‘১৫ বছর ধরে পানি পাই না, তবু বিল আসছে’

গণশুনানি ও সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় অনুষ্ঠানের আয়োজন করে চট্টগ্রাম ওয়াসা। চট্টগ্রাম, ২৭ ডিসেম্বরছবি: প্রথম আলো

চট্টগ্রাম নগরের ঝাউতলা স্টেশনসংলগ্ন সরদার বাহাদুরনগর এলাকায় দোতলা ভবনের মালিক নোমান-ই-আলম খান। ৩০ বছর আগে পানির জন্য ওয়াসার সংযোগ নিয়েছিলেন। কিন্তু প্রায় ১৫ বছর ধরে তিনি পানি পাচ্ছেন না। অথচ প্রতি মাসে তাঁর নামে ৭০০ থেকে ১ হাজার টাকা বিল জমা হচ্ছে।

আজ বুধবার দুপুর ১২টায় চট্টগ্রাম ওয়াসার ‘গণশুনানি ও সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে এসে বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন নোমান-ই-আলম খান। নগরের প্রেসক্লাবের বঙ্গবন্ধু হলে এই গণশুনানির আয়োজন করা হয়।

গণশুনানিতে চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এ কে এম ফজলুল্লাহর কাছে অভিযোগ জানিয়ে নোমান-ই-আলম খান বলেন, সরদার বাহাদুরনগর এলাকায় পানি সরবরাহ হচ্ছে না। দীর্ঘদিন ধরে অনেক গ্রাহক পানি পাচ্ছেন না। কিন্তু প্রতি মাসে বিল জমা হচ্ছে। কারও ৫০ হাজার, কারও ১ লাখ টাকা পর্যন্ত বকেয়া জমা হয়েছে। এই টাকা মওকুফ করা উচিত।

নোমান-ই-আলম খান আরও বলেন, নগরের সিডিএ আবাসিক এলাকায়ও তাঁর বাড়ি আছে। মাঝেমধ্যেই সেখানকার পানিতে দুর্গন্ধ পাওয়া যায়। এ বিষয়গুলো খতিয়ে দেখতে হবে।

পরে নোমান-ই-আলম খানের অভিযোগের জবাব দেন এ কে এম ফজলুল্লাহ। তিনি বলেন, পানি না পেলেও লাইন চার্জের জন্য নির্দিষ্ট একটা ফি দিতে হয়। এটি বিল নয়, লাইন চার্জ। পানি না পাওয়ার বিষয়টি ওয়াসাকে জানালে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হবে। তখন আর লাইন চার্জ দিতে হবে না। এ ছাড়া এলাকাটি একটু উঁচু হওয়ার কারণে পানি পৌঁছায় না। আগামী পাঁচ থেকে ছয় মাসের মধ্যে পানির সংকট দূর করা হবে।

পানিতে দুর্গন্ধ প্রসঙ্গে এমডি বলেন, তাঁরা নিয়মিত পানির গুণাগুণ পরীক্ষা করেন। দুর্গন্ধ হওয়ার সুযোগ নেই। তবু কোন এলাকায় কার সংযোগে দুর্গন্ধ হচ্ছে, সে তথ্য দিলে খতিয়ে দেখা হবে। পাশাপাশি ওই পানির নমুনা ওয়াসায় পাঠালে পরীক্ষা করে দেখা হবে।

গণশুনানিতে এমডি ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন উপব্যবস্থাপনা পরিচালক (প্রকৌশল) বিষ্ণু কুমার সরকার, উপব্যবস্থাপনা পরিচালক (প্রশাসন) শাহিদা ফাতেমা চৌধুরী, প্রধান প্রকৌশলী মাকসুদ আলম, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. নুরুল আমিন, মোহাম্মদ আরিফুল ইসলাম, মোহাম্মদ মাহাবুবুল আলম, বাণিজ্যিক ব্যবস্থাপক কাজী শহিদুল ইসলাম প্রমুখ।

অনুষ্ঠানের শুরুতে ২০০৯ সাল থেকে চট্টগ্রাম ওয়াসায় কী কী উন্নয়ন কর্মকাণ্ড হয়েছে, তা তুলে ধরেন এমডি। লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, ২০০৯ সালে পানির উৎপাদন ছিল ১২ কোটি লিটার। বর্তমানে উৎপাদন সক্ষমতা ৫৬ কোটি লিটার। এ সময় পাঁচটি বড় প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়েছে। আরও ছয়টি প্রস্তাবিত প্রকল্প অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে। এসব প্রকল্পের মাধ্যমে পানির সংকট দূর হয়ে যাবে।

‘দুর্নীতি হয়, অস্বীকার করার কিছু নেই’
এমডির বক্তব্য শেষ হওয়ার পর প্রশ্নোত্তর পর্ব শুরু হয়। পানির লবণাক্ততা, পয়োনিষ্কাশন প্রকল্পের ধীরগতি, ওয়াসার জায়গা দখল করে কর্মচারীদের দোকান তোলা, সংযোগ থাকলেও পানি না পাওয়াসহ নানা বিষয় নিয়ে প্রশ্ন করেন সাংবাদিক ও গ্রাহকেরা।

ওয়াসায় বিভিন্ন খাতে দুর্নীতি ও অনিয়মের বিষয়ে এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে এমডি বলেন, ‘দুর্নীতি একটা রোগের মতো। দুর্নীতি আছে। এটি অস্বীকার করার কিছু নেই। তবে আমরা আগের চেয়ে মিনিমাইজ করেছি। আগে মিটার পরিদর্শকের বিষয়ে অনেক অভিযোগ থাকত, বিল নিয়ে অনেক অভিযোগ থাকত। এখন এসব একেবারে বন্ধ হয়ে গেছে, তা বলব না। তবে অনেক কমে গেছে।’