সাদা সাদা কালোজাম 

ঢাকায় জাতীয় বৃক্ষমেলায় সাদা জাম ধরা গাছ
ছবি: লেখক

জামের গায়ের রংটা কালো বলেই ওর নাম কালোজাম। কিন্তু সেই কালোজামই যদি হঠাৎ করে দুধের মতো সাদা আর ফর্সা হয়ে ওঠে, তো কেমন দেখাবে ফলটিকে?

ব্যতিক্রমী এই সাদা জামের দেখা পেয়েছিলাম বছর তিনেক আগে মাদারীপুর হর্টিকালচার সেন্টারে। সে সময় সেই সেন্টারের উপপরিচালক ছিলেন মো. সাইফুল ইসলাম। তাঁর সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, তিনি এ জাতের ব্যতিক্রমী বৈশিষ্ট্যের জামের চারা খুলনার ভাই ভাই নার্সারি থেকে এনে মাদারীপুর হর্টিকালচার সেন্টারে লাগান। সেখানে পরের বছরই তাতে ফল ধরে। ফুল আসে ফেব্রুয়ারি মাসে, ফল পাকে জুন মাসে। সেবার সে গাছটাতে অল্প কয়েকটি ফল ধরেছিল। কিন্তু তার পরের বছর গাছটি একটু বড় হয়ে ওঠে, ডালপালা ছেড়ে ঝোপাল হয়। ফলও বেশি ধরে। খাগড়াছড়ির রামগড় হর্টিকালচার সেন্টারেও একটি সাদা জামের গাছ লাগিয়েছিলেন সে সময়ের উপপরিচালক আশুতোষ কুমার বিশ্বাস। পরের বছরই সে গাছে তিন থোকা জাম ধরে। গাছের বৃদ্ধি ভালো, আগামী বছরে হয়তো সে গাছটিতে আরও অনেক বেশি সাদা জাম ধরবে।

সাইফুল ইসলাম দেশি কালোজামের বীজ থেকে চারা তৈরি করে তার সঙ্গে সাদা জামের ডগা কেটে জোড়কলম করে সাদা জামের চারা তৈরি করেছেন। তিনি জানান, এখন ফরিদপুর, রাজবাড়ী, মাদারীপুর হর্টিকালচার সেন্টারসহ আরও কয়েক জায়গায় সরকারি মূল্যে ৫০ টাকায় সাদা জামের চারা বিক্রি হচ্ছে। ইতিমধ্যে বৃক্ষপ্রেমী ও ছাদবাগানিদের মধ্যে সাদা জামের গাছ নিয়ে আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে। ঢাকায় জাতীয় বৃক্ষমেলায় গিয়ে সে আভাস পাওয়া গেল। সাদা জামের ফল ধরা গাছ দেখা গেল হোসেন নার্সারি ও ডিসি নার্সারিতে। তাঁরা একে বলছেন ‘থাই সাদা জাম’। গাছটি কালোজামের মতো অত লম্বা ও বড় হয় না, ডালপালা নিচের দিকে ঝুলে ঝোপাল থাকে। তাই কয়েক বছর তাকে হাফ ড্রামে লাগিয়ে যত্ন নিলে সাদা জাম প্রতিবছরই খাওয়া যাবে।

সাদা জামের গাছ দেখতে কালোজামের মতোই। সাদা জামের খোসা সাদা, পাকার পর ভেতরের শাঁসও হয় সাদা। জামের বীজ থেকে চারা হলে সেসব গাছে জাম ধরতে ছয়-সাত বছর লেগে যায়, কিন্তু সাদা জাম কলমের গাছ হওয়ায় অল্প বয়সের গাছে ফল ধরে।

জামের উদ্ভিদতাত্ত্বিক নাম Syzygium cumini, গোত্র মির্টেসি, সাদা জামেরও তাই। শুধু জাত আলাদা। যাঁরা বৈচিত্র্যসন্ধানী ও শৌখিন ফলপ্রেমী, তাঁরা বাড়ির আঙিনায় ও ছাদের বাগানে দু–একটা সাদা জামের গাছ লাগাতে পারেন। তবে বাণিজ্যিকভাবে সাদা জাম চাষের কথা এখনো ভাবার সময় আসেনি। কয়েক বছর পর্যবেক্ষণে রেখে, বাজারে ক্রেতাদের চাহিদা বুঝে সে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এ দেশে জামের দেশীয় জাতেরই অনেক জার্মপ্লাজম আছে। এগুলোর কোনোটা ছোট, কোনোটা বড়, কোনোটা টক, কোনোটা মিষ্টি, কোনোটার বিচি বড়, কোনোটার বিচি ছোট। খুদিজাম, বুটিজাম, টেপাজাম, ঢেপাজাম, নলিজাম, কাঠিজাম, কাকজাম, পুঁতিজাম, পুটিজাম, ভুতিজাম—এ রকম আরও অনেক নামের জাম এ দেশে আছে, বনে আছে বনজাম। কাকজামগুলো বেশ টক। ভুতিজাম ছোট মটর বুটের মতো, বুটিজাম তার চেয়েও ছোট। দেশীয় এসব জার্মপ্লাজম নিয়ে গবেষণা হতে পারে। বাণিজ্যিক চাষের জন্য দরকার খাটো গাছে অধিক ফলন দিতে পারে, এমন বড়, রসাল ও অম্লমধুর পাকা জামের জাত বাছাই ও সম্প্রসারণ করা।

মৃত্যুঞ্জয় রায়, কৃষিবিদপ্রকৃতিবিষয়ক লেখক