আদালতে আত্মসমর্পণ করেছেন সাংবাদিক শফিক রেহমান
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়কে অপহরণ ও হত্যাচেষ্টার ষড়যন্ত্রের মামলায় কারাদণ্ডপ্রাপ্ত সাংবাদিক শফিক রেহমান আদালতে আত্মসমর্পণ করেছেন।
ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতের অ্যাডিশনাল চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (এসিএমএম) মাহবুবুল হকের আদালতে আজ সোমবার সকালে তিনি আত্মসমর্পণ করেন। প্রথম আলোকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন শফিক রেহমানের আইনজীবী সৈয়দ জয়নুল আবেদীন।
আইনজীবী সৈয়দ জয়নুল আবেদীন প্রথম আলোকে বলেন, হয়রানিমূলক মামলায় সাংবাদিক শফিক রেহমান, দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমানসহ পাঁচজনের সাজা হয়। আজ সাংবাদিক শফিক রেহমান আদালতে আত্মসমর্পণ করেছেন। একই সঙ্গে তিনি সাজা পরোয়ানা বাতিলের আবেদন করেন। আদালত সেই আবেদন মঞ্জুর করেন।
আইনজীবী সৈয়দ জয়নুল আবেদীন আরও বলেন, সাংবাদিক শফিক রেহমানের সাজা এক বছরের জন্য স্থগিত করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। আজ শফিক রেহমান আত্মসমর্পণ করে রায়ের অনুলিপি পাওয়ার জন্য আবেদন করেছেন। রায়ের অনুলিপি পাওয়ার পর উচ্চ আদালতে আত্মসমর্পণ করে আপিল করবেন সাংবাদিক শফিক রেহমান।
গতকাল রোববার একই মামলায় আদালতে আত্মসমর্পণ করেন দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমান। পরে তাঁকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন আদালত।
গত বছরের ১৭ আগস্ট সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে এবং তাঁর তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়কে অপহরণ ও হত্যাচেষ্টার ষড়যন্ত্রের মামলায় সাংবাদিক শফিক রেহমানসহ পাঁচজনকে সাত বছরের কারাদণ্ড দেন আদালত।
কারাদণ্ডপ্রাপ্ত অন্য চারজন হলেন আমার দেশ পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমান, জাতীয়তাবাদী সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংস্থার (জাসাস) সহসভাপতি মোহাম্মদ উল্লাহ মামুন, তাঁর ছেলে রিজভী আহাম্মেদ ওরফে সিজার এবং যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী ব্যবসায়ী মিজানুর রহমান ভূঁইয়া।
সজীব ওয়াজেদ জয়কে অপহরণ ও হত্যাচেষ্টার ষড়যন্ত্রের অভিযোগ এনে গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) পরিদর্শক ফজলুর রহমান ২০১৫ সালের ৩ আগস্ট পল্টন থানায় মামলা করেন।
মামলার এজাহারে বলা হয়, ২০১১ সালের সেপ্টেম্বরের আগে যেকোনো সময় জাসাস নেতা মোহাম্মদ উল্লাহসহ বিএনপি ও বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোটভুক্ত দলের উচ্চপর্যায়ের নেতারা ঢাকা শহরের পল্টনে জাসাস কার্যালয়ে এবং যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক শহর ও যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন এলাকায় আসামিরা একত্র হয়ে বৈঠকে অংশ নেন। তাঁরা সজীব ওয়াজেদ জয়কে যুক্তরাষ্ট্রে অপহরণ করে হত্যার ষড়যন্ত্র করেছিলেন। অপরাধ ঘটানোর দায়িত্ব দেওয়া হয় রিজভী আহাম্মদকে।
এই মামলায় ২০১৮ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি শফিক রেহমানসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। বিচার চেয়ে ২০২২ সালের ১৩ নভেম্বর ঢাকার আদালতে সাক্ষ্য দেন সজীব ওয়াজেদ জয়।
মামলায় সজীব ওয়াজেদ জয়কে অপহরণ করে হত্যাচেষ্টা ষড়যন্ত্রের নির্দেশদাতা হিসেবে শফিক রেহমান ও মাহমুদুর রহমানের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়। আর আসামি মোহাম্মদ উল্লাহর বিরুদ্ধে পরামর্শদাতার অভিযোগ আনে পুলিশ। আর তাঁর ছেলে রিজভী আহাম্মেদ এই ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নের দায়িত্ব নিয়েছিলেন বলে অভিযোগে বলা হয়। রিজভী যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা এফবিআইয়ের কাছ থেকে সজীব ওয়াজেদের ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ করেন। পরে অন্য আসামিদের কাছে সেই তথ্য সরবরাহ করেন। মামলায় অর্থায়ন ও পরামর্শদাতার অভিযোগ আনা হয় যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে।
মামলার অভিযোগে বলা হয়, সজীব ওয়াজেদ জয়কে অপহরণ ও হত্যার পরিকল্পনা হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে। সেখানেও এ-সংক্রান্ত মামলার বিচার হয়। ২০১৫ সালের মার্চ মাসে দেওয়া ওই রায়ে রিজভী আহাম্মেদ সিজারের ৪২ মাসের কারাদণ্ড হয়। এ ছাড়া ঘুষ লেনদেনের জন্য এক এফবিআই এজেন্টের বন্ধুর ৩০ মাসের কারাদণ্ড হয়।