আ.লীগই সরকারে থেকে প্রথম শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তর করেছে: প্রধানমন্ত্রী

রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) পঞ্চম জাতীয় সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
ছবি: প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়

বর্তমান সরকার ‘রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা’ ও ‘গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা চায়’ বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, ‘২০০১ সালে আওয়ামী লীগ সরকারে থেকে যেবার শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তর করেছে, সেবারই প্রথম দেশে শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তর হয়েছে।’

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জয়ী হয়ে সরকার গঠন করে এবং এই তৃতীয়বারের মতো এখন সরকারে থেকে অন্তত এটুকু দাবি করতে পারে যে এই ১৪ বছরে বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়িয়েছে ও উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে। আর আমাদের দেশের মানুষেরও অর্থনৈতিক উন্নতি হয়েছে।’

আজ শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) পঞ্চম জাতীয় সম্মেলনে প্রধান অতিথির ভাষণে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সম্পর্কে জনগণকে বিভ্রান্ত করা লোকদের নিন্দা করে বলেন, দেশে পর্যাপ্ত রিজার্ভ আছে এবং রিজার্ভ জনসাধারণের কল্যাণে ব্যবহার করা হচ্ছে। তাঁর সরকার জনগণের কল্যাণে সম্ভাব্য সবকিছু করবে, কাউকে ভোগান্তি পোহাতে হবে না।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এটা ঠিক, আমাদের রিজার্ভ থেকে (দেশবাসীর কল্যাণে) খরচ করতে হবে। আমাদের কাছে এত পরিমাণ রিজার্ভ মানি আছে যে আমরা পাঁচ মাসের জন্য খাদ্য আমদানি করতে পারি; যদিও যেকোনো দুর্যোগ কাটিয়ে উঠতে তিন মাসের খাদ্য আমদানির জন্য রিজার্ভ থাকতে হয়।’

চাল, গম, ভোজ্যতেল, জ্বালানি তেল, ভ্যাকসিন আমদানিসহ জনগণের কল্যাণে এ রিজার্ভ ব্যবহার করা হচ্ছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মানুষ রিজার্ভের বিষয়ে বিশেষজ্ঞ হয়ে উঠছে এবং তারা চা-স্টল ছাড়াও বিভিন্ন জায়গায় রিজার্ভ নিয়ে আলোচনা করছে। কোভিড-১৯, ভর্তুকি দেওয়া, কিছু প্রকল্পে বিনিয়োগ ও বিদেশি ঋণ পরিশোধ করায় এ টাকা ব্যয় হয়েছে।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘খালেদা জিয়া যে রিজার্ভ রেখে গিয়েছিল, তা থেকে আওয়ামী লীগ ২০০৮–এ নির্বাচিত হয়ে ২০০৯ সালে যখন সরকার গঠন করে, তখন সেই রিজার্ভ ছিল পাঁচ বিলিয়নের কিছু ওপরে। করোনাকালে যেহেতু আমদানি বন্ধ ছিল, রেমিট্যান্স সরকারিভাবে এসেছে, কোনো হুন্ডি ব্যবসা ছিল না, কোনো রকম খরচ ছিল না, তাই আমাদের রিজার্ভ ৪৮ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়েছিল। তবে বাংলাদেশ তাদের সব ঋণ সব সময় সঠিকভাবে পরিশোধ করে এসেছে এবং একবারের জন্যও ঋণখেলাপি হয়নি।’

সরকারের যত সমস্যা হোক, এ অবস্থা তাঁর সরকার ধরে রাখতে পেরেছে বলে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কোভিড কমে আসার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের আমদানি-রপ্তানি বেড়েছে। দেশের কাজ বেড়েছে। তা ছাড়া ভ্যাকসিন ক্রয় ও করোনা মোকাবিলার আনুষঙ্গিক ব্যয় মেটাতে হয়েছে। চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রশিক্ষণ দিতে হয়েছে—এগুলোর জন্য টাকা খরচ হয়েছে। পানির মতো টাকা খরচ করতে হয়েছে। তারপর এখন আমাদের খাদ্য আমদানি করতে হচ্ছে, এর জন্য অধিক দামে আমদানিতে অর্থ ব্যয় হচ্ছে।’

সরকারপ্রধান বলেন, ‘যতই দাম বাড়ুক, এই যুদ্ধের সময় সরকার ইউক্রেন-রাশিয়া, কানাডা থেকে গম কিনে আনছে। এ জন্য ২০০ ডলারের গম ৬০০ ডলারে কিনতে হচ্ছে। ভোজ্যতেল সেই ব্রাজিল থেকে শুরু করে পৃথিবীর যে দেশে পাওয়া যায়, আমরা নিয়ে আসছি। মানুষের ভোগ্যপণ্য প্রাপ্তিতে যাতে কোনো সমস্যা না হয়, সে জন্য কার্যকর পদক্ষেপ নিয়েছি। মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে সরকার।’

