গাজায় ইসরায়েলি হত্যাযজ্ঞের প্রতিবাদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে
মুখ, গাল ও গায়ের পোশাকে লাগানো হয়েছে লাল রং, যেন রক্ত গড়িয়ে পড়ছে। হাতে থাকা প্ল্যাকার্ডেও রক্তের রং লাল লাগানো। তাতে লেখা ‘আই অ্যাম ফ্রম গাজা, আই অ্যাম ফ্রম প্যালেস্টাইন’। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের তিনজন শিক্ষার্থী আজ সোমবার এই চেহারা নিয়ে টিএসসির রাজু ভাস্কর্যের আশপাশে হেঁটে হেঁটে প্ল্যাকার্ডগুলো প্রদর্শন করেন। এর মাধ্যমে তাঁরা ফিলিস্তিনে গণহত্যার প্রতীকী চিত্র তুলে ধরতে চেয়েছেন। চারুকলা অনুষদের এই তিন শিক্ষার্থী হলেন ইমরান সাদমান, শাহাদাত সানি ও দস্তগীর চৌধুরী।
আজ বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্য এলাকা ইসরায়েলবিরোধী স্লোগানে মুখর হয়ে ওঠে। পূর্বঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে ‘মার্চ ফর প্যালেস্টাইন’–এর ব্যানারে ফিলিস্তিনের পক্ষে সংক্ষিপ্ত সংহতি সমাবেশ হয়। তবে সকাল থেকেই বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা রাজু ভাস্কর্যের সামনে জড়ো হতে থাকেন। তাঁরা ফিলিস্তিনের পতাকা ও বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড হাতে স্লোগান দেন।
বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে মার্চ ফর প্যালেস্টাইনের সংহতি সমাবেশের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি চত্বর থেকে মিছিল নিয়ে রাজু ভাস্কর্যের সামনে যান শিক্ষার্থীরা। সেখানে স্লোগান ওঠে, ‘ইনকিলাব ইনকিলাব, জিন্দাবাদ জিন্দাবাদ’, ‘অ্যাকশন টু অ্যাকশন, নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে ডাইরেক্ট অ্যাকশন’, ‘ওয়ান টু থ্রি ফোর, জেনোসাইড নো মোর’, ‘তুমি কে আমি কে, ফিলিস্তিন ফিলিস্তিন’, ‘গোলামি না আজাদি, আজাদি আজাদি।’
স্লোগানের ফাঁকে এ সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে আয়োজকদের একজন ও গণতান্ত্রিক ছাত্র শক্তির ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মুখ্য সংগঠক তাহমীদ আল মুদ্দাসসির চৌধুরী বলেন, ‘আমরা দেখছি, ফিলিস্তিনে কীভাবে নিরীহ নারী, পুরুষ ও শিশুদের হত্যা করা হচ্ছে! আমরা দেখতে পাচ্ছি, সারা পৃথিবী আজ মজলুম মানুষদের কান্না ভারী হয়ে উঠছে। আমরা দেখতে পাচ্ছি, সারা পৃথিবীর মজলুমদের ওপরে এই জালিমদের হাত আরও বেশি শক্তিশালী হচ্ছে। আজকে মার্চ ফর প্যালেস্টাইন কর্মসূচির অংশ হিসেবে আমরা ফিলিস্তিনি মানুষের প্রতি সংহতি জানাচ্ছি।’
এর আগে বেলা ১১টা থেকেই বিভিন্ন স্কুল–কলেজের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে জড়ো হতে থাকেন। বেলা সাড়ে ১১টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অপরাজেয় বাংলার সামনে বিক্ষোভ করেন। এ ছাড়া মেডিকেল, নার্সিং কলেজসহ রাজধানীর বিভিন্ন স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা রাজু ভাস্কর্যের সামনে জড়ো হয়ে সকাল থেকে বিক্ষোভে অংশ নেন।
বিক্ষোভে ইসরায়েলি পণ্য বর্জন ও ফিলিস্তিনকে স্বাধীন করার লক্ষ্যে সবাইকে এক হয়ে লড়াইয়ের আহ্বান জানানো হয়। এ ছাড়া মুসলিম বিশ্বের শাসকদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের আহ্বান জানান তাঁরা।
সকালে রাজু ভাস্কর্যের সামনে বিক্ষোভকারীদের একজন সরকারি বিজ্ঞান কলেজের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী রাফিউল আজম সিফাত প্রথম আলোকে বলে, ‘গাজায় এমন নির্মম গণহত্যার দৃশ্য দেখার পর থেকে আর স্থির থাকতে পারছি না। আজকে বিশ্বব্যাপী কর্মসূচির সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে আমরা আমাদের ক্লাস ক্যানসেল করেছি। আমরা ফিলিস্তিনি মানুষের মুক্তি চাই। স্বাধীন ফিলিস্তিন চাই।’
উল্লেখ্য, বিশ্বব্যাপী ‘নো ওয়ার্ক নো স্কুল’ কর্মসূচির সঙ্গে সংহতি জানিয়ে আজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস–পরীক্ষা বন্ধ ছিল।
ইসরায়েলের গণহত্যা বন্ধের আহ্বান সাদা দলের
ফিলিস্তিনের গাজাসহ বিভিন্ন অঞ্চলে অবিলম্বে গণহত্যা ও জবরদখল বন্ধে ইসরায়েলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএনপিপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন সাদা দল। একই সঙ্গে আজকের বিশ্বব্যাপী কর্মসূচির প্রতি সংহতি জানিয়েছে তারা। আজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাদা দলের এক বিবৃতিতে এ কথা জানানো হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘গাজায় চলমান ইসরায়েলি আগ্রাসন, দখলদারত্ব ও নির্মম গণহত্যা যেন গোটা বিশ্বের সচেতন মানুষকে বাকরুদ্ধ করে তুলেছে। ইসরায়েলের খুনি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর রক্তপিপাসু নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া এখন শুধু মানবিক দায়িত্ব নয়; বরং এটি মুসলমান ও মানুষ হিসেবে সবার কর্তব্য। গাজার নিপীড়িত জনগণ যখন রক্তাক্ত, তখন ন্যায়ের পক্ষে অবস্থান নেওয়া প্রত্যেকটি বিবেকবান মানুষের দায়িত্ব। তা না হলে মানবসভ্যতার কাছে আমাদের জবাবদিহি করতে হবে। অবিলম্বে ইসরায়েলের গণহত্যা ও জবরদখল থামাতে হবে।’
আজকের কর্মসূচি নিয়ে বিবৃতিতে বলা হয়, ‘গাজা থেকে ঘোষিত আগত “নো ওয়ার্ক নো স্কুল” এই ডাক শুধু একটি স্লোগান নয়, এটি মানবতার পক্ষ থেকে একটি চূড়ান্ত আহ্বান। বহুকাল ধরে নির্যাতিত-নিপীড়িত গাজাবাসীর এ আহ্বানে সাড়া দিয়ে আজ বিশ্বব্যাপী ডাকা হরতালের সঙ্গে আমরা পূর্ণ সংহতি ঘোষণা করছি।’