‘প্রাবন্ধিক ও শিক্ষাবিদ অধ্যাপক যতীন সরকারের সামাজিক, সাংস্কৃতিক, বুদ্ধিবৃত্তিক ভূমিকা বাংলাদেশের অসাম্প্রদায়িক, মুক্তমনা, সাম্যের সমাজ গড়ার পেছনে একনিষ্ঠ অবদান ছিল। সে জন্য তিনি জীবনভর যে সাধনা করে গেছেন, যা রেখে গেছেন, তা আমাদের নানাভাবে স্মরণ করতে হবে।’
শুক্রবার বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত ‘অধ্যাপক যতীন সরকারের নাগরিক শোকসভা’য় এ কথাগুলো বলেন আলোচকেরা। শোকসভার আয়োজন করে বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী।
শোকসভার শুরুতে অধ্যাপক যতীন সরকারের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন অতিথিরা। এরপর যতীন সরকারের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। সভায় যতীন সরকারের স্বজন, উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদসহ বিভিন্ন জেলা ও শাখা সংসদের শিল্পী-কর্মী-সংগঠক এবং বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক সংগঠনের নেতা–কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
শোকসভায় অধ্যাপক যতীন সরকারের মেয়ে সুদীপ্তা সরকার অডিও বার্তায় স্মৃতিচারণা করেন। তাতে তিনি বলেন, ‘মানুষ যখন পর্বতের খুব কাছে থাকে, তখন সে ঠিক পর্বতের বিশালতাকে সঠিকভাবে অনুধাবন করতে পারে না। পর্বতের বিশালতা পর্বত থেকে একটু দূরে দাঁড়িয়ে অনুভব করা যায়। আমার পর্বতসম বিশালতার অধিকারী বাবার রাজনৈতিক, সাহিত্যিক, বুদ্ধিভিত্তিক গুণাবলি আপনারা অর্থাৎ যাঁরা তাঁর বর্ধিত পরিবারের অংশ, তাঁরাই ভালো বলতে পারবেন।’ এ সময় তিনি তাঁর উত্তরসূরিদের জীবনে যতীন সরকারের স্বরূপ ধরে রাখার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
শোকসভায় অধ্যাপক যতীন সরকারের জীবন ও কর্ম নিয়ে স্মৃতিচারণা করেন তাঁর ছাত্র, সহযোদ্ধা এবং সহকর্মীরা। আলোচনায় মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি মফিদুল হক বলেন, ‘অধ্যাপক যতীন সরকারের সামাজিক, সাংস্কৃতিক, বুদ্ধিবৃত্তিক ভূমিকা বাংলাদেশের অসাম্প্রদায়িক, মুক্তমনা, সাম্যের সমাজ গড়ার পেছনে তাঁর একনিষ্ঠ অবদান ছিল। জীবনভর যে সাধনা তিনি করে গেছেন, তিনি যা রেখে গেছেন এবং আমাদেরকে যে সমৃদ্ধি জুগিয়ে গেছেন, সেটা আমাদের নানাভাবে স্মরণ করতে হবে।’
অধ্যাপক যতীন সরকারের স্মৃতিচারণা করে মফিদুল হক বলেন, তিনি আসলে একটু নিভৃত সাধনা করেছেন এবং বইপত্র লিখেছেন। বাংলা সাহিত্যে যতীন সরকারের অবদানকে স্মরণীয় করে রাখতে তাঁর রচনাবলি নিয়ে ‘যতীন সরকার রচনাসমগ্র’ এবং ‘যতীন সরকারের আত্মজীবনী’ বের করতে বাংলা একাডেমির প্রতি আহ্বান জানান মফিদুল হক।
শোকসভায় আরও আলোচনা করেন মহিলা পরিষদের সভাপতি ফওজিয়া মোসলেম, কবি ও সাংবাদিক সোহরাব হাসান। সভাপতিত্ব করেন উদীচীর ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহমুদ সেলিম।
গত ১৩ আগস্ট দুপুরে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন অধ্যাপক যতীন সরকার। ওই দিন রাতেই নেত্রকোনা মহাশ্মশানে তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়।
উদীচীর সাধারণ সম্পাদক অমিত রঞ্জনের সঞ্চালনায় নাগরিক শোকসভায় আরও বক্তব্য দেন কেন্দ্রীয় খেলাঘর আসরের কেন্দ্রীয় সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আবু সাঈদ, নিরঞ্জন অধিকারী, বাংলাদেশ যুব ইউনিয়নের সভাপতি খান আসাদুজ্জামান মাসুম, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক বাহাউদ্দিন শুভ প্রমুখ।