লিঙ্গ সংবেদনশীলতা, সমন্বয় নিয়ে ছায়ানটে সিনেমার উৎসব

চলচ্চিত্র উৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আয়োজক ও অতিথিরা
ছবি: প্রথম আলো

বাছাই করা হয়েছে সে রকম কিছু সিনেমা, যেগুলোতে বলা হয়েছে লিঙ্গ সংবেদনশীলতা, নারী–পুরুষের সমন্বয় ও পরস্পরের প্রতি সহানুভূতির গল্প। দেশ–বিদেশের এ রকম বেশ কিছু পূর্ণদৈর্ঘ্য, স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ও তথ্যচিত্র নিয়ে ঢাকায় শুরু হয়েছে দুই দিনের ‘সমভাব ভ্রাম্যমাণ আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব’।

আজ রোববার সকালে ছায়ানট ভবন মিলনায়তনে শুরু হয়েছে এই উৎসব। নেপাল ও ভারতের কয়েকটি প্রদেশের পর আজ বাংলাদেশে উৎসবের উদ্বোধন করা হয়। প্রধান অতিথি হিসেবে উৎসব উদ্বোধন করেন চলচ্চিত্রকার শামীম আখতার। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের প্রধান বুশরা সুলতানা, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্র্যাক জেমস পি গ্র্যান্ট স্কুল অব পাবলিক হেলথের শিক্ষক সাবিনা ফাইজ রাশেদ ও সমভাব চলচ্চিত্র উৎসবের পরিচালক হারিস সাদানি।

সাবিনা ফাইজ রাশেদ বলেন, ‘লিঙ্গপরিচয় এবং অভিব্যক্তির মতো বিষয়গুলো নিয়ে এখন কেবল প্রচলিত প্ল্যাটফর্মে আলোচনা করা হয়। আমি বিশ্বাস করি লিঙ্গপরিচয়, অভিব্যক্তি এবং যৌনতার মতো বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনার জন্য সমভাব ভ্রাম্যমাণ চলচ্চিত্র উৎসবের মতো আরও সৃজনশীল মাধ্যম থাকা উচিত। সমাজের মূলধারায় এ নিয়ে কথোপকথন শুরু হওয়া দরকার।’

বুশরা সুলতানা বলেন, সহিংসতার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে পুরুষদের অন্তর্ভুক্ত করা জরুরি। সহিংসতা সেই অস্ত্র, যা শ্রেণি, লিঙ্গ, ধর্ম ও জাতির বিরুদ্ধে ব্যবহৃত হয়। তাই সহিংসতা মোকাবিলা এখন আর কেবল নারীর একার কাজ নয়।

হারিস সাদানি মনে করেন, সমস্যার অংশ যারা, সমস্যাটির সমাধানে তাদের যুক্ত করতে হবে। কারণ, তারাই সমাজের সুবিধাপ্রাপ্ত ও ক্ষমতাবান অংশ। আর এর প্রথম ধাপ হতে পারে এসব নিয়ে সংলাপ, সবার সঙ্গে সবার কথা বলার পরিবেশ তৈরি করা। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন মানবাধিকারকর্মী খুশী কবির।

উৎসব উদ্বোধনের পর দেখানো হয় হিন্দি ভাষার ছবি ‘নাটখত’। একটি শিশু কীভাবে ঘর, স্কুল ও পারিপার্শ্বিক পরিবেশ থেকে নারীর প্রতি অবমাননাকর আচরণ শেখে, তা নিয়েই এই সিনেমা। অন্যদিকে অভিনেত্রী বিদ্যা বালানকে দেখা যায় একজন আলোকিত মায়ের ভূমিকায়, যিনি শিশুপুত্রকে প্রথাগত পিতৃতান্ত্রিক মানসিকতা থেকে বের করে আনতে চেষ্টা করেন। প্রদর্শনীর পর ছিল ছবির বিষয়বস্তু ও নারীর প্রতি অবমাননার প্রতিকার নিয়ে ছিল উন্মুক্ত আলোচনা। সেখানে নিজেদের অভিজ্ঞতা ভাগাভাগি করেন বেশ কয়েকজন নারী। শিশুদের শৈশবকে এ ধরনের দূষণের সংস্কৃতি থেকে কীভাবে বের করে আনা যায়, তা নিয়েও কথা বলেন কেউ কেউ।

চলচ্চিত্র প্রদর্শনীর তালিকায় আজ রোববার ছিল ‘আন্ডারকনস্ট্রাকশন’, ‘মাইদা’, ‘দ্য লিটল গডেজ’, ‘তুলনি বাই’, ‘আনটায়িং দ্য নট’ ছবিগুলো। প্রতিটি প্রদর্শনীর পর ছিল মুক্ত আলোচনা। কাল সোমবার সকাল ১০টা থেকে দেখানো হবে ‘ভাপ’, ‘ব্ল্যাক রোজেজ অ্যান্ড রেড ড্রেসেস’, ‘ডার্লিং’, ‘হৃদয়ে বসত’, ‘মাই মাদার্স গার্লফ্রেন্ড’, ‘সানডে’, ‘দ্য গ্রেট ইন্ডিয়ান কিচেন’ ছবিগুলো এবং থাকবে মুক্ত আলোচনা। চলচ্চিত্রগুলো দেখানো হচ্ছে বিনা মূল্যে।

করোনাকাল পারিবারিক সহিংসতা উদ্বেগজনকভাবে বৃদ্ধি পায়। একেও একধরনের মহামারি হিসেবে উল্লেখ করেন চলচ্চিত্র উৎসবের আয়োজকেরা। তাই লিঙ্গ সংবেদনশীলতা, নারী-পুরুষের সম্পৃক্ততা, পরস্পরের প্রতি সহানুভূতিশীলতাকে সময়ের জন্য জরুরি মনে করেন তাঁরা। সেই বিবেচনায় আয়োজন করা হয়েছে লিঙ্গবৈচিত্র্য সম্পৃক্ততাকে উদ্বুদ্ধ করার এই উৎসব। আয়োজকদের আশা, এই সিনেমাগুলো সাংস্কৃতিকভাবে চাপিয়ে দেওয়া নারীবিদ্বেষ, ক্ষতিকর পুরুষতান্ত্রিক আচরণ, পিতৃতন্ত্রের নানাবিধ সামাজিক নিয়মের বিরুদ্ধে আলোচনা ও সবাইকে নিয়ে মিলেমিশে থাকার চর্চাকে উদ্দীপ্ত করবে।