দেশে প্রতিবন্ধিতার হার ৮ শতাংশ: সমীক্ষা

দেশে বর্তমানে প্রতিবন্ধিতার হার ৮ শতাংশ। পুরুষদের মধ্যে এই হার ৭ শতাংশ। নারীদের মধ্যে প্রতিবন্ধিতার হার পুরুষদের চেয়ে বেশি, ৯ শতাংশ। আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র বাংলাদেশ (আইসিডিডিআরবি) ও বাংলাদেশ সোসাইটি ফর দ্য চেঞ্জ অ্যান্ড অ্যাডভোকেসি নেক্সাসের (বি-স্ক্যান) যৌথ আয়োজনে প্রকাশিত এক সমীক্ষার ফলাফলে এ চিত্র উঠে এসেছে।

শনিবার রাজধানীর ডেইলি স্টার সেন্টারে ‘দেশব্যাপী প্রতিবন্ধী ও বয়স্ক ব্যক্তিদের নিরাপদ পানি, পয়োনিষ্কাশন ও স্বাস্থ্যবিধিবিষয়ক সমীক্ষার ফলাফল উপস্থাপন’ শীর্ষক এক গোলটেবিল বৈঠকে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়। ২০২২ সালের নভেম্বর থেকে ২০২৩ সালের অক্টোবর পর্যন্ত দেশের ৮টি বিভাগের ৩২টি জেলায় এই সমীক্ষা কার্যক্রম চালানো হয়েছে।

বাংলাদেশ, কেনিয়া, ইন্দোনেশিয়া ও জাম্বিয়ায় বাস্তবায়ন করা এক বৈশ্বিক কর্মসূচির অংশ হিসেবে এই গবেষণা করা হয়েছে। কর্মসূচিটি লন্ডন স্কুল অব হাইজিন অ্যান্ড ট্রপিক্যাল মেডিসিনের প্রোগ্রাম ফর এভিডেন্স টু ইনফরমেশন ডিজঅ্যাবিলিটি অ্যাকশন (পিইএনডিএ), এফসিডিও ও আইসিডিডিআরবির আর্থিক ও কারিগরি সহযোগিতায় বাংলাদেশের বাস্তবায়ন করেছে বি-স্ক্যান।

গবেষণায় প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের শনাক্ত করতে শহর ও গ্রামের ৬ হাজার ৪৫৭ পরিবারের ১৭ হাজার ৫৭৭ জনকে স্ক্রিনিং করা হয়েছে। গবেষণায় দেখা গেছে, ৫৯ বছর কিংবা এর চেয়ে কম বয়সীদের প্রতিবন্ধিতার হারের (৫ দশমিক ২ শতাংশ) তুলনায় ৭০ বছর বা এর চেয়ে বেশি বয়সীদের মধ্যে প্রতিবন্ধিতার হার (৪৭ শতাংশ) উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি।

প্রতিবন্ধী ও বয়স্ক ব্যক্তিদের পয়োনিষ্কাশনবিষয়ক সমস্যা এবং সম্ভাব্য সমাধান চিহ্নিত করতে ২ হাজার ৩৭৮ জন প্রতিবন্ধী ও স্বাভাবিক ব্যক্তি নিয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ জরিপ চালানো হয় গবেষণায়। দেখা যায়, জরিপে অংশ নেওয়া ৪৮ শতাংশ ব্যক্তি জানিয়েছেন, তাঁরা পানি সংগ্রহে অসুবিধার মুখে পড়েন। ১৪ শতাংশ বাড়িতে নিজে পানি নিয়ে খেতে পারেন না। এর কারণ হিসেবে ৯০ শতাংশের বেশি ব্যক্তি শারীরিক সীমাবদ্ধতার কথা উল্লেখ করেছেন। ১৬ শতাংশ অন্যের ওপর নির্ভরশীলতার কথা বলেছেন।

জরিপে অংশ নেওয়া ৭৭ শতাংশ পরিবারে মৌলিক পয়োনিষ্কাশন সুবিধা রয়েছে। তবে এসব পরিবারের বেশি ভাগেরই অবকাঠামোগত প্রতিবন্ধীবান্ধব বৈশিষ্ট্যের অভাব রয়েছে। যেমন ৯৭ শতাংশ পরিবারে হুইলচেয়ার-বান্ধব প্রবেশপথের অভাব, ৯৭ শতাংশ পরিবারে উচ্চতা-সামঞ্জস্যপূর্ণ প্যান বা কমোডের অভাব এবং ৭৪ শতাংশ পরিবারে পানি ও হাত ধোয়ার সামগ্রীর সহজ প্রাপ্যতার অভাব রয়েছে। ফলে প্রায় ২৫ ভাগ প্রতিবন্ধী এবং বয়স্ক ব্যক্তি শৌচাগার ব্যবহারের সময় মলমূত্রের সংস্পর্শে আসেন।

এই গবেষণার ফল দেশের প্রেক্ষাপটে প্রতিবন্ধী ও বয়স্ক ব্যক্তিদের নিরাপদ পানি, পয়োনিষ্কাশন ও স্বাস্থ্যবিধিবিষয়ক সুযোগ প্রাপ্তির ক্ষেত্রে সামগ্রিক দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তনের পক্ষে কাজ করবে বলে মনে করেন আইসিডিডিআরবির সহযোগী বিজ্ঞানী মাহবুব উল আলম। তিনি বলেন, এই গবেষণা শুধু অবকাঠামোগত পরিবর্তনই নয়, বয়স্ক ব্যক্তিদের বিভিন্ন প্রয়োজন ও বাধা মোকাবিলা করে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক পরিবেশ তৈরিতে সার্বিক সহায়তা করবে।