যে বন্ধুরা জিপিএ-৫ পায়নি তাদের অবহেলা করা যাবে না

শিখো -প্রথম আলো কৃতী শিক্ষার্থী সংবর্ধনায় যোগ দেওয়া শিক্ষার্থীরা সেলফি তোলে মুহূর্তটাকে স্মৃতি করে রাখেন। শনিবার বেলা সাড়ে ১০টার দিকে যশোর সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয় প্রাঙ্গণেছবি: প্রথম আলো

জিপিএ-৫ পাওয়াটা শেষ কথা নয়। যারা জিপিএ–৫ পেয়ে আজ এখানে এসেছ, তাদের মধ্যে অনেকে শেষ পর্যন্ত সফল মানুষ নাও হতে পারে। আবার যারা জিপিএ–৫ পায়নি, তাদের মধ্যে অনেকে হয়তো চিকিৎসক, প্রকৌশলী বা অন্যান্য ক্ষেত্রে সফল মানুষ হবে। সুতরাং যে বন্ধুরা জিপিএ–৫ পায়নি, তাদের অবহেলা করা যাবে না। যশোর সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয় প্রাঙ্গণে ‘শিখো-প্রথম আলো জিপিএ-৫ সংবর্ধনা’ অনুষ্ঠানে বক্তারা এ কথা বলেন।

‘স্বপ্ন দেখো জীবন গড়ো’ স্লোগানে শিক্ষার ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম শিখোর পৃষ্ঠপোষকতায় ও প্রথম আলোর আয়োজনে সকাল ৯টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত আনন্দ–উল্লাসে মেতেছিল কৃতী শিক্ষার্থীরা। সকাল থেকেই জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে অনুষ্ঠানে আসতে শুরু করে শিক্ষার্থীরা। সংবর্ধনার নিবন্ধনের আমন্ত্রণ কার্ড হাতে নিয়ে সারিবদ্ধভাবে নির্ধারিত বুথ থেকে তারা ক্রেস্ট, স্ন্যাকসসহ উপহারসামগ্রী সংগ্রহ করে।

অনুষ্ঠানে অংশ নিতে নিবন্ধন করেছিল মোট ১ হাজার ৭৭৮ শিক্ষার্থী। সঙ্গে এসেছিলেন তাদের অভিভাবকেরাও। মুহূর্তেই অনুষ্ঠানস্থল পরিণত হয় উচ্ছ্বাসের মঞ্চে। গল্পগুজবে ব্যস্ত হয়ে পড়েন অনেকে, কেউবা ব্যস্ত সেলফি তোলায়।

সকাল থেকে থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছিল। ঘড়ির কাঁটায় তখন সকাল সাড়ে ১০টা। মঞ্চে হাজির হন উপস্থাপক ও বন্ধুসভার সভাপতি জাহিদুল ইসলাম (যাদু)। এরপর জিপিএ-৫ প্রাপ্ত কৃতী শিক্ষার্থী ও বন্ধুসভার সদস্যদের জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের মূল পর্ব শুরু হয়। উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনায় নিহত ব্যক্তিদের স্মরণে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করেন সবাই।

আলোচনার শুরুতে প্রথম আলোর যশোর প্রতিনিধি মনিরুল ইসলাম সত্য তথ্য জানতে প্রথম আলো পত্রিকা, প্রথম আলো অনলাইন, কিশোর আলো ও বিজ্ঞানচিন্তা সাময়িকীর পাশাপাশি ভালো বই পড়ার পরামর্শ দেন। সঙ্গে গণিত উৎসব, বিতর্ক উৎসব, তারুণ্যের জয় উৎসব, ফিজিক্স অলিম্পিয়াডসহ প্রথম আলোর বিভিন্ন কর্মকাণ্ড শিক্ষার্থীদের সামনে তুলে ধরেন। পাশাপাশি উপস্থিত শিক্ষার্থীদের ‘মিথ্যা, মাদক ও মুখস্থকে না বলি’ শপথ পাঠ করান।

শিখো–প্রথম আলো কৃতী সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে থিম সংয়ের সঙ্গে নৃত্য পরিবেশন করছে নৃত্য বিতানের শিল্পীরা
ছবি: প্রথম আলো

অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন প্রথম আলোর সহকারী সম্পাদক ফিরোজ চৌধুরী, যশোর সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নুরুল ইসলাম। সফল ব্যক্তিত্ব হিসেবে সংগ্রামের গল্প শোনান জাতীয় ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় সাইক্লিংয়ে নারীদের মধ্যে দেশসেরা প্রিয়া খাতুন। শিখোর দুজন প্রতিনিধি কামরুল হাসান শাহেদিন ও তাসফিকাল সামি মঞ্চে আলোচনা করেন এবং কুইজ প্রতিযোগিতার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মাতিয়ে রাখেন।

শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে সাইক্লিস্ট প্রিয়া খাতুন বলেন, ‘১১ বছর বয়সে আমি যখন গ্রামে সাইকেল চালাতাম, তখন অনেকে অনেক খারাপ কথা বলত। এখন এলাকার সবাই সমীহ করে। ‌এটাই আমার সাফল্য। আমি পরপর দুবার সাইকেল নিয়ে দেশসেরা হয়েছি। এর পেছনে আছে কঠোর অনুশীলন।’

যশোর সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নুরুল ইসলাম বলেন, ‘তোমরা মাধ্যমিকে জিপিএ–৫ পেয়ে হাল ছেড়ে দিলে হেরে যাবে। কঠিন অধ্যবসায় চালিয়ে যেতে হবে। তোমাদের যেসব বন্ধু জিপিএ–৫ পায়নি তারাও ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার হতে পারে। সুতরাং জিপিএ–৫ পাওয়াটা শেষ কথা নয়। তোমাদের ভালো মানুষ হতে হবে।’

ফিরোজ চৌধুরী বলেন, ‘আমি কোনো বক্তৃতা করছি না, শুধু একটা কথাই বলছি, তোমাদের লক্ষ্য স্থির করে সামনে এগিয়ে যেতে হবে। ভালো মানুষ হওয়ার শপথ নিতে হবে। তোমরাই বাংলাদেশ। তোমরা এমন একটি সোনালি বাংলাদেশ উপহার দেবে, যেখানে থাকবে ন্যায়বিচার ও দুর্নীতিমুক্ত সমাজ।’

অভিভাবকদের মধ্যে অনুভূতি প্রকাশ করেন মনিরামপুর সবুজ পল্লী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক রমজান আলী ও গৃহিণী মাবিয়া খাতুন (জলি)। শিক্ষার্থীদের মধ্যে দুজন অনুভূতি জানিয়ে বক্তব্য দেন।

সুধীজনদের আলোচনার ফাঁকে চলে বন্ধুসভার বন্ধু ও কৃতী শিক্ষার্থীদের সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। থিম সংয়ের সঙ্গে নৃত্য পরিবেশন করেন যশোরের সাংস্কৃতিক সংগঠন নৃত্য বিতানের শিল্পীরা। কৃতী শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংগীত পরিবেশন করেন দেশাত্মবোধক গানে জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত অঙ্কিতা সাহা, আলভি, আবরার প্রমুখ।

সংগীত পরিবেশন করেন চ্যানেল আইয়ের সেরা কণ্ঠ ইমরান খন্দকার। তাঁর গানে নেচে-গেয়ে আনন্দ প্রকাশ করে শিক্ষার্থীরা। অনুষ্ঠানের শেষের দিকে কুইজ বিজয়ী ১০ শিক্ষার্থীর হাতে পুরস্কার হিসেবে বই তুলে দেন অতিথিরা।

অনুষ্ঠানটি পাওয়ার্ড বাই কনকা-গ্রি, সহযোগিতায় ছিল কনকর্ড গ্রুপ, ফ্রেশ, বার্জার পেইন্টস, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, কোয়ালিটি গ্রুপ, প্রেসিডেন্সি ইউনিভার্সিটি, অতীশ দীপঙ্কর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, ইউসিএসআই ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ শাখা, আকিজ টেলিকম, আম্বার আইটি, এটিএন বাংলা ও প্রথম আলো বন্ধুসভা।