আমি ও আমার মেয়ে

মেয়েরা ছোটবেলায় পুতুল খেলে, ছোটবেলায় বাবা হয়ে ওঠে মেয়ের পুতুলপ্রতীকী ছবি

মায়ের সঙ্গে মেয়ের সম্পর্কটা বন্ধুত্বের মতো হয়ে যায়। তারা ঝগড়া করে, মারামারি করে, কিন্তু সবকিছুই করে বন্ধুর মতো। বাবার সঙ্গে মেয়ের সম্পর্কটায় দূরত্ব থাকে বেশি, আবার টানও থাকে বেশি। মেয়েরা ছোটবেলায় পুতুল খেলে, ছোটবেলায় বাবা হয়ে ওঠে মেয়ের পুতুল। বাবার মাথার চুল আঁচড়ে দেওয়ার চেষ্টা করে দু–তিন বছরের কন্যা। বালিকা আর বালিকা থাকে না, বাবার মায়ের ভূমিকা গ্রহণ করে।আরেকটু বড় হলে বাবা-মেয়ের মধ্যে দূরত্ব বাড়ে।

সেটা মেয়ের দিক থেকে। বাবা কিন্তু রবীন্দ্রনাথের কাবুলিওয়ালা গল্পের মতো, সারাক্ষণ বুকপকেটে মেয়ের ছবি ধারণ করে রাখে। দূর পরবাসে নিজের মেয়ের বয়সী কোনো মেয়ে দেখলে তাঁর নিজের মেয়ের কথা মনে হয়।

স্নেহ নিম্নগামী। বাবা-মায়েরা সন্তানের জন্য করতে পারেন না, এমন কিছুই নেই। আমার মেয়ে যদি কোনো কিছু নিয়ে আমার সামান্য প্রশংসা করে, আমি খুব খুশি হয়ে উঠি। আর মেয়ের অভিযোগ হলো, বাবা তো কোনো কিছুতে খুশি হয় না। খালি উপদেশ দেয়। উপদেশ শুনতে হবে, এই ভয়েই বোধ হয় সে দূরে দূরে থাকে।

কথা আসলে ঠিক নয়, পদ্য। তোমার একটু হাসিও আমার জীবনটাকে ধন্য করে তোলে।

পদ্য, তোমার মনে আছে, যখন বাসায় বিদ্যুৎ থাকত না, তোমাকে আমার কাঁধে ফেলে আমি সারা রাত হাঁটতাম! তোমার জ্বর হলে আমি পাগলের মতো কেঁদেছিলাম! তোমাকে ঢাকা শিশুপার্কের গাড়িতে উঠতে দিতে চাচ্ছিল না তোমার বয়স কম বলে, আমি শিশুপার্কের কর্মচারীর সঙ্গে ঝগড়া বাধিয়ে দিয়েছিলাম।

আর তোমাকে পুনেতে রেখে আসার সময় আমি প্লেনে কেঁদেকেটে হুলুস্থুল বাধিয়ে ফেলেছিলাম।

বাবা-মায়ের জীবনে আর কিছুই নেই, সন্তানের মুখের হাসি দেখতে পাওয়ার প্রত্যাশা আর প্রতীক্ষা ছাড়া। আমি জানি, তুমি আমাকে কত ভালোবাসো আর তুমিও জানো আমি তোমাকে কত ভালোবাসি। এখন তো তোমার পড়ার টেবিলে বসে আমি লিখি। তোমার ঘরের দেয়ালে তোমার অতি অল্প বয়সে আঁকা একটা জলরঙের ছবি আছে, আমি সেটার দিকে তাকিয়ে থাকি, আমার মনে হয়, ওই ছবিটা পিকাসোর আঁকা ছবির চেয়েও সুন্দর।

নোম চমস্কির বই তুমি আমাকে দিয়েছিলে ২০১৯-এর ফাদারস ডে–তে। বইটার নাম ‘হোয়াট কাইন্ড অব ক্রিচারস আর উই?’

তাতে তুমি লিখেছিলে, ‘ইউ আর দ্য কাইন্ড অব ক্রিচার হু ইজ দ্য বেস্ট ফাদার।’
আই লাভ ইউ, আম্মা।

তোমাকে নিয়ে আমার একটা গান ছিল। আমার আম্মুসোনা জানের কণা...
আমি সেটা রোজ গাই।

আর করোনার কালে হাত ধোয়ার নিয়ম শিখেছি, সাবানপানি দিয়ে হাত ধুতে ধুতে ‘হ্যাপি বার্থডে টু ইউ…’ গানটা পুরো দুইবার গাইতে হবে।

আমি যতবার হাত ধুই, ততবার গাই, হ্যাপি বার্থডে টু ইউ, ডিয়ার পদ্যসোনা...
তোমার মা তোমাকে রোজ ভিডিও কল করেন দুইবার। আমি যদি কখনো কল করি, তুমি চমকে ওঠো, বলো, কী হইছে? কল করছ ক্যান?

কিন্তু মনে রেখো, রোজ অন্তত দশবার হাত ধোয়ার সময় তোমার নাম আমি নিই, মানে দিনে বিশবার।