পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশনের সভা স্থগিতে ২৩ বিশিষ্ট নাগরিকের উদ্বেগ

পার্বত্য ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশনের সভা বাতিলের দাবিতে পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদ রাঙামাটিতে ৩২ ঘণ্টা হরতাল ডাকে
প্রথম আলো ফাইল ছবি

পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশনের গতকাল বুধবার ডাকা সভা স্থগিত করায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন ২৩ বিশিষ্ট নাগরিক। আজ বৃহস্পতিবার গণমাধ্যমে দেওয়া এক বিবৃতিতে তাঁরা এই উদ্বেগ জানান। বৈঠক বাতিল করে পার্বত্য চট্টগ্রাম প্রশাসন চুক্তিবিরোধীদের ব্যাপারে নমনীয় ও নীরব ভূমিকা নিয়েছে বলেও বিবৃতিতে অভিযোগ করা হয়।

আড়াই বছর পর বুধবার রাঙামাটিতে পার্বত্য ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশনের বৈঠক ডাকা হয়েছিল। এর আগে মঙ্গলবার থেকে এই বৈঠক ঠেকাতে রাঙামাটিতে ৩২ ঘণ্টার হরতালের ডাক দেয় ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদ’ নামের একটি সংগঠন। এর পরিপ্রেক্ষিতে মঙ্গলবারই ওই বৈঠক স্থগিতের কথা জানানো হয়।

আজ ২৩ বিশিষ্টজনের দেওয়া বিবৃতিতে বলা হয়, ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদ নামের একটি চুক্তিবিরোধী মহল এই বাস্তবায়নের পথে নানা বাধা সৃষ্টি করে চলেছে।

এটাও লক্ষণীয়, সরকারের ভেতরের একটি প্রতিক্রিয়াশীল মহল প্রচ্ছন্নভাবে, কখনো কখনো প্রকাশ্যে এই চুক্তিবিরোধীদের সহিংস ও ধংসাত্মক তৎপরতায় ইন্ধন জুগিয়ে আসছে। তাদেরই মদদে এই কথিত নাগরিক পরিষদ সম্প্রতি পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশনের নির্ধারিত সভা বাতিলের জন্য ৩২ ঘণ্টা ধর্মঘট ঘোষণা করে এবং হরতালের নামে বিভিন্ন স্থানে নাশকতা চালায়। আর এই অসিলায় পার্বত্য ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশনের পূর্বনির্ধারিত সভা স্থগিত করা হয়েছে।’

বিবৃতিদাতারা বলেন, ‘আমরা গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ করছি, পার্বত্য চুক্তির পর ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি নিষ্পত্তি কমিশন গঠিত হলেও গত ২১ বছরে এ কমিশন একটিও ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি করতে পারেনি। তবে ২০১৬ সালে পার্বত্য ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন আইনের সংশোধনের পর ভূমি কমিশনের কয়েকটি সভা অনুষ্ঠিত হয় এবং বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়; যা বাস্তবায়নের অপেক্ষায় রয়েছে। ইতিমধ্যে ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশনে ২৬ হাজারের বেশি ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তির আবেদন জমা পড়েছে।’

বিবৃতিতে বলা হয়, ‘ভূমি বিরোধের জেরে একের পর এক পাহাড়ি গ্রামে সাম্প্রদায়িক হামলা, বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ, লুটপাট, পাহাড়ি নারীদের ওপর নির্যাতন, ধর্ষণসহ পাহাড়িদের হত্যা, অপহরণ, মিথ্যা মামলা, হয়রানি ক্রমেই এই জনপদকে নিরাপত্তাহীনতা ও শঙ্কার বিভীষিকার মধ্যে ঠেলে দিয়েছে। দেশের অন্যান্য যেকোনো অংশের চেয়ে নিরাপত্তার ক্ষেত্রে পার্বত্য চট্টগ্রামে জনবল ও বরাদ্দ কয়েক গুণ বেশি হওয়া সত্ত্বেও এই অঞ্চলে নিরাপত্তাহীনতা ও শঙ্কার মাত্রা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এটি দিবালোকের মতো পরিষ্কার যে পার্বত্য চট্টগ্রামের মূল সমস্যা ভূমি বিরোধের স্থায়ী সমাধান না করে এবং অপরাধীদের বিচার নিশ্চিত না করে দিনের পর দিন নিরাপত্তার চশমায় পার্বত্য চট্টগ্রামকে দেখলে বিরোধের মাত্রা বাড়তেই থাকবে। আর জাতিগত বৈরিতার গতিপ্রকৃতি জটিল থেকে জটিলতর হবে।

বিবৃতিদাতারা বলেন, ‘তথাকথিত হরতাল ডেকে পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশনের নির্ধারিত সভা বানচালের ঘটনায় যুক্ত ও ইন্ধনদাতাদের চিহ্নিত করা জরুরি।

তাঁদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ এবং সর্বোপরি পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশনকে কার্যকর করে ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তির মাধ্যমে অনতিবিলম্বে পার্বত্য ভূমি বিরোধের স্থায়ী সমাধানের জোর দাবি জানাচ্ছি।’

বিবৃতিতে যাঁরা স্বাক্ষর করেছেন হামিদা হোসেন, সুলতানা কামাল, খুশী কবির, ইফতেখারুজ্জামান, আবুল বারকাত, জেড আই খান পান্না, শাহীন আনাম, তবারক হোসেন, মেঘনা গুহঠাকুরতা, রানা দাশগুপ্ত, সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, সারা হোসেন, শামসুল হুদা, নিরূপা দেওয়ান, জোবাইদা নাসরীন, সুব্রত চৌধুরী, রোবায়েত ফেরদৌস, সুমাইয়া খায়ের, কাজল দেবনাথ, তাসনীম সিরাজ মাহবুব, সঞ্জীব দ্রং, হানা শামস আহমেদ ও দীপায়ন খীসা।