ভারতীয় আলোকচিত্রীর তোলা মুক্তিযুদ্ধের দুর্লভ ছবির প্রদর্শনী

বাংলাদেশের এক মুক্তিযোদ্ধাকে নিয়ে নিজের তোলা যুদ্ধদিনের ছবি দেখছেন ভারতীয় আলোকচিত্রী অভিজিৎ দাশগুপ্ত। আগারগাঁওয়ের মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের গ্যালারিতে
ছবি: তানভীর আহাম্মেদ

১৯৭১ সাল। ভারত থেকে বাংলাদেশে ঢুকে মাত্র সাত দিন থাকার অনুমতি পেয়েছিলেন অভিজিৎ দাশগুপ্ত। সে সময় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তিনি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ছবি তুলেছিলেন। সেসব ছবি আজ ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ দলিল। বিজয়ের মাসে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে সেসব ছবি নিয়ে আয়োজন করা হয়েছে প্রদর্শনী।

আজ রোববার মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে শুরু হয়েছে ভারতীয় আলোকচিত্রী অভিজিৎ দাশগুপ্তের একক আলোকচিত্র প্রদর্শনী ‘মুক্তিযুদ্ধের চিত্রলিপি’। এ ছবিগুলোর মধ্যে রয়েছে যুদ্ধকালীন ৫২টি আলোকচিত্র, ৬টি নথি ও ৫টি সংবাদপত্র।

বিকেলে প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন শহীদ-জায়া শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধ আমাদের শ্রেষ্ঠ সম্পদ। অভিজিৎ সেই মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কাজ করেছেন। বীর মুক্তিযোদ্ধারা অস্ত্র হাতে যুদ্ধ করেছেন। তিনি জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ভারত থেকে বাংলাদেশে এসেছেন সেই যুদ্ধের ছবি তুলতে। শাসকেরা লিখিত ইতিহাস বদলে ফেলতে পারে। কিন্তু ছবি বদলানো যায় না। ছবি হচ্ছে সবচেয়ে বড় প্রমাণ। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য এসব ছবি অনেক বড় সম্পদ। ছবিগুলো থেকে তারা নিজেদের দেশের ইতিহাস সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে পারবে।’

অভিজিতের আদি বাড়ি ছিল ঢাকার ওয়ারিতে। শৈশবে ঢাকার গল্প শুনতে শুনতে বড় হয়েছেন তিনি। সেসব স্মরণ করে অভিজিৎ দাশগুপ্ত বলেন, ‘১৯৭১ সালের ২৮ মার্চ আমি যশোর যাই। সেখান থেকে খুলনা, সেখান থেকে রাজশাহী। সে সময় যে মুক্তিযোদ্ধা আমাকে রাজশাহীর যুদ্ধক্ষেত্রে নিয়ে গিয়েছিলেন, সেই মোহাম্মদ আলী কামাল আজ এখানে উপস্থিত। কিছু না ভেবেই আমি ছবি তুলেছিলাম তখন। ভালো আর রঙিন ছবিগুলো প্যারিসের ফটো এজেন্সি গামা প্রেস নিয়ে গেছে। সেই প্রতিষ্ঠানও পরে বিক্রি হয়ে যায়। এখানে রয়েছে কিছু সাদা-কালো ছবি। এই ছবিগুলো নিয়ে প্রদর্শনী হতে পারে, সেটা আমার ভাবনায়ও ছিল না।’

প্রদর্শনীর ছবিগুলোকে পাঁচটি ভাগে সাজানো হয়েছে। সেখানে দেখা যাবে প্রতিরোধের সূচনাকাল, যখন যশোর ও রাজশাহীহগতে ছিলেন অভিজিৎ। এরপর তিনি তোলেন শরণার্থীদের দুর্গত জীবনের ছবি। এ ছাড়া দেখা যাবে চূড়ান্ত যুদ্ধ, বিজয় ও নবজীবনের অভিযাত্রার ছবি। সাদা-কালো সেসব ছবি দর্শককে নিয়ে যাবে মুক্তিযুদ্ধের রোমাঞ্চকর সেই সময়ে।

অনুষ্ঠানে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের অন্যতম ট্রাস্টি মফিদুল হক বলেন, ‘একাত্তরে বাংলাদেশের পরম সুহৃদ অভিজিৎ দাশগুপ্ত। তিনি যে তাগিদ থেকে ছবি সংগ্রহ করেছেন, সেই তাগিদ থেকেই প্রকাশ করেছিলেন “এক্সোডস ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দ”। এর একটি কপিই তাঁর সংগ্রহে ছিল। এটি জাদুঘরে দেওয়ার জন্য তাঁকে ধন্যবাদ।’ গামার প্রেসের কাছে থাকা অভিজিতের ছবিগুলো মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর সংগ্রহের চেষ্টা করবে বলে আশা প্রকাশ করেন মফিদুল হক।

প্রদর্শনীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের আর্কাইভ ও ডিসপ্লে শাখার কিউরেটর আমেনা খাতুন। শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন ভারতীয় হাইকমিশনের ইন্দিরা গান্ধী কালচারাল সেন্টারের পরিচালক মৃন্ময় চক্রবর্তী। প্রদর্শনী চলবে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত। রোববার বাদে প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত জাদুঘরের ৬ নম্বর গ্যালারিতে ছবিগুলো দেখে আসতে পারবেন যে কেউ।