‘অত্যাবশ্যক সেবায়’ ধর্মঘট করলে শাস্তি
সরকার প্রয়োজন মনে করলে যেকোনো সেবাকে অত্যাবশ্যক পরিষেবা হিসেবে ঘোষণা করতে পারবে। আর অত্যাবশ্যক সেবায় চাইলেই ধর্মঘট, ‘লে-অফের’ মতো কোনো কিছু করা যাবে না। কেউ তা করলে শাস্তি পেতে হবে।
এমন কিছু বিধান রেখে আজ সোমবার ‘অত্যাবশ্যক পরিষেবা আইন, ২০২২’-এর খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয় বৈঠকটি। পরে সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে সভার সিদ্ধান্ত জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, অত্যাবশ্যক পরিষেবা বলতে সরকার যেগুলোকে ঘোষণা করবে, সেগুলোই হবে। জনগণের জন্য কোনো কষ্টের কারণ হলে সে ক্ষেত্রেও অত্যাবশ্যক ঘোষণা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারবে সরকার। এ ঘোষণা অনধিক ছয় মাস পর্যন্ত বলবৎ থাকবে। তবে প্রয়োজনে সরকার গেজেট জারি করে এ সময় বাড়াতে পারবে।
অত্যাবশ্যক পরিষেবার কিছু নাম উল্লেখ করে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, যেমন ডাক ও টেলিযোগাযোগ; তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি; ই-কমার্স; ডিজিটাল আর্থিক সেবা; বিদ্যুৎ উৎপাদন, সঞ্চালন, বিতরণ, সরবরাহ ও বিক্রয়; কয়লা ও গ্যাস। এ ছাড়া স্থলপথ, রেলপথ, জলপথ বা আকাশপথে যাত্রী বা পণ্য সরবরাহ এবং স্থল, সমুদ্র, নদী বা বিমানবন্দরের পণ্য খালাস, সশস্ত্র বাহিনীর আওতায় কোনো প্রতিষ্ঠান বা প্রতিষ্ঠান-সম্পর্কিত পরিষেবা ইত্যাদি। এর বাইরেও সরকার ইচ্ছা করলে যেকোনো সেবাকে অত্যাবশ্যক ঘোষণা করে দিতে পারে।
এগুলোর বিষয়ে অচলাবস্থা হলে সরকার হস্তক্ষেপ করতে পারবে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, এ সেবাগুলো যখন-তখন বন্ধ করা যাবে না। কেউ তা না মানলে শাস্তি পেতে হবে। যদি কেউ এ-জাতীয় অপরাধ করেন, তাহলে সাধারণভাবে ৬ মাসের কারাদণ্ড ও ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা করা যাবে। আবার বেআইনি ধর্মঘট চলমান রাখার জন্য যদি কেউ সমর্থন দেন, সে ক্ষেত্রে এক বছরের কারাদণ্ড ও অনূর্ধ্ব ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা যাবে।
এ ছাড়া কোনো প্রতিষ্ঠানের মালিক যদি বেআইনিভাবে লে-অফ করেন বা চলমান রাখার জন্য ব্যবস্থা নেন, তাহলে অনূর্ধ্ব ৬ মাস জেল ও অনূর্ধ্ব ১ লাখ টাকা অর্থদণ্ড করা যাবে। যদি সরকারি কোনো অফিস হয়, তাহলে বিভাগীয় ব্যবস্থাও নেওয়া যাবে।
রাতের বেলা কেউ বালু তুলতে পারবে না
মন্ত্রিসভার বৈঠক থেকে ‘বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা (সংশোধন) আইন, ২০২২’-এর খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে ডিজিটাল জরিপ করে কোথায় বালুমহাল আছে, কতটুকু তার পরিধি, কী পরিমাণে বালু উত্তোলন করা যাবে, তার ওপর ভিত্তি করে বালুমহালগুলো এক বছরের জন্য ইজারা দেওয়া যাবে। তবে উর্বর কৃষিজমি হলে বা বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহৃত জায়গা থেকে বালু তোলা যাবে না।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, যারা বেআইনিভাবে বালু তুলবে, তাদের সবকিছু জব্দ করে তাদের আজীবনের জন্য এ ব্যবসায় অযোগ্য ঘোষণা করা হবে। কারও বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ প্রমাণিত হলে তার দুই বছরের কারাদণ্ড এবং পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানা করা যাবে। এ ছাড়া রাতের বেলা কেউ বালু তুলতে পারবে না। সূর্যাস্তের মধ্যেই বালু তোলা শেষ করতে হবে।
দেশের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় সংরক্ষিত ও প্রাকৃতিক বনাঞ্চলের গাছ কাটার ওপর আরোপিত বিধিনিষেধ ২০৩০ সাল পর্যন্ত বহাল রাখার প্রস্তাবও অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। বৈঠকে মন্ত্রিসভায় গৃহীত সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের বিষয়ে ২০২২ সালের তিন মাসের (জুলাই-সেপ্টেম্বর) প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়।