বার কাউন্সিল ভবন নির্মাণে দুর্নীতির অভিযোগ তুললেন মাহবুব উদ্দিন

সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি ভবনে বাংলাদেশ বার কাউন্সিল নেতারা ও জ্যেষ্ঠ আইনজীবীদের ব্যানারে সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন এম মাহবুব উদ্দিন খোকন (বসা অবস্থায় বা থেকে তৃতীয়)।
ছবি: প্রথম আলো

রাজধানীতে বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের ১৫ তলাবিশিষ্ট ভবন নির্মাণে দুর্নীতির অভিযোগ তুলেছেন কাউন্সিলের সদস্য এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন। তাঁর দাবি, ভবনটি নির্মাণে ১০-১৫ কোটি টাকা লাগার কথা, অথচ সেখানে ১১০ কোটি টাকার দুর্নীতিই হয়েছে। তিনি এ বিষয়ে দুদকের দ্বারা তদন্তও চান।

সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি ভবনে আজ বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে এই অভিযোগ করেন বিএনপিপন্থী এই আইনজীবী। তিনি দলটির যুগ্ম মহাসচিব। এদিকে ভবন নির্মাণের পর তাঁর এমন অভিযোগকে ‘অন্তঃসারশূন্য কথা’ বলে অভিহিত করেছেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন।

নারায়ণগঞ্জে নিজ চেম্বার থেকে খোরশেদ আলম মোল্লা ও সিদ্দিকুর রহমান নামের দুই আইনজীবীকে ২৩ অক্টোবর তুলে নিয়ে গেছে এমন দাবি করে এর প্রতিবাদে আজকের এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন হয়। বাংলাদেশ বার কাউন্সিল নেতারা ও সিনিয়র আইনজীবীদের ব্যানারে এটি হয়।  

সম্মেলনে সূচনা বক্তব্যে এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, প্রধানমন্ত্রী বার কাউন্সিল ভবন উদ্বোধন করেছেন। এই ভবনের ১২ কাঠা জায়গা, সরকারি জায়গা। টাকা দেওয়া লাগেনি। এর ওপর ভবন হয়েছে ১৫ তলা। দ্বিতীয় তলা, আন্ডারগ্রাউন্ড ও একতলা মোটামুটি খালি। যেখানে ১০-১৫ কোটি টাকা লাগতে পারে। ১৩৮ কোটি টাকা তারা খরচ করেছে। কে ঠিকাদার, কে ইঞ্জিনিয়ার, কারা কাজ করেছে? আমরা মনে করি নির্মাণে ১১০ কোটি টাকা দুর্নীতি হয়েছে। এ বিষয়ে দুদকের তদন্ত চাই। প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করছি, দুদককে নির্দেশ দেন—সত্যিকার অর্থে কারা এই দুর্নীতি করল।  

শনিবার (২১ অক্টোবর) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাজধানীতে নবনির্মিত ১৫ তলাবিশিষ্ট বাংলাদেশ বার কাউন্সিল ভবন উদ্বোধন করেন। ভবনটি নির্মাণে ব্যয় হয় ১৩৮ কোটি টাকা। ভবনটিতে রয়েছে অত্যাধুনিক সুযোগ-সুবিধা।

এভাবে অভিযোগ করা ঠিক না

মাহবুব উদ্দিন খোকনের অভিযোগ প্রসঙ্গে সাংবাদিকেরা অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিনের কার্যালয়ে তাঁর সঙ্গে কথা বলেন। এ সময় এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি বলব উনি (মাহবুব উদ্দিন খোকন) অবশ্যই খুব বড় একটা অন্যায় করেছেন আইনজীবীদের সঙ্গে। উনার উচিত ছিল যে ১৫ কোটি টাকায় করতে পারত, তাকে দিয়ে দরপত্রে বিট (অংশ নেওয়া) করানো। তাহলে সরকারের টাকাটা বাঁচত, আইনজীবীদের টