সুসংহত গণতন্ত্রের পথে ফেরা অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ: ক্রাইসিস গ্রুপ

বাংলাদেশকে সুসংহত গণতন্ত্রের পথে ফিরিয়ে আনাটা অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হবে বলে মনে করে বেলজিয়ামের ব্রাসেলসভিত্তিক অলাভজনক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপ। সংস্থাটির ভাষ্যমতে, বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী জাতীয় সংসদ ভেঙে দেওয়ার তিন মাসের মধ্যে নির্বাচন আয়োজনের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। তবে আইনবিশেষজ্ঞ অনেকের পরামর্শ, দেশে প্রয়োজনীয় রাজনৈতিক সংস্কার আনতে অন্তর্বর্তী সরকারের আরও সময় প্রয়োজন। তাই নির্বাচন পেছানো যেতে পারে।

গতকাল বুধবার ক্রাইসিস গ্রুপের এক বিবৃতিতে বলা হয়, কয়েক সপ্তাহ ধরে চলা বিক্ষোভের মুখে গত সোমবার প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে দেশত্যাগ করেন শেখ হাসিনা। বিক্ষোভে অন্তত ৪৪০ জন নিহত হয়েছেন। শেখ হাসিনা দেশত্যাগের পর অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের ঘোষণা দেন সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। সে অনুযায়ী আজ বৃহস্পতিবার রাতে সরকার গঠন হতে যাচ্ছে। এই সরকারের নেতৃত্বে থাকছেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

ক্রাইসিস গ্রুপ বলছে, বাংলাদেশের রাজনীতিতে সংস্কারের বড় প্রয়োজন রয়েছে। দ্রুত নির্বাচনের আয়োজন করলে বিএনপির ক্ষমতায় আসার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে যাঁরা বিএনপিকে ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় দেখেছেন, তাঁরা জানেন, দলটি আওয়ামী লীগের তুলনায় খুব একটা ভালো নয়। সাম্প্রতিক আন্দোলনে যাঁরা সড়কে নেমেছিলেন, তাঁদের খুব কম অংশই বিএনপিকে নেতৃত্বে দেখতে চান। আগামী নির্বাচনে লড়তে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা নিজস্ব একটি রাজনৈতিক দল গড়তে চান বলে মনে হচ্ছে। এ জন্য তাঁদের প্রয়োজনীয় সময় দেওয়া উচিত।

সংস্থাটির বিবৃতি অনুযায়ী আইনবিশেষজ্ঞরা বলছেন, অন্তর্বর্তী সরকারকে সময় দিতে যদি নির্বাচন পেছানো হয়, তবে বিষয়টিকে পরে সংবিধান সংস্কারের মাধ্যমে বৈধতা দেওয়া যেতে পারে। সরকার যদি এ পথে হাঁটে, তাহলে সাংবিধানিক সংকট ও বিক্ষোভ–সংঘাত এড়াতে তাদের প্রধান রাজনৈতিক পক্ষগুলোর সঙ্গে ঐকমত্য গড়ে তুলতে হবে। নির্বাচন পেছানোর লাভ–ক্ষতিগুলো সাবধানের সঙ্গে বিবেচনা করতে হবে।

ক্রাইসিস গ্রুপের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ সরকারের মূল প্রতিষ্ঠানগুলোয় স্বাধীনতা ফিরিয়ে আনতে অন্তর্বর্তী সরকারকে কঠোর পরিশ্রম শুরু করতে হবে। শেখ হাসিনার সময় সংসদে ভিন্নমতের কোনো স্থান ছিল না। সরকারি প্রতিষ্ঠান ও বিচারব্যবস্থাকে ব্যাপকহারে রাজনীতিকরণ করা হয়েছিল। গণমাধ্যম ও নাগরিক সমাজের ওপর কড়া নিয়ন্ত্রণ ছিল সরকারের। এমন পরিস্থিতিতে আগামী নির্বাচন ঘিরে মানুষের আস্থা ফিরিয়ে আনতে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) স্বাধীনতা পুনঃপ্রতিষ্ঠায় অগ্রাধিকার দিতে হবে।

বাংলাদেশে আইনি ও নিরাপত্তাবিষয়ক সংস্কারের জরুরি প্রয়োজন রয়েছে বলেও মনে করে ক্রাইসিস গ্রুপ। তাদের বিবৃতিতে আরও বলা হয়, দেশটির মানুষ পুলিশসহ বিভিন্ন নিরাপত্তা সংস্থার কর্মকাণ্ডে দীর্ঘদিন ধরে ভয়ের মধ্যে কাটিয়েছে। এসব সংস্থা শেখ হাসিনা সরকারের কাছ থেকে পুরোপুরি দায়মুক্তি পেয়েছিল। বাংলাদেশ তখনই নতুন যুগে প্রবেশ করবে, যখন দেশটির মানুষের মধ্যে এই বিশ্বাস জন্মাবে যে রাজনৈতিক কারণে তাদের গ্রেপ্তার, গুম বা বিচারবহির্ভূতভাবে হত্যা করা হবে না।

ক্রাইসিস গ্রুপের ভাষ্যমতে, বাংলাদেশে সাইবার নিরাপত্তা আইনের মতো নিপীড়নমূলক বিভিন্ন আইন পর্যালোচনার জন্য অন্তর্বর্তী সরকারকে একটি আইনি কমিশন গড়ে তুলতে হবে। এই কমিশনের প্রতিবেদন পরবর্তী নির্বাচিত সংসদে পেশ করা যেতে পারে, যেন তারা আইনটি বাতিল বা সংস্কারের পদক্ষেপ নিতে পারে।