‘রিজার্ভ শুধু আমাদের দেশে নয়; পৃথিবীর অনেক দেশের কমে গেছে’ উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের সভাপতি বলেন, তাঁর সরকার শ্রীলঙ্কাকে কিছু সহযোগিতা করেছে এবং আরও অনেক দেশ বাংলাদেশের কাছে সহযোগিতা চেয়েছে। তিনি বলেন, ‘এখন যেটুকু রিজার্ভ, সেটা আমাদের দেশের জন্য প্রয়োজন, এটা আমাদের রাখতে হবে।’

সরকারপ্রধান এর ব্যাখ্যায় বলেন, ‘রিজার্ভ রাখা লাগে; কেননা যদি কোনো দৈব–দুর্বিপাক হয়; সে সময় তিন মাসের খাবার যেন আমদানি করা যায়।’ আর তাই খাদ্যপণ্য যাতে মোটেই আমদানি করতে না হয়, সে জন্য তিনি দেশবাসীর প্রত্যেককে যার যেখানে যতটুকু জমি আছে, তাতে ফসল ফলিয়ে খাদ্য উৎপাদন বাড়ানোর আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘এক ইঞ্চি জমি ফেলে রাখবেন না। যে যা পারেন, উৎপাদন করেন। নিজেরা সাশ্রয় করেন। নিজের খাদ্য নিজে জোগান দিন। আমরা তা করতে পারি, বাংলাদেশের মানুষ তা করতে পারে।’

এখন যে রিজার্ভ, তাতে তিন মাস নয়, পাঁচ মাসের খাদ্য আমদানি করতে পারা যাবে বলে জানান শেখ হাসিনা। বলেন, ‘তবে তারা একটা গুজব ছড়াচ্ছে, ব্যাংকে টাকা নাই, ব্যাংকে টাকা পাওয়া যাবে না, আর সবাই টাকা ব্যাংক থেকে তুলে ঘরে রাখছে। আসলে ঘরে টাকা রাখা মানে চোরকে সুযোগ করে দেওয়া। কাজেই চোরকে সুযোগ করে দেবেন না।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকার এই বিশ্বমন্দার মধ্যেও উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে এবং এ ক্ষেত্রে কিছু অগ্রগতিও আছে। তবে খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করার প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে।

বঙ্গবন্ধুর পালিয়ে থাকা খুনিদের দেশে ফিরিয়ে আনার প্রচেষ্টার কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আল্লাহর কাছে শুকরিয়া এবং জনগণের প্রতি আমার কৃতজ্ঞতা; অন্তত তারা ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছিল বলেই জাতির পিতা হত্যার বিচার করতে পেরেছি। কিন্তু এখনো কিছু খুনি রয়ে গেছে। আমেরিকায় এক খুনি রয়ে গেছে, তাকে ফিরিয়ে আনার জন্য আমরা বারবার চেষ্টা করছি; যেহেতু তার ফাঁসির আদেশ হয়েছে। আমেরিকা সেই খুনিকে লালন–পালন করছে, অবশ্য আমেরিকার কারবারই এ রকম।’

পৃথিবীর যেখানেই থাক, যেভাবেই হোক এদের ধরে এনে অবশ্যই সাজা নিশ্চিত করা হবে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘খুনিদের একজন কানাডায়, একজন আছে আমেরিকায়, আর দুইজন পাকিস্তানে। আরেকজনের খবর পাওয়া যাচ্ছে না, কখনো ইন্ডিয়াতে, কখনো জার্মানিতে, বিভিন্ন জায়গায় মোসলেহ উদ্দিন অবস্থান করেছে।’

ভাষণে স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়নে তাঁর সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথাও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। জাতির পিতার সেই অমোঘ মন্ত্র ‘বাংলাদেশের মানুষকে কেউ দাবায়ে রাখতে পারবা না’ উচ্চারণ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষকে কেউ দাবিয়ে রাখতে পারবে না। কারণ, বাংলাদেশের মানুষ অত্যন্ত উৎসাহী। তাদের একটু সুযোগ দিলে তারা অসাধ্য সাধন করতে পারে।’

সম্মেলনে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, স্বাচিপের সভাপতি এম ইকবাল আর্সলান ও মহাসচিব এম এ আজিজ বক্তৃতা করেন। মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী আ ফ ম রুহুল হক। জাতীয় পতাকা উত্তোলন এবং বেলুন ও পায়রা উড়িয়ে সম্মেলন উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। পরে স্বাচিপের স্থায়ী কার্যালয়ের ফলক উন্মোচন করেন তিনি।