এমপিওভুক্ত শিক্ষক–কর্মচারীদের কালো পতাকা মিছিল, বিক্ষোভ সমাবেশ

এমপিওভুক্ত শিক্ষক–কর্মচারীদের কালো পতাকা মিছিলটি দোয়েল চত্বর হয়ে কদম ফোয়ারা চত্বরে আসে। আজ শনিবার দুপুরেছবি: প্রথম আলো

তিন দফা দাবিতে আন্দোলনরত বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্ত শিক্ষক–কর্মচারীরা কালো পতাকা মিছিল ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন।

আজ শনিবার দুপুর ১২টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে এমপিওভুক্ত শিক্ষক–কর্মচারীদের কালো পতাকা মিছিল শুরু হয়। মিছিলটি দোয়েল চত্বর হয়ে কদম ফোয়ারা চত্বরে আসে। সেখানে তাঁরা বিক্ষোভ সমাবেশ করেন। এতে হাজারো শিক্ষক–কর্মচারী অংশ নেন।

এ সময় তাঁরা ‘সি আর আবরার, আর নয় দরকার’, ‘রাজপথে কে রাজপথে কে, শিক্ষক শিক্ষক’, ‘ছাত্র–শিক্ষক–জনতা, গড়ে তোলো একতা’, ‘সারা বাংলার শিক্ষক, এক হও লড়াই করো’ প্রভৃতি স্লোগান দেন।

যে তিন দাবিতে এমপিওভুক্ত শিক্ষক–কর্মচারীরা আন্দোলন করছেন, সে তিনটি দাবি হলো—মূল বেতনের ২০ শতাংশ বাড়িভাড়া, ১ হাজার ৫০০ টাকা মেডিকেল ভাতা ও কর্মচারীদের উৎসব ভাতা ৭৫ শতাংশ করা।

কদম ফোয়ারায় আজ বিক্ষোভ সমাবেশে শিক্ষক–কর্মচারীদের আন্দোলনের প্রতি সংহতি প্রকাশ করে বক্তব্য দেন গণ অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান। তিনি বলেন, ‘শিক্ষকেরা কোনো দুর্নীতি করেন না, দুর্নীতি করে আমলারা। আমলাদের গাড়ি–বাড়িসহ যাবতীয় সুবিধা রয়েছে। আর শিক্ষকেরা সামান্য অধিকার আদায়ে প্রচণ্ড গরমে রাস্তায় আন্দোলন করছেন। এটা আমাদের জন্য লজ্জাজনক।’

গণ অধিকার পরিষদের অবস্থান তুলে ধরে রাশেদ খান বলেন, তাঁরা মনে করেন, আমলাদের চেয়ে শিক্ষকদের বেতন বেশি হওয়া উচিত। শিক্ষকদের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত গণ অধিকার পরিষদ তাঁদের পাশে থাকবে বলেও জানান তিনি।

রাশেদ খান বলেন, ‘আপনাদের সঙ্গে ওই সচিবালয় ঘেরাও করার জন্য আমরা প্রস্তুত আছি। আপনাদের দাবি আদায় করতে যদি যমুনা ঘেরাও করতে হয়, গণ অধিকার পরিষদ আপনাদের সব সহযোগিতা করবে।’

মিছিল শেষে কদম ফোয়ারা চত্বরে বিক্ষোভ সমাবেশ করেন এমপিওভুক্ত শিক্ষক–কর্মচারীরা। আজ দুপুরে
ছবি: প্রথম আলো

বিক্ষোভ সমাবেশে এমপিওভুক্ত শিক্ষা জাতীয়করণপ্রত্যাশী জোটের সদস্যসচিব দেলাওয়ার হোসেন আজিজী বলেন, ‘সরকারকে বেকায়দায় ফেলার কোনো চিন্তা আমাদের নেই। আমাদের কর্মসূচির ধরন দেখে আপনারা সেটা বুঝতে পারছেন। কিন্তু সরকারের প্রতি এই সহযোগিতাকে যদি দুর্বলতা মনে করা হয়, আর শিক্ষকেরা যদি বিদ্রোহী হয়ে ওঠেন, তাহলে প্রশাসনকে বলতে চাই, আপনার কোনো বাহিনী দিয়ে এটা নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন না।’

দেলাওয়ার হোসেন আজিজী আরও বলেন, তাঁরা মৃত্যুর শপথ নিয়ে শহীদ মিনারে এসেছেন। ২০ শতাংশ মানে, ২০ শতাংশ। ১ হাজার ৫০০ টাকা মানে, ১ হাজার ৫০০ টাকা। ৭৫ শতাংশ মানে, ৭৫ শতাংশ। কোনো টালবাহানা চলবে না।’

প্রশাসনের পক্ষ থেকে অভিযোগ তোলা হচ্ছে, বিগত সময়ে অনেক বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অর্থের বিনিময়ে এমপিওভুক্তি নিয়েছে। এ প্রসঙ্গে দেলাওয়ার হোসেন আজিজী বলেন, ‘যদি তারা টাকার মাধ্যমে এমপিওভুক্তি নেয়, তাহলে কোন কোন আমলা টাকা খেয়ে এই এমপিওভুক্তি দিয়েছেন, তাঁদের অবিলম্বে বের করে শাস্তির আওতায় আনতে হবে।’

আরও পড়ুন

গত রোববার থেকে শিক্ষক–কর্মচারীরা জাতীয় প্রেসক্লাব ও কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অবস্থান, সচিবালয় অভিমুখে লংমার্চ ও শাহবাগ মোড় অবরোধের মতো কর্মসূচি পালন করছেন। আন্দোলনকারীরা বলেন, দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত তাঁরা এই আন্দোলন চালিয়ে যাবেন। সর্বশেষ গতকাল শুক্রবার বেলা সোয়া দুইটায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে তাঁরা অনশন কর্মসূচি শুরু করেন। এতে অংশ নিয়েছেন শতাধিক শিক্ষক–কর্মচারী।

শিক্ষক–কর্মচারীরা হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অনশনের পাশাপাশি দাবি আদায় না হলে পরবর্তী সময় তাঁরা আমরণ অনশনে যাবেন। এ ছাড়া রাজধানীতে আন্দোলনের পাশাপাশি দেশজুড়ে বিভিন্ন বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে তাঁরা কর্মবিরতি পালন করছেন।

আরও পড়ুন