মুঠোফোনে ডেটা প্যাকেজ নিয়ে জরিপ, ৩ দিনের মেয়াদ ফেরানোর ইঙ্গিত

মুঠোফোনফাইল ছবি: রয়টার্স

মুঠোফোনে ডেটার প্যাকেজ–সংক্রান্ত নির্দেশিকা জারির ছয় মাসের মাথায় বিটিআরসি গ্রাহকের মতামত জানতে চাইছে। এ জন্য একটি জরিপ শুরু করেছে তারা। এর ওপর ভিত্তি করে তারা পরবর্তী করণীয় ঠিক করবে।

বিটিআরসির এই উদ্যোগ নিয়ে মুঠোফোন অপারেটররা বলছে, ঘন ঘন প্যাকেজ নিয়ে নির্দেশিকা এলে বাজারে তা নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। বাতিল করা ৩ দিনের জনপ্রিয় প্যাকেজ ফেরানোর ইঙ্গিতও রয়েছে এবারের জরিপে।

বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) ‘মোবাইল ফোন অপারেটরসমূহের ডেটা এবং ডেটা সংশ্লিষ্ট প্যাকেজ–সম্পর্কিত নির্দেশিকা-২০২৩’ প্রণয়ন করে গত বছরের অক্টোবর থেকে তা কার্যকর করে। ছয় মাসের মাথায় তারা আবার জরিপ করতে যাচ্ছে।

বিটিআরসির সচিব মো. নুরুল হাফিজ প্রথম আলোকে বলেন, গ্রাহকের মতামত জানতে তাঁরা এই জরিপ করছেন। গ্রাহকের মতামতের পর বিটিআরসি বিষয়টি নিয়ে পরবর্তী করণীয় ঠিক করবে।

বিটিআরসির নির্দেশিকায় প্যাকেজের সংখ্যা সর্বোচ্চ ৪০; মেয়াদ হয় ৭ দিন, ৩০ দিন ও আনলিমিটেড (নির্দিষ্ট মেয়াদহীন) করা হয়।

এর আগে বিটিআরসি ২০২২ সালে একটি নির্দেশিকা জারি করেছিল। সেখানে সর্বোচ্চ প্যাকেজের সংখ্যা ছিল ৯৫ এবং মেয়াদ ছিল ৩ দিন, ৭ দিন, ১৫ দিন ও ৩০ দিন।

সর্বশেষ নির্দেশিকা প্রণয়নের সময় মুঠোফোন অপারেটররা ৩ দিনের প্যাকেজ রাখার পক্ষে ছিল। অপারেটররা বলেছিল, ৩ দিনের প্যাকেজ সবচেয়ে জনপ্রিয়। গ্রাহকদের ৬৯ দশমিক ২৩ শতাংশ ৩ দিন মেয়াদি প্যাকেজ ব্যবহার করে। অপারেটরদের আপত্তি সত্ত্বেও বিটিআরসি ৩ দিনের প্যাকেজ বাদ দিয়েছিল।

গত বছর নতুন নির্দেশিকা জারির আগেও বিটিআরসি একটি জরিপ করেছিল। এবার মোবাইল ডেটা প্যাকেজ নির্দেশিকা নিয়ে গ্রাহকদের মতামত জানতে আবার জরিপ শুরু করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা। জরিপে ৭টি বিষয়ে জানতে চাওয়া হচ্ছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য একটি প্রশ্ন হচ্ছে, ‘৩ দিন মেয়াদি প্যাকেজ চালু করা হলে ডেটা ভলিউম কেমন হওয়া উচিত?’ এ ছাড়া ডেটা প্যাকেজের মেয়াদকাল কেমন হতে পারে, সেই বিষয়েও প্রশ্ন রয়েছে।

অপারেটররা জানায়, বারবার প্যাকেজে পরিবর্তন এলে অপারেটরদের নতুন করে প্যাকেজ সাজানো থেকে শুরু করে গ্রাহকের অভ্যস্ততার বিষয়টি রয়েছে। এটা যেমন অপারেটরদের জন্য ব্যয়সাপেক্ষ, তেমনি গ্রাহকও বিরক্ত হন, বাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে গ্রামীণফোনের হেড অব কমিউনিকেশনস শারফুদ্দিন আহমেদ চৌধুরী বলেন, ডেটা প্যাকেজ–সংক্রান্ত বিষয়ে বিটিআরসি কোনো আলোচনার উদ্যোগ নিলে তার ভিত্তিতে তাঁরা পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবেন।

রবি আজিয়াটার চিফ করপোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অফিসার সাহেদ আলম প্রথম আলোকে বলেন, ৩ দিনের প্যাকেজের বিষয়ে অপারেটরদের সুস্পষ্ট অবস্থান সত্ত্বেও এটি বন্ধ করার নেতিবাচক প্রভাব গ্রাহক ও ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের ওপর পড়েছিল। গ্রাহক ধীরে ধীরে সেই পরিবর্তনের সঙ্গে অভ্যস্ত হয়ে উঠেছেন। হঠাৎ করে আবার তিন দিনের প্যাকেজ পুনর্বহাল করা হলে তা কতটা গ্রাহকবান্ধব হবে, সেটা বিবেচনা করা দরকার।

বাংলালিংকের চিফ করপোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স অফিসার তাইমুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, বাজারে প্রতিযোগিতার পরিবেশ তৈরি করে এবং একইসঙ্গে গ্রাহকবান্ধব হয়, এমন কিছু বাংলালিংক সব সময় সমর্থন করে।

বিটিআরসির নতুন নির্দেশিকা জারির পর টানা চার মাস মুঠোফোনে ইন্টারনেট গ্রাহক কমেছিল। এমনকি গত ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত এক মাসের ব্যবধানে মুঠোফোনে ইন্টারনেট গ্রাহক কমেছিল ২১ লাখ ৯০ হাজার। কারণ হিসেবে অপারেটররা বলেছিলেন, বিটিআরসির ডেটা প্যাকেজ নির্দেশিকা, অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতা, শীত মৌসুমের প্রভাব, রাজনৈতিক পরিস্থিতির মতো বিষয়ের ভূমিকা ছিল।

বিটিআরসির তথ্য অনুযায়ী, গত ফেব্রুয়ারি থেকে আবার ইন্টারনেট গ্রাহক বাড়তে শুরু করে। এ সময় ১১ লাখের বেশি গ্রাহক বেড়েছে। দেশে এখন মোট ইন্টারনেট গ্রাহক ১৩ কোটির বেশি।