পুলিশের আপত্তিতে বদলে যাচ্ছে পোশাক

এবার নিয়ে সংস্থাটির পোশাক তিনবার পরিবর্তন হবে। পোশাকের রং চূড়ান্ত করতে আজ সভা ডেকেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পোশাক আবারও বদলে যাচ্ছে। এবার নিয়ে তাঁদের পোশাক তিনবার পরিবর্তন হবে। পোশাকের রং চূড়ান্ত করতে সোমবার (আজ) সভা ডেকেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

এ বিভাগের একাধিক কর্মকর্তা প্রথম আলোকে জানিয়েছেন, বারবার পোশাক বদলানো একদিকে সরকারি অর্থের অপচয় হচ্ছে, অন্যদিকে বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মনোবল ভেঙে যাচ্ছে। কর্মকর্তারা বলছেন, পোশাকের রং বদলের মতো অগুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের দিকে মনোযোগ দিতে গিয়ে মূল কাজে গতি কমে যাচ্ছে।

তবে নতুন করে পোশাক বানানোর ক্ষেত্রে কত টাকা ব্যয় হবে, তা জানা সম্ভব হয়নি। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরে ৩ হাজার ৫৯ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছেন।

অধিদপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এখন টার্কিশ ব্লু রঙের সেলুলার কাপড়ের বুকখোলা ফুল ও হাফ হাতা শার্ট, ডিপ নেভি ব্লু রঙের প্যান্ট এবং অধিদপ্তরের লোগোসংবলিত টুপি পরিধান করছেন। নারী কর্মকর্তা–কর্মচারীরা পরছেন টার্কিশ ব্লু রঙের বুশ শার্ট ও ডিপ নেভি ব্লু রঙের প্যান্ট।

ওই সময় রং চূড়ান্ত করার সময় আমি ছিলাম না। তাই এ বিষয়ে কিছু বলা সম্ভব নয়।
কমিটির প্রধান আজিজুল ইসলাম

গত বছরের ১ সেপ্টেম্বর থেকে নতুন এই পোশাক পরে আসছেন তাঁরা। বিপত্তি শুরু হয় ওই মাস থেকে। আপত্তি আসে সরকারি একটি সংস্থা থেকে। তাদের ভাষ্য, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের পোশাকের সঙ্গে তাদের পোশাকের মিল আছে। এটি পরিবর্তন করতে হবে। মূলত ওই সংস্থার চাপে আবার মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের পোশাকে পরিবর্তন আসছে।

নথি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, পোশাকের রং পরিবর্তন করতে এ বছর ১৪ মার্চ মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরকে চিঠি দেয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তাতে বলা হয়, তাদের পোশাকের সঙ্গে অন্যান্য সংস্থার পোশাকের রঙে কিছুটা মিল রয়েছে। ফলে অধিদপ্তরের পোশাকের রং পরিবর্তনের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। তবে, মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের একাধিক কর্মকর্তা প্রথম আলোকে জানিয়েছেন, মূলত পুলিশের আপত্তিতে তাদের পোশাকের রং পরিবর্তন করা হচ্ছে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের চিঠি পাওয়ার পর পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর। কমিটির প্রধান করা হয় অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক আজিজুল ইসলামকে। নতুন পোশাকের রং ঠিক করতে কয়েক দফা বৈঠক করেছে কমিটি। এরই মধ্যে পাঁচটি রং নির্বাচন করে তা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।

অধিদপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এখন টার্কিশ ব্লু রঙের সেলুলার কাপড়ের বুকখোলা ফুল ও হাফ হাতা শার্ট, ডিপ নেভি ব্লু রঙের প্যান্ট এবং অধিদপ্তরের লোগোসংবলিত টুপি পরিধান করছেন। নারী কর্মকর্তা–কর্মচারীরা পরছেন টার্কিশ ব্লু রঙের বুশ শার্ট ও ডিপ নেভি ব্লু রঙের প্যান্ট।

