বিতর্কচর্চা মানুষকে মানবিক হয়ে গড়ে উঠতে সহায়তা করে। বিতর্কচর্চা মানুষকে যুক্তিবাদী হতে শেখায়। যুক্তিবাদী মানুষ সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় কোনো ভুল করে না। তর্কবিতর্ক ও যুক্তি খণ্ডনের মাধ্যমে একজন বিতার্কিক সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে। বিতর্ক মানেই সুন্দর যুক্তি উপস্থাপন করা। আর একজন শিক্ষার্থী স্কুলজীবন থেকে বিতর্কচর্চার সঙ্গে জড়িত থাকলে সে যুক্তি দিয়ে যেমন নিজের মতামতের গ্রহণযোগ্যতা প্রমাণ করতে পারে, তেমনি বিতর্কচর্চার মাধ্যমেই সে অন্যের মতামত সহ্য করার সহনশীলতা অর্জন করে।
আজ মঙ্গলবার সকালে কুড়িগ্রামে পুষ্টি-প্রথম আলো স্কুল বিতর্ক উৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অতিথিরা এসব কথা বলেন। সকাল নয়টায় কুড়িগ্রাম রিভারভিউ উচ্চবিদ্যালয়ে স্কুল বিতর্ক উৎসবের উদ্বোধন হয়।
শ্রাবণের রৌদ্রোজ্জ্বল সকালে জেলার চিলমারী, উলিপুর, রাজারহাট ও কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার মোট ১৬টি প্রতিষ্ঠানের খুদে বিতার্কিকেরা তাদের শিক্ষকদের সঙ্গে নিজ নিজ দল নিয়ে বিতর্ক উৎসবের মাঠে উপস্থিত হয়। সেখানে কুড়িগ্রাম বন্ধুসভার বন্ধুরা তাদের স্বাগত জানান। সকাল নয়টার দিকে জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে বিতর্ক উৎসব শুরু হয়। পরে উৎসবের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ মীর্জা মো. নাসির উদ্দিন।
পুষ্টি-প্রথম আলো বিতর্ক উৎসবের উদ্বোধনী পর্বে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন কুড়িগ্রাম রিভারভিউ উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. নূরুল ইসলাম ও প্রথম আলোর কুড়িগ্রাম সংবাদদাতা জাহানুর রহমান। এরপর সনাতনী বিতর্ক বিষয়ে কর্মশালায় আলোচনা করেন বন্ধুসভার সদস্য নুসরাত জাহান। মাদকের কুফল নিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে আলোচনা করেন কুড়িগ্রাম সরকারি মহিলা কলেজের সহযোগী অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন মণ্ডল।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন উলিপুর সরকারি কলেজের উপাধ্যক্ষ আবু যোবায়ের আল মুকুল, পুষ্টির আঞ্চলিক ব্যবস্থাপক জিয়া উদ্দিন, প্রথম আলোর কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি সফি খান, কুড়িগ্রাম সরকারি গণগ্রন্থাগারের লাইব্রেরিয়ান মেহেদী হাসান প্রমুখ।
উদ্বোধনী বক্তব্যে মীর্জা মো. নাসির উদ্দিন বলেন, বিতর্ক মানে ঝগড়া নয়, বিতর্ক মানে সুন্দর সুন্দর যুক্তি উপস্থাপন করে নিজের বিশ্বাসকে অন্যের কাছে গ্রহণযোগ্য করে তোলা। বিতর্ক হলো যুক্তির লড়াই। কিন্তু এই যুক্তির লড়াইয়ে কখনো প্রতিপক্ষের যুক্তিকে সঠিক মনে হলে তা মেনে নেওয়ার অভ্যাস করতে হবে।
মাদকের কুফল সম্পর্কে আলোচনায় আনোয়ার হোসেন মণ্ডল বলেন, ‘একজন তরুণ বন্ধুদের হাত ধরেই মাদকাসক্ত হয়ে পড়ে। মাদকের শুরুটা হয় বিড়ি-সিগারেট দিয়ে।
কিন্তু দুঃখের বিষয়, আমাদের দেশে বিড়ি-সিগারেটকে মাদক হিসেবে ভয়ের চোখে কিংবা ঘৃণার চোখে দেখি না। ঘরে ঢোকার জন্য যেমন দরজা প্রধান, তেমনি মাদকের প্রবেশদ্বার হলো বিড়ি-সিগারেট। যে বন্ধু মাদক নিতে বলে, সে সত্যিকারের বন্ধু নয়। আমাদের মাদককে “না” বলতে হবে। মাদকমুক্ত তরুণসমাজ হলেই এ দেশ সোনার বাংলাদেশ হয়ে উঠবে।’
দিনব্যাপী উৎসবে কুড়িগ্রাম জেলার ১৬টি প্রতিষ্ঠানের ৩ জন করে শিক্ষার্থী সনাতনী বিতর্ক ও ৬ জন করে শিক্ষার্থী কুইজ এবং সব প্রতিষ্ঠান থেকে ১ জন করে মোট ১৬ জন শিক্ষার্থী বারোয়ারি বিতর্ক পর্বে অংশ নিয়েছে। বিকেল পাঁচটার দিকে বিজয়ী ও রানার্সআপ দলকে ট্রফি ও বারোয়ারি বিতর্কের একজনকে ক্রেস্ট প্রদান করা হবে। অংশগ্রহণকারী সব দলকে সনদ প্রদান করা হবে। জেলা পর্যায়ে বিজয়ী সনাতনী বিতর্ক দলের তিনজন, বারোয়ারির বিতর্কের একজন এবং কুইজের একজন বিজয়ী জাতীয় পর্যায়ে বিতর্কে অংশ নিতে ঢাকায় যাবে।
১৪ জুলাই থেকে পুষ্টির পৃষ্ঠপোষকতা ও প্রথম আলোর উদ্যোগে এ স্কুল বিতর্ক উৎসব শুরু হয়। দেশের ৩৯টি অঞ্চলে এ উৎসব হচ্ছে। আঞ্চলিক পর্যায়ের বিজয়ীরা ঢাকায় জাতীয় পর্বে অংশ নেবে। প্রথম আলো বন্ধুসভার সহযোগিতায় এ প্রতিযোগিতার প্রচার সহযোগী নাগরিক টিভি।