বিজয়ের ডিসেম্বর দেশে দেশে
ভিয়েতনাম: ‘আকাশের দিয়েন বিয়েন ফু’ বিজয়
ডিসেম্বর বাংলাদেশের বিজয়ের মাস; কিন্তু বিশ্বে এমন আরও বহু দেশ আছে, যারা তাদের স্বাধীনতা, মুক্তি অথবা যুদ্ধের সমাপ্তির সাফল্যকে স্মরণ করে ‘বিজয় দিবস’ বা সমতুল্য নামে। প্রথম আলো ডিসেম্বরের এই বিশেষ আয়োজনে তুলে ধরছে, কীভাবে তারা সেই দিনটিকে আজও নিজেদের জাতীয় জীবনে বাঁচিয়ে রেখেছে।
ভিয়েতনামের নাম শুনলেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে অদম্য সাহসের প্রতিচ্ছবি। আজ ৩০ ডিসেম্বর, ভিয়েতনামের ইতিহাসের এক গর্বিত বিজয়ের স্মারক দিন। ১৯৭২ সালের এই সময়েই ভিয়েতনামিরা বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী বিমানবাহিনীর বিরুদ্ধে এক অসম্ভব বিজয় ছিনিয়ে এনেছিল, যা ইতিহাসে ‘আকাশের দিয়েন বিয়েন ফু’ নামে পরিচিত।
১৯৭২ সালের ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময়। আমেরিকা ভিয়েতনামের ওপর চালায় ইতিহাসের অন্যতম ভয়াবহ বিমান হামলা, যার নাম ছিল ‘অপারেশন লাইনব্যাকার ২’ বা ‘ক্রিসমাস বোম্বিং’। টানা ১২ দিন ও রাত ধরে রাজধানী হ্যানয় এবং হাইফং শহরের ওপর বি-৫২ স্ট্র্যাটোটোফোরট্রেস বিমান থেকে হাজার হাজার টন বোমা ফেলা হয়। উদ্দেশ্য ছিল উত্তর ভিয়েতনামকে মাটির সাথে মিশিয়ে দিয়ে আলোচনার টেবিলে নতি স্বীকার করতে বাধ্য করা; কিন্তু ভিয়েতনামের আকাশ প্রতিরক্ষা বাহিনী এবং সাধারণ মানুষ হার মানেননি। তাঁরা সীমিত সামর্থ্য নিয়েই অত্যাধুনিক মার্কিন বিমানের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন এবং ৮১টি বিমান ভূপাতিত করেন।
৩০ ডিসেম্বর ভোরে আমেরিকা বুঝতে পারে যে ভিয়েতনামের মনোবল ভাঙা অসম্ভব। তারা বোমাবর্ষণ বন্ধ করতে বাধ্য হয় এবং প্যারিস শান্তি আলোচনায় ফিরে আসার ঘোষণা দেয়। এই বিজয়ই ১৯৭৩ সালের জানুয়ারি মাসে প্যারিস শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরের পথ সুগম করে এবং চূড়ান্তভাবে আমেরিকান সেনাদের ভিয়েতনাম ছাড়তে বাধ্য করে। হ্যানয়ের ধ্বংসস্তূপের মধে৵ দাঁড়িয়ে ভিয়েতনামিরা প্রমাণ করেছিলেন, প্রযুক্তির চেয়ে দেশপ্রেমের শক্তি অনেক বেশি।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় যেমন আমরা পাকিস্তানি বাহিনীর আধুনিক অস্ত্রের বিরুদ্ধে গেরিলা যুদ্ধে জয়ী হয়েছিলাম, ভিয়েতনামের এই আকাশ বিজয়ও সেই একই বার্তা দেয়। ৩০ ডিসেম্বর ভিয়েতনামবাসীর কাছে মনে করিয়ে দেয়, মাটি কামড়ে পড়ে থাকলে বিজয় একদিন আসবেই। এটি ছিল বিংশ শতাব্দীর অন্যতম সেরা সামরিক ও মনস্তাত্ত্বিক বিজয়।