ধরে চলতে পারে না। সংস্কার একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া।

কর্মশালায় প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সেন্টার ফর পলিসি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট রিসার্চের (সিপিডিআর) নির্বাহী পরিচালক আবুল হোসেন। তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার রাষ্ট্র সংস্কারে অর্থনৈতিক দুর্বৃত্তায়ন থেকে উত্তরণে এবং জনপ্রশাসনে সৎ, দক্ষ ও যোগ্য লোককে পদোন্নতি দেওয়ার বিষয় পর্যালোচনা করতে একটি করে কমিটি করেছে। এ ছাড়া বিদ্যমান পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে সুপারিশ দিতে আরও ১০টি সংস্কার কমিশন গঠন করেছে। এসব কমিটির ও কমিশনের প্রতিবেদন, সুপারিশ ও দিকনির্দেশনা নির্বাচিত সরকারকে রাষ্ট্র সংস্কারের উদ্যোগকে সহজ করবে।

ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) সাজ্জাদ রহমান বলেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে অনৈক্য দেখা দিয়েছে। এ ছাড়া দলগুলো মানুষের চেয়ে নিজেদের চিন্তা বেশি করছে, যা সরকার ও মানুষের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ। আশা করছি, দলগুলো অনৈক্য দূর করবে। আর নির্বাচনের দিকে যেতেই হবে। সরকারকেও সময় দিতে হবে। কিছু সংস্কার ছাড়া এ সরকার চলে গেলে অরাজকতা তৈরি হবে।’

কর্মশালায় বাংলাদেশ ইসলামিক ল’ইয়ার্স কাউন্সিলের সভাপতি জসিম উদ্দিন সরকার বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারকে প্রতিনিয়ত বিভিন্ন বিষয় বিব্রত করেছে। সাফল্য বিচারের আগে এসব বিষয় বিবেচনায় রাখতে হবে। অতীতে যাঁরা স্বৈরাচারী সরকারের দোসর হিসেবে কাজ করেছেন, তাঁদের প্রশাসনে রাখার কোনো সুযোগ নেই। এ সংস্কার করতেই হবে।

গণ অধিকার পরিষদের সদস্যসচিব ফারুক হাসান বলেন, তরুণরা বিপ্লব ঘটিয়েছেন। তাঁরা সম্মুখসারিতে ছিলেন। আজ তরুণদের অবজ্ঞা করা হচ্ছে। আর খুনি হাসিনার দোসরদের পদোন্নতি দেওয়া হচ্ছে, যে কারণে উপদেষ্টাদের বিভিন্ন জায়গায় লাঞ্ছিত করার ঘটনা ঘটছে।  

আন্তর্জাতিক ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় মালয়েশিয়ার পোস্টডক্টরাল ফেলো ফয়জুল হক বলেন, ‘ফ্যাসিস্ট হটাতে যারা যুদ্ধ করল, সেই শিক্ষার্থী, যার হাত-পা-চোখ নেই, তাকে চিকিৎসার জন্য রাস্তায় আন্দোলন করতে হচ্ছে। এ রকম বাংলাদেশ আমরা দেখতে চাইনি। বাংলাদেশের কোনো ঘরে বাতি জ্বলার আগে তাদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা দরকার।’ কর্মশালায় সভাপতিত্ব করেন কে আলী ফাউন্ডেশনের সভাপতি অধ্যাপক শেখ আকরাম আলী।