প্রকল্প শেষ জুনে, এখনো বসেনি কেজিডিসিএলের ৪২ হাজার মিটার

এক লাখ প্রিপেইড মিটার বসালে মাসে ১৫ লাখ ঘনমিটার গ্যাস সাশ্রয় হবে। এতে সাশ্রয় মাসে ২ কোটি ৭০ লাখ টাকা।

প্রিপেইড স্মার্ট মিটারপ্রতীকী ছবি

গ্যাসের অপচয় কমানো ও আবাসিক গ্রাহকদের অতিরিক্ত ব্যয় থেকে রক্ষা করতে এক লাখ প্রিপেইড মিটার স্থাপনের প্রকল্প নিয়েছিল কর্ণফুলী গ্যাস বিতরণ কোম্পানি লিমিটেড (কেজিডিসিএল)। প্রকল্পটির মেয়াদ আগামী জুনে শেষ হচ্ছে। অথচ এখনো ৪২ হাজার মিটার বসানো বাকি রয়েছে। প্রচারণার ঘাটতিতে গ্রাহকেরা মিটার নিতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না।

এক লাখ প্রিপেইড মিটার স্থাপনের এ প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয় ২০২১ সালের ১৮ মে। গৃহস্থালি বা আবাসিক সংযোগে প্রিপেইড মিটার স্থাপনের জন্য ওই প্রকল্প নেওয়া হয়। ২০২৩ সালের জুনে প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। এতে ব্যয় ধরা হয়েছিল ২৪১ কোটি ৬১ লাখ টাকা। তবে নির্ধারিত মেয়াদে প্রকল্পের কাজ শুরুই হয়নি। পরে দুই বছরের মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়। এতে ব্যয় বাড়ে ৫০ কোটি টাকা। এখন বাকি ছয় মাসে ৪২ হাজার মিটার বসানো নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।

শুধু পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি বা মুঠোফোনে খুদে বার্তা পাঠিয়ে দায় সেরেছে কেজিডিসিএল। মিটার স্থাপনে খরচ, রিচার্জের পদ্ধতি ও সহজে রিচার্জের বিষয়গুলো গ্রাহকদের স্পষ্ট করে জানানো হয়নি।
এস এম নাজের হোসাইন, সহসভাপতি, ক্যাব

কেজিডিসিএল সূত্র জানায়, ২০২২ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি থেকে প্রিপেইড মিটার বসানোর আবেদন নেওয়া শুরু করে কেজিডিসিএল। এখন পর্যন্ত ১ লাখ ২০ হাজার আবেদন জমা পড়েছে। মিটার বসানোর কার্যক্রম শুরু হয় গত বছরের ১৬ জানুয়ারি। এখন পর্যন্ত ৫৭ হাজার ৮০০টি বসেছে। বাকি গ্রাহকেরা আবেদন করেও মিটার নিচ্ছেন না। তবে গণমাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে মিটার বসাতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে কেজিডিসিএল। পাঠানো হয়েছে খুদে বার্তা।

এ বিষয়ে প্রকল্প পরিচালক মো. নাহিদ আলম প্রথম আলোকে বলেন, গ্রাহককে মিটারটি বিনা মূল্যে দেওয়া হচ্ছে। তবে মিটার বসাতে রাইজার থেকে রান্নাঘর পর্যন্ত একটি পাইপলাইন বসাতে হবে। এতে প্রতিটি চুলার জন্য পাঁচ থেকে সাত হাজার টাকা গ্রাহককেই খরচ করতে হবে, কিন্তু টাকা খরচ করতে ইচ্ছুক নন গ্রাহকেরা। আবার অনেকেই মনে করছেন, মিটার বসালে ইচ্ছামতো গ্যাস ব্যবহার করতে পারবেন না। মূলত এসব কারণে মিটার বসানো যাচ্ছে না। তবে মিটার স্থাপন না করলে ধাপে ধাপে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হবে বলে জানান প্রকল্প পরিচালক।

প্রিপেইড মিটার চট্টগ্রামে নতুন নয়। এর আগে ২০১৫ সালে জাইকার অর্থায়নে ২৪৭ কোটি টাকা ব্যয়ে ৬০ হাজার সংযোগে প্রিপেইড মিটার স্থাপন করা হয়। প্রিপেইড মিটার ব্যবহার করছেন এমন পাঁচজন গ্রাহক প্রথম আলোকে বলেন, তুলনামূলক খরচ কম হচ্ছে।

কেজিডিসিএলের মোট গ্রাহক সংযোগ রয়েছে ৬ লাখ ১ হাজার ৯১৪টি। এর মধ্যে গৃহস্থালি সংযোগ আছে ৫ লাখ ৯৭ হাজার ৫৬১টি, বাকিগুলো শিল্প-বাণিজ্যসহ অন্য খাতে। চট্টগ্রামে গ্যাসের চাহিদা প্রায় ৩২ কোটি ঘনফুট। ১ লাখ প্রিপেইড মিটার বসালে মাসে ১৫ লাখ ঘনমিটার গ্যাস সাশ্রয় হবে। এতে আর্থিক সাশ্রয় মাসে ২ কোটি ৭০ লাখ টাকা।

কেন মিটার বসাচ্ছেন না গ্রাহকেরা

আবেদন করেও এখনো মিটার না নেওয়া ১০ গ্রাহকের সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। তাঁদের একজন মো. জসিম উদ্দিন। নগরের চকবাজার এলাকায় তাঁর দোতলা বাড়ি। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর বাড়িতে আটটি চুলা রয়েছে। মিটার বসানোর বিষয় নিয়ে ভাড়াটেদের সঙ্গে আলোচনা করেছেন তিনি। বিল বেশি আসতে পারে, এমন আশঙ্কায় কেউ মিটার ব্যবহারে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। আরেক গ্রাহক ফয়েজ আহমদ বলেন, মিটার স্থাপন ও রিচার্জের পুরো প্রক্রিয়া সম্পর্কে তিনি অবগত নন।

মিটার স্থাপন প্রকল্প নিয়ে শুরু থেকেই প্রচার-প্রচারণার ঘাটতি ছিল বলে মনে করেন ক্রেতা-ভোক্তাদের স্বার্থ সংরক্ষণকারী জাতীয় প্রতিষ্ঠান কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সহসভাপতি এস এম নাজের হোসাইন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, শুধু পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি বা মুঠোফোনে খুদে বার্তা পাঠিয়ে দায় সেরেছে কেজিডিসিএল। মিটার স্থাপনে খরচ, রিচার্জের পদ্ধতি ও সহজে রিচার্জের বিষয়গুলো গ্রাহকদের স্পষ্ট করে জানানো হয়নি।