আমাদের অস্তিত্ব বিলুপ্তপ্রায়, লড়াইয়ে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে: সন্তু লারমা

আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস উপলক্ষে আয়োজিত সমাবেশে সভাপতির বক্তব্য দেন বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সভাপতি জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা (সন্তু লারমা)। আজ বুধবার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে
ছবি: তানভীর আহম্মেদ

দেশে পাহাড়, সমতল সব জায়গায় ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর অস্তিত্ব বিলুপ্তির হুমকিতে বলে মন্তব্য করেছেন পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সভাপতি জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা (সন্তু লারমা)। এ অবস্থার উত্তরণে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর যুব সমাজকে সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকারের মানসিকতা নিয়ে লড়াইয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর যুব সমাজকে জাতিগত শোষণ, নিপীড়ন ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়ে সন্তু লারমা বলেন, ‘অধিকার নিয়ে বেঁচে থাকতে হলে আমাদের অধিকতর লড়াই-সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে।’

আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এক সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে সন্তু লারমা এসব কথা বলেন। আজ বুধবার দুপুরে রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এই সমাবেশের আয়োজন করে আদিবাসী ফোরাম।

সন্তু লারমা বলেন, ‘সমাজ পরিবর্তনের মূলে যারা সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করেছে, তারা যুব সমাজ। দেশের সব সংগ্রামেও তার প্রমাণ দেখতে পাই। আমাদের (ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী) যুব সমাজের প্রতি বলতে চাই, আসুন, আমরা অধিকতরভাবে সংগঠিত হই, অধিকতরভাবে সংগ্রামী হই। সেই সংগ্রামের সঙ্গে যুক্ত থাকতে হবে একটা নীতি-আদর্শের ভিত্তিতে। যে নীতি-আদর্শ হবে সর্বোচ্চ ত্যাগ করতে, দ্বিধাহীনভাবে সংকল্পবদ্ধ।’

দেশের ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী থাকা বিভিন্ন অঞ্চলের ওপর যে অত্যাচার, উৎপীড়ন চলছে, তার প্রতিবাদে আদিবাসী সমাজ লড়াই-সংগ্রাম করে আসছে বলেও উল্লেখ করেন সন্তু লারমা। তিনি বলেন, কিন্তু লড়াই-সংগ্রামের নির্দিষ্ট যে লক্ষ্য, তা তাঁরা নির্ধারণ করতে পারেননি। তার পেছনে কারণ হলো আদিবাসী যুব সমাজের মধ্যে সুনির্দিষ্ট প্রগতিশীল, গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক চিন্তাচেতনার যথেষ্ট অভাব রয়েছে। অব্যাহত সংগ্রাম ধরে রাখার জন্য নেতৃত্বকে দীর্ঘস্থায়ী লড়াই-সংগ্রামে বিশ্বাস করেই অবতীর্ণ হতে হয়। যুব সমাজ সেই লড়াই-সংগ্রামের সঙ্গে এখনো তেমনিভাবে যুক্ত হতে পারেনি।

আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস উপলক্ষে বের করা হয় শোভাযাত্রা। আজ বুধবার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার এলাকায়
ছবি: তানভীর আহম্মেদ

দেশের বাস্তবতাকে প্রাধান্য দিয়ে দেশের ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর যুব সমাজকে সংঘবদ্ধভাবে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান সন্তু লারমা। তিনি বলেন, ‘আমাদের ওপর জাতিগতভাবে যে শোষণ, নিপীড়ন ও নির্যাতন, তার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর যুব সমাজকে অবশ্যই আরও সংগ্রামী হতে হবে, আরও ঐক্যবদ্ধ ও সংগঠিত হতে হবে। নীতি-আদর্শ নিয়ে তাদেরকে এগিয়ে আসতে হবে।’

অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের নির্বাহী সভাপতি অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস। এ সময় আরও বক্তব্য দেন বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সভাপতি শাহ আলম, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি নির্মল রোজারিও, ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মেজবাহ কামাল, অ্যাসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড রিফর্ম ইন বাংলাদেশের (এএলআরডি) নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সাদেকা হালিম, ঐক্য ন্যাপের সাধারণ সম্পাদক আসাদুল্লাহ তারেক, পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) সাবেক সাধারণ সম্পাদক শরীফ জামিল প্রমুখ।

অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন বাংলাদেশ আদিবাসী যুব ফোরামের সাংগঠনিক সম্পাদক টনি চিরান ও দপ্তর সম্পাদক মনিরা ত্রিপুরা।