দিল্লিতে দ্বিপক্ষীয় বিষয়ে খলিল-দোভাল বৈঠক

বাংলাদেশের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান ও ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল। অজিত দোভালের আমন্ত্রণে একটি সম্মেলনে যোগ দিতে দিল্লি সফর করছেন খলিলুর রহমান

জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান গতকাল বুধবার দিল্লিতে ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভালের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। প্রায় ৪৫ মিনিট স্থায়ী এই বৈঠকে দুই দেশের সম্পর্কের গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে তাঁদের মধ্যে আলোচনা হয়েছে।

গতকাল সন্ধ্যায় দিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশনের এক্স হ্যান্ডলের এক পোস্টে এ তথ্য জানানো হয়। দিল্লির কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, ভারতের প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ে গতকাল বেলা ১১টার দিকে বৈঠকটি শুরু হয়।

কলম্বো সিকিউরিটি কনক্লেভের (সিএসসি) জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টাদের সপ্তম সম্মেলনে যোগ দিতে দিল্লি গেছেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান। সিএসসি হচ্ছে ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের একটি বহুপক্ষীয় আঞ্চলিক নিরাপত্তা ফোরাম। এবারের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে আজ বৃহস্পতিবার। এতে ভারত, বাংলাদেশ ছাড়াও অংশ নিচ্ছে সদস্যরাষ্ট্র মালদ্বীপ, মরিশাস ও শ্রীলঙ্কা। পর্যবেক্ষক হিসেবে থাকছে সিশেলস।

এই আঞ্চলিক নিরাপত্তা ফোরাম সামুদ্রিক নিরাপত্তা ও সুরক্ষা; সন্ত্রাস ও চরমপন্থা প্রতিরোধ; মানব পাচার ও আন্তর্জাতিক সংঘবদ্ধ অপরাধ দমন; সাইবার নিরাপত্তা এবং গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো ও প্রযুক্তির সুরক্ষা; মানবিক সহায়তা ও দুর্যোগে ত্রাণসহায়তায় কাজ করে।

বাংলাদেশ হাইকমিশনের এক্স হ্যান্ডলে প্রচারিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, গতকাল সকালে বাংলাদেশ ও ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টারা তাঁদের প্রতিনিধিদল নিয়ে বৈঠক করেছেন। বৈঠকে সিএসসির কর্মকাণ্ড নিয়ে আলোচনার পাশাপাশি দুই দেশের দ্বিপক্ষীয় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। অজিত দোভালকে ঢাকা সফরের জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছেন খলিলুর রহমান।

দিল্লির কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, সম্মেলনে আসা ব্যক্তিদের সম্মানে গতকাল সন্ধ্যায় দিল্লির একটি হোটেলে নৈশভোজের আয়োজন করা হয়। এতে যোগ দেন সিএসসির সম্মেলনে যোগদানকারী দেশের প্রতিনিধিরা।

সম্মেলনে যোগ দিতে অজিত দোভালের আমন্ত্রণে খলিলুর রহমান গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় দিল্লি পৌঁছান। আগের পরিকল্পনা অনুযায়ী তাঁর বুধবার দিল্লি যাওয়ার কথা ছিল। কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানিয়েছে, অজিত দোভালের সঙ্গে বৈঠকের বিষয়টি বিবেচনায় রেখে খলিলুর রহমান তাঁর সফরসূচিতে পরিবর্তন আনেন।

গত এপ্রিলে ব্যাংককে বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলনের ফাঁকে বৈঠক করেছিলেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ওই বৈঠকের পর গতকাল দিল্লিতে খলিলুর রহমানের সঙ্গে অজিত দোভালের বৈঠকটি দুই দেশের মধ্যে উচ্চপর্যায়ের প্রথম বৈঠক।

দুই দেশের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টাদের মধ্যে বৈঠকটি এমন এক সময়ে হলো, যখন দিল্লিতে আশ্রয় নেওয়া ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফেরতের বিষয়টি এখন আলোচনার কেন্দ্রে। গত সোমবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল (আইসিটি) মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে শেখ হাসিনাকে মৃত্যুদণ্ড দেন।

এরপর প্রত্যর্পণ চুক্তি অনুযায়ী শেখ হাসিনাকে ফেরত পেতে ভারতের কাছে চিঠি পাঠানোর প্রস্তুতি নিয়েছে বাংলাদেশ। তবে শেখ হাসিনাকে ফেরত চেয়ে বাংলাদেশের কূটনৈতিক পত্র গতকাল পর্যন্ত ভারতের কাছে হস্তান্তর হয়নি বলে ঢাকা ও দিল্লির কূটনৈতিক সূত্রগুলো এই প্রতিবেদককে নিশ্চিত করেছে।

দিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশন দুই দেশের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টাদের বৈঠক নিয়ে বিস্তারিত কিছু জানায়নি। তবে ‘দ্বিপক্ষীয় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে’ আলোচনা হয়েছে বলে যা উল্লেখ করা হয়েছে, সেটা তাৎপর্যপূর্ণ। বিশেষ করে বাংলাদেশে গত বছরের ৫ আগস্টের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর ১৫ মাস ধরে দুই দেশের সম্পর্ক টানাপোড়েনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এমন এক প্রেক্ষাপটে ১৭ নভেম্বর শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ডের রায়ের পর দুই দেশ বিবৃতি দিয়েছে।

অন্তর্বর্তী সরকারের বিবৃতিতে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানকে হস্তান্তরের জন্য ভারতের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। দুই দেশের মধ্যে সই হওয়া প্রত্যর্পণ চুক্তি অনুসারে দুজনকে হস্তান্তর করাটা ‘ভারতের জন্য অবশ্যপালনীয় দায়িত্বও বটে’ বলে উল্লেখ করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, ‘মানবতাবিরোধী অপরাধে দণ্ডপ্রাপ্ত এই ব্যক্তিদের দ্বিতীয় কোনো দেশ আশ্রয় দিলে তা হবে অত্যন্ত অবন্ধুসুলভ আচরণ এবং ন্যায়বিচারের প্রতি অবজ্ঞার শামিল। আমরা ভারত সরকারের প্রতি আহ্বান জানাই, তারা যেন অনতিবিলম্বে দণ্ডপ্রাপ্ত এই দুই ব্যক্তিকে বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করে।’

একই দিন ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও বিবৃতি দিয়েছে। এতে বলা হয়, ‘সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের ঘোষিত রায়ের বিষয়ে ভারত অবগত হয়েছে। একটি নিকট প্রতিবেশী হিসেবে ভারত শান্তি, গণতন্ত্র, অন্তর্ভুক্তি, স্থিতিশীলতাসহ বাংলাদেশের জনগণের সর্বোত্তম স্বার্থের বিষয়ে অঙ্গীকারবদ্ধ রয়েছে। এই লক্ষ্য অর্জনে আমরা সব সময় সব অংশীজনের সঙ্গে গঠনমূলকভাবে যুক্ত থাকব।’

আরও পড়ুন