এনআইডি সেবা স্বরাষ্ট্রে নিতে বিল উত্থাপন

জাতীয় সংসদ ভবন
ফাইল ছবি

জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) নিবন্ধন ও এ-সংক্রান্ত সেবা নির্বাচন কমিশন থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীন নিতে একটি বিল সংসদে তোলা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, জাতীয় পরিচয়পত্র দেওয়ার জন্য একজন ‘নিবন্ধক’ থাকবেন। সরকার তাঁকে নিয়োগ দেবে।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান গতকাল সোমবার জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন বিল-২০২৩ সংসদে তোলেন। পরে বিলটি পরীক্ষা করে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়। ২০১০ সালের জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন আইন রহিত করে নতুন এই আইন করা হচ্ছে।

এখন এনআইডি দিয়ে থাকে নির্বাচন কমিশন। নতুন আইনটি কার্যকর হলে ইসি সে ক্ষমতা হারাবে। বিলে বলা হয়েছে, বিদ্যমান আইনটি রহিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নির্বাচন কমিশনের কাছে রক্ষিত এবং নির্বাচন কমিশনে সংগৃহীত জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন ও জাতীয় পরিচয়পত্র-সংক্রান্ত সব তথ্য-উপাত্ত নিবন্ধকের কাছে হস্তান্তরিত হবে।

বিলটি উত্থাপনের বিরোধিতা করে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য ফখরুল ইমাম বলেন, শুরু থেকে জাতীয় পরিচয়পত্রের কাজ নির্বাচন কমিশন করেছে। তাদের কাঠামো, স্থাপনা আছে। কী কারণে এটা সরকার নেবে। তিনি প্রশ্ন রাখেন, তাহলে নির্বাচন কমিশন কিসের ভিত্তিতে নির্বাচন করবে? তালিকা যদি সরকার করে দেয়, জনগণ কি তা মানবে?

জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, ভোটার তালিকা থেকে একটি জাতীয় পরিচয়পত্র দেওয়া হয়েছিল। ১৮ বছর বয়স থেকে তা কার্যকর হচ্ছিল। কিন্তু এখন যে শিশুটি জন্মগ্রহণ করবে, জন্মের দিন থেকেই একটি পরিচয়পত্রের নম্বর তার হয়ে যাবে। যেদিন সে মারা যাবে, সেদিন নম্বরটির সমাপ্তি ঘটবে। এটাই সরকারের উদ্দেশ্য।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ভোটার তালিকার ক্ষেত্রে এই আইন কোনো বাধা হবে না। যখন নাগরিকের বয়স ১৮ বছর হয়ে যাবে, তখনই তিনি ভোটার হয়ে গেছেন বলে নোটিশ পেয়ে যাবেন। তাঁর নাম ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে।

বিলে বলা হয়েছে, জাতীয় পরিচয়পত্র পাওয়ার জন্য প্রত্যেক নাগরিককে পরিচয় নিবন্ধন করতে হবে। এ জন্য নির্ধারিত পদ্ধতিতে নিবন্ধকের কাছে আবেদন করতে হবে। একজন নাগরিককে নিবন্ধক একটি নম্বর দেবেন। সেটা একক পরিচিতি নম্বর (ইউনিক আইডেন্টিফিকেশন নম্বর) হিসেবে সবখানে ব্যবহৃত হবে।

বিলে বলা হয়েছে, নির্বাচন কমিশনের চাহিদা মোতাবেক নিবন্ধক প্রয়োজনীয় তথ্য-উপাত্ত প্রদান করবে। এ জন্য নিবন্ধকের কার্যালয়ের অধীন একটি সেল থাকবে। এই সেলে নির্বাচন কমিশনের এক বা একাধিক কর্মচারী দায়িত্ব পালন করবেন।

বিলে বলা হয়েছে, নিবন্ধন কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা, সমন্বয় ও পরিবীক্ষণের জন্য একটি সমন্বয় কমিটি থাকবে। এই কমিটির সভাপতি হবেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিব। নিবন্ধক হবেন এই কমিটির সদস্যসচিব। নির্বাচন কমিশন এবং সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের প্রতিনিধিরা থাকবেন সদস্য।

বিলের উদ্দেশ্য ও কারণসংবলিত বিবৃতিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন কার্যক্রম নির্বাহী বিভাগের দায়িত্বের অন্তর্ভুক্ত হওয়ার বিভিন্ন দেশের উদাহরণের আলোকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীন সুরক্ষা সেবা বিভাগ এই দায়িত্ব পালনে উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ। তাই সুরক্ষা সেবা বিভাগের মাধ্যমে এই সেবা জনগণের কাছে পৌঁছে দেওয়ার উদ্দেশ্যে বিদ্যমান আইনটি সংশোধন করা প্রয়োজন।