‘ছাগল–কাণ্ডে’ আলোচিত মতিউর ও তাঁর স্ত্রী-সন্তানদের নামে তিন মামলা

মতিউর রহমানছবি: সংগৃহীত

অবৈধ সম্পদ অর্জন ও সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগে ‘ছাগল–কাণ্ডে’ আলোচিত জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাবেক সদস্য মতিউর রহমান ও তাঁর প্রথম স্ত্রী লায়লা কানিজ, তাঁদের ছেলে তৌফিকুর রহমান ও মেয়ে ফারজানা রহমানের বিরুদ্ধে পৃথক মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

আজ সোমবার তাঁদের নামে দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন ও মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে পৃথক তিনটি মামলা করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন দুদকের মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) মো. আক্তার হোসেন। তিনি বলেন, মতিউর রহমান ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের সম্পদ বিবরণী জমা দিতে নোটিশ দিয়েছিল দুদক। পরে তাঁরা সম্পদ বিবরণী জমা দেন। দুদকের অনুসন্ধান ও তাঁদের সম্পদ বিবরণী পর্যালোচনা করে অসংগতিপূর্ণ সম্পদ অর্জনের তথ্য পাওয়া যায়। এর পরিপ্রেক্ষিতে তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।

প্রথম মামলায় লায়লা কানিজের বিরুদ্ধে ১৩ কোটি ১ লাখ ৫৮ হাজার টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়েছে। পাশাপাশি তাঁর বিরুদ্ধে ১ কোটি ৫৩ লাখ টাকার অবৈধ সম্পদের তথ্য গোপন করার অভিযোগ আনা হয়েছে। এসব সম্পদ অর্জনে মতিউর সহযোগিতা করেছেন এমন অভিযোগ এনে তাঁকেও এ মামলায় আসামি করা হয়েছে।

দ্বিতীয় মামলায় ফারজানা রহমানের বিরুদ্ধে ৫৩ কোটি ৪১ লাখ ৩৮ হাজার ৩৯৩ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন এবং ২ কোটি ৪৫ লাখ ৩৪ হাজার ৬১১ টাকার সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগ আনা হয়েছে। এ মামলায় তাঁর বাবা, মা ও ভাইকেও আসামি করা হয়েছে।

আর তৃতীয় মামলায় মতিউরের ছেলে তৌফিকুর রহমানের বিরুদ্ধে ৪২ কোটি ২২ লাখ ৫৮ হাজার ২৭১ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন ও ১৩ কোটি ৩৮ লাখ ৭০ হাজার ৭৪৩ টাকার সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগ আনা হয়েছে। মামলায় মতিউরকেও আসামি করা হয়েছে।

এর আগে গত বছরের ১৫ ডিসেম্বর মতিউর এবং তাঁর দ্বিতীয় স্ত্রী শাম্মী আখতার শিবলীর বিরুদ্ধে পৃথক দুই মামলা করে দুদক।

গত কোরবানি ঈদে ১৫ লাখ টাকায় (প্রাথমিক দর) ‘উচ্চবংশীয়’ ছাগল কেনা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল (ছড়িয়ে পড়া) হন মুশফিকুর রহমান ওরফে ইফাত। এর পর থেকে তাঁর বিলাসী জীবনযাপনের নানা তথ্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশ পায়। এই ছাগল-কাণ্ডের জের ধরেই আলোচনায় আসেন ইফাতের বাবা এনবিআর কর্মকর্তা মতিউর রহমান। তখন মতিউর রহমানের ছেলের দামি ঘড়ি, গাড়ি, আলিশান জীবনযাপন; মতিউর রহমান ও পরিবারের সদস্যদের নামে রিসোর্ট, শুটিং স্পট, বাংলো বাড়ি, জমিসহ নামে-বেনামে বিপুল সম্পদের তথ্য সামনে আসতে শুরু করে।

আরও পড়ুন

পরে ওই বছরের ২৩ জুন মতিউরের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করে দুদক। ২৫ জুন মতিউর ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের নামে থাকা ব্যাংক হিসাব, মুঠোফোনে আর্থিক সেবার (এমএফএস) হিসাব ও শেয়ারবাজারের বেনিফিশিয়ারি ওনার্স (বিও) হিসাব জব্দের নির্দেশ দেয় বিএফআইইউ।

একপর্যায়ে মতিউরকে এনবিআর থেকে সরিয়ে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগে যুক্ত করা হয়। সরিয়ে দেওয়া হয় রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংকে সরকার মনোনীত পরিচালক পদ থেকেও।