এ নিয়ে কথা হয় কমিটির দুজন সদস্যের সঙ্গে। তাঁরা বলেছেন, সরকারি অন্য সব সংস্থার পোশাকের সঙ্গে এবার যাতে রং না মেলে, তাঁরা সে চেষ্টা করেছেন। একেবারে নতুন রং নির্বাচন করেছেন।

কমিটির প্রধান আজিজুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘অধিদপ্তরের জন্য নতুন পোশাকের রং ঠিক করতে আমরা বেশ কয়েকটি রং বাছাই করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি। এর মধ্যে কোন রং চূড়ান্ত হবে, সেটি মন্ত্রণালয় ঠিক করবে। অধিদপ্তর এখন যে পোশাক পরছে, সেটি তো প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়েই চূড়ান্ত হয়েছে, তবু কেন অন্য সংস্থা থেকে আপত্তি এল এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ওই সময় রং চূড়ান্ত করার সময় আমি ছিলাম না। তাই এ বিষয়ে কিছু বলা সম্ভব নয়।’

সূত্র জানায়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে নতুন পোশাকের রং চূড়ান্ত করার পর বিভিন্ন অংশীজনের সঙ্গে বৈঠক করা হবে। প্রস্তাবিত ওই রং নিয়ে কারও আপত্তি আছে কি না, তা জানতে চাওয়া হবে। তারপর নতুন পোশাকের রং চূড়ান্ত হবে।

পোশাকের রং নিয়ে জটিলতায় নতুন পোশাক কিনতে পারছে না মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর। কারণ, একটি পোশাকের আয়ুষ্কাল এক বছর। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য কেনা পোশাকের মেয়াদ শেষ হতে চলেছে এ মাসে। কিন্তু নতুন করে পোশাক কেনা যাচ্ছে না। কারণ, পোশাকের রং পরিবর্তন হলে এসব পোশাক বাতিল হয়ে যাবে।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সূত্র বলছে, নতুন পোশাকের রং চূড়ান্ত করার পর বিধিমালাতেও পরিবর্তন আনতে হবে। কারণ, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের জন্য পোশাক ও সামগ্রী বিধিমালা ২০২১-এ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পোশাকের রং নির্ধারণ করা আছে। এখন পোশাকের রং পরিবর্তনের আগে বিধিমালা সংশোধন করতে হবে। এ বিষয়ে আজিজুল ইসলাম বলেন, বিধিমালা পরিবর্তনে কিছুটা সময় লাগবে।

এদিকে পোশাকের রং নিয়ে জটিলতায় নতুন পোশাক কিনতে পারছে না মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর। কারণ, একটি পোশাকের আয়ুষ্কাল এক বছর। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য কেনা পোশাকের মেয়াদ শেষ হতে চলেছে এ মাসে। কিন্তু নতুন করে পোশাক কেনা যাচ্ছে না। কারণ, পোশাকের রং পরিবর্তন হলে এসব পোশাক বাতিল হয়ে যাবে।

সূত্র বলছে, ২০১৪ সাল থেকে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সিপাহি থেকে পরিদর্শক পর্যন্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা খাকি রঙের পোশাক পরিধান করতেন। যদিও ওই পোশাক নিয়ে নিজেদের মধ্যেই অসন্তোষ ছিল। বিভাগের নিজেদের মধ্যে পোশাক পরিবর্তনের দাবি ওঠে। বিভিন্ন মহলের সঙ্গে আলোচনা শেষে ২০২১ সালের ২৩ মে এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে অধিদপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য ‘টার্কিশ ব্লু’ রঙের পোশাক নির্ধারণ করা হয়, যেখানে অধিদপ্তরের সিপাহি থেকে অতিরিক্ত পরিচালক পর্যন্ত সবাইকে একই রঙের পোশাক পরিধানের সিদ্ধান্ত হয়। গত ১ সেপ্টেম্বর থেকে নতুন পোশাক ব্যবহারে নীতিগত সিদ্ধান্ত জানানো হয়।