সরকারেরই একটা অংশ পার্বত্য চুক্তির বাস্তবায়ন চায় না: ঊষাতন তালুকদার

অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে আজ শুক্রবার দুপুরে সমাবেশ করে পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ
ছবি: প্রথম আলো

পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড়ের মানুষকে ‘জীবজন্তুর’ মতো ব্যবহার করে পার পাওয়া যাবে না বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন সাবেক সংসদ সদস্য ও পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির কেন্দ্রীয় সহসভাপতি ঊষাতন তালুকদার।

পাহাড়ের কিছু সংগঠনকে ব্যবহার করে পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করে ঊষাতন তালুকদার আরও বলেন, ‘আসলে সরকারেরই একটা অংশ চায় না, পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়ন হোক। শর্ষের ভেতরে ভূত থাকলে সেই ভূত তাড়াবে কে?’

আজ শুক্রবার দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে এক সমাবেশে অংশ নিয়ে ঊষাতন তালুকদার এসব কথা বলেন।

দ্রুত পথনকশা ঘোষণা করে পার্বত্য চুক্তির যথাযথ ও দ্রুত বাস্তবায়নের দাবিতে পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের ঢাকা মহানগর শাখার ব্যানারে এ সমাবেশের আয়োজন করা হয়। এর আগে সকালে শাহবাগ থেকে মিছিল নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনে সমাবেশ করতে যান পরিষদের নেতা-কর্মীরা। অবশ্য পরে স্থান পরিবর্তন করে সমাবেশ করা হয় অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে।

সমাবেশে জনসংহতি সমিতির নেতা ঊষাতন তালুকদার বলেন, কিছুদিনের মধ্যেই পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তির রজতজয়ন্তী (২৫ বছর) পূর্ণ হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থাকাকালে ১৯৯৭ সালে চুক্তিটি করেছিলেন। তাঁর সরকার এখনো ক্ষমতায়। পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়ন করা আওয়ামী লীগ সরকারের একটা নৈতিক দায়িত্ব। এই চুক্তি কোনো চুরি করে করা চুক্তি নয়, পাহাড়ে থাকা বাঙালি জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে কোনো ষড়যন্ত্রও নয়। পাহাড়ের সমস্যাকে রাজনৈতিক ও শান্তিপূর্ণভাবে সমাধানের জন্য এই চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল।

ঊষাতন তালুকদার বলেন, ‘সরকার বলছে, তারা পার্বত্য চুক্তির ৪৮ ভাগ বাস্তবায়ন করেছে। আমি বলতে চাই, যে চেতনায়, যে পরিপ্রেক্ষিতে পার্বত্য চুক্তি হয়েছিল, তার মৌলিক বিষয়গুলো এখনো বাস্তবায়িত হয়নি।’

শেখ হাসিনার প্রতি আমাদের দল ও নেতা সন্তু লারমার আস্থা ও বিশ্বাস ছিল বলে কোনো তৃতীয় পক্ষ ছাড়াই তৎকালীন সরকার ও জনসংহতি সমিতির মধ্যে পার্বত্য চুক্তি হয়েছিল বলে উল্লেখ করেন ঊষাতন তালুকদার। তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘কিন্তু এখনো ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর জমি দখল, উচ্ছেদ, ফসল নষ্ট ও পানিতে বিষ প্রয়োগ করা হচ্ছে। সরকার কোথায়? আমরা কী? আমাদের নিজেদের জীবজন্তুর চেয়েও অধম বলে মনে হচ্ছে।’

জনসংহতি সমিতির এই নেতা সরকারের উদ্দেশে বলেন, ‘পাহাড়ের মানুষ শান্তিপ্রিয়। তাঁদের ঠিকভাবে পরিচালনা করতে পারলে হাজার অস্ত্র থাকলেও তা তাঁরা জমা দিয়ে দেবেন। কিন্তু আপনারা ভুল পথে হাঁটছেন। পাহাড়ের মানুষকে নেতিবাচকভাবে দেখবেন না। তাঁদের কেউ স্বাধীনতার লড়াই করছে না। দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব মেনে নিয়েই আমরা শান্তিচুক্তি করেছিলাম। সন্তু লারমা বাংলাদেশের প্রতি অনুগত ও একজন দেশপ্রেমিক।’

সমাবেশে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সাধারণ সম্পাদক নিপুণ ত্রিপুরা বলেন, ‘পার্বত্য চুক্তি যাদের বাস্তবায়ন করার কথা, সেই সরকার চুক্তির কথা ভুলেই গেছে। চুক্তির অধীন স্থানীয় মানুষদের ভোটার তালিকা করে তিন জেলা পরিষদের নির্বাচন দেওয়া ও পরে আঞ্চলিক পরিষদের নির্বাচনের ব্যবস্থা করা, ভূমি সমস্যা সমাধানে ভূমি কমিশন গঠন করার মতো মৌলিক বিষয়গুলো এখনো কার্যকর হয়নি। ভূমি কমিশন গঠিত হলেও সেটি পরিচালনার বিধিমালাকে সরকার সেই যে ডিপ ফ্রিজে রেখে দিয়েছে, তা আর খুলে দেখেনি।’

নিপুণ ত্রিপুরা বলেন, ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে অস্থায়ী সেনা ক্যাম্প প্রত্যাহারের কথা থাকলেও আজ অবধি সেখানে কয়েক শ সেনা ক্যাম্প রয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রামে মানবাধিকার লঙ্ঘন বেড়েই চলেছে। সরকার দাবি করছে, চুক্তির বেশির ভাগ বাস্তবায়ন হয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রামে সমস্যা তাহলে কেন মিটছে না? আমরা পার্বত্য চুক্তির পূর্ণাঙ্গ ও যথাযথ বাস্তবায়ন চাই।’

সমাবেশে সংহতি জানিয়ে বক্তব্য দেন ছাত্র ইউনিয়নের একাংশের সাধারণ সম্পাদক দীপক শীল। তিনি বলেন, ‘পাহাড়কে সরকার মিনি ক্যান্টনমেন্ট করে রেখেছে; যেখানে সেনাশাসিত সরকার চলে। পাহাড়ে প্রতিনিয়ত ভূমি দখল ও নারী নির্যাতন হয়। আজ দেশের কোনো সেক্টর ভালো নেই। সব জায়গায় চলছে নির্যাতন-নিপীড়ন। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে জনগণের নাভিশ্বাস উঠেছে। দেশে কথা বলার স্বাধীনতা নেই। এই স্বাধীনতা আমরা চাইনি। বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে আমাদের সমান তালে লড়াই করতে হবে।’

পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের ঢাকা মহানগর শাখার সভাপতি রেং ইয়ং ম্রোর সভাপতিত্বে সমাবেশে অন্যদের মধ্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির স্টাফ সদস্য চঞ্চনা চাকমা, আদিবাসী ছাত্রসংগ্রাম পরিষদের সভাপতি অলীক মৃ, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের (বাসদ) সাধারণ সম্পাদক শোভন রহমান, আদিবাসী যুব ফোরামের দপ্তর সম্পাদক মনিরা ত্রিপুরা প্রমুখ বক্তব্য দেন।