গাছ কাটার ছবি তোলায় চুয়েটের দুই শিক্ষার্থীকে ঠিকাদারের হুমকি

চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে(চুয়েট) ঠিকাদারের কেটে ফেলা এই গাছের ছবি তুলতে গেলে দুর্ব্যবহারের শিকার হন দুই শিক্ষার্থী। আজ সকালে তোলাপ্রথম আলো

গাছ কাটার ছবি তোলায় চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) দুই শিক্ষার্থীর সঙ্গে অশোভন আচরণ ও তাঁদের হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে এন কে ট্রেডার্স নামের এক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারীর বিরুদ্ধে। অভিযুক্ত ওই ঠিকাদারের নাম নাইম খান। গতকাল সোমবার বেলা আড়াইটায় চুয়েটের কেন্দ্রীয় মসজিদের বিপরীত পাশে বিদ্যুৎ উপকেন্দ্র–সংলগ্ন স্থানে এ ঘটনা ঘটে।

জানা গেছে, চুয়েটের বিদ্যুৎ উপকেন্দ্রের পাশে বেশ কিছু জায়গাজুড়ে গাছগাছালি কেটে চলছে কেন্দ্রীয় গবেষণাগারের নির্মাণকাজ। ইয়াকুব অ্যান্ড ব্রাদার্স এবং এনকে ট্রেডার্স নামের দুটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান যৌথভাবে নির্মাণকাজটির দায়িত্বে রয়েছে। কাজটির দেখভাল করেন এনকে ট্রেডার্সের কর্ণধার নাঈম খান। সেখানে বিপুলসংখ্যক গাছ কাটতে দেখে ছবি তুলতে যান চুয়েটের স্থাপত্য বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী শোভন লাল সরকার। এ সময় শোভনকে ছবি তুলতে বাধা দেন ও তাঁর সঙ্গে অশোভন আচরণ করেন নাঈম খান ও তাঁর সহযোগীরা।

শোভন প্রথম আলোকে বলেন, ‘সাবস্টেশনের পাশের জায়গায় কয়েকটি গাছ কাটা হয়েছে দেখে আমি ছবি তুলতে যাই। হঠাৎ কয়েকজন অচেনা লোক তেড়ে আসেন আমার হাতে থাকা ফোন কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন। এ সময় নাঈম খানসহ তাঁর সহযোগীরা আমার দিকে তেড়ে আসেন। নাঈম খান আমাকে বলেন, এখানে শিক্ষার্থীরা কেউ তাঁর অনুমতি না নিয়ে ছবি তুলতে কিংবা দাঁড়াতেও পারবে না। এ সময় ইলেকট্রনিকস অ্যান্ড টেলিকমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং (ইটিই) বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী সাম্মাউল ইসলাম ঘটনার প্রতিবাদ করতে এগিয়ে এলে আমাদের ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিয়ে হুমকি দেন নাঈম ও তাঁর সহযোগীরা। এ সময় তিনি বলেন, ‘আমাদের টিচার (শিক্ষক) ভেবো না, আমরা এমপির লোক। কাউকে ভয় পাই না। ভিসিও আমাদের কিছু করতে পারবে না।’

এ ঘটনায় তৎক্ষণাৎ সাধারণ শিক্ষার্থীরা ক্ষোভ প্রকাশ করলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রকল্যাণ দপ্তরের পরিচালক রেজাউল করিম এবং পরিকল্পনা ও উন্নয়ন দপ্তরের উপপরিচালক মো. তারেকুল আলম সেখানে উপস্থিত হয়ে নাঈম খানকে এ ব্যাপারে সতর্ক করেন। পরে নাঈম খান নিজের দোষ স্বীকার করে এ ঘটনার জন্য শিক্ষার্থীদের কাছে দুঃখ প্রকাশ করেন।

গবেষণাগারটি তৈরির কাজের তদারকি করছে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিকল্পনা ও উন্নয়ন দপ্তর এবং প্রকৌশল বিভাগ। এ বিষয়ে পরিকল্পনা ও উন্নয়ন দপ্তরের উপপরিচালক মো. তারেকুল আলম জানান, এ ঘটনা অপ্রত্যাশিত। নাঈম চুয়েটের সঙ্গে চার বছর ধরে কাজ করছেন। কখনোই কারও সঙ্গে তার সমস্যা হয়নি। হয়তো রাগের বশে তিনি খারাপ ব্যবহার করে ফেলেছেন। তবে তিনি দায় স্বীকার করে তৎক্ষণাৎ শিক্ষার্থীদের কাছে দুঃখ প্রকাশ করেছেন।

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ পুরোপুরি সত্য নয় দাবি করে অভিযুক্ত নাঈম খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘বেশ কিছুদিন ধরে কিছু শিক্ষার্থী ছবি তুলতে গিয়ে আমাদের সমস্যা করছিল। তাই আমি তাদের একজনকে বলেছিলাম, বারবার এত ছবি কেন তোলেন? আপনাদের এ কাজ নিয়ে কোনো সুবিধা-অসুবিধা থাকলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলেন। তখন উল্টো কয়েকজন শিক্ষার্থী আমার সঙ্গে খারাপ আচরণ করেন।’

এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে অভিযুক্ত ঠিকাদারের কার্যক্রম বন্ধের দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রকল্যাণ দপ্তর বরাবর লিখিত অভিযোগ করছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এ বিষয়ে ছাত্রকল্যাণ দপ্তরের পরিচালক রেজাউল করিম বলেন, ছাত্রদের লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে ঘটনাটি পর্যালোচনা করা হবে। ভবিষ্যতে এ ধরনের কোনো ঘটনা যাতে না ঘটে, সে অনুযায়ী যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মোহাম্মদ রফিকুল আলম বলেন, ‘আমি ঠিকাদারকে ডেকেছি। এ ধরনের আচরণ করলে তিনি কখনোই কাজ করতে পারবেন না। তাঁকে ক্যাম্পাসে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হবে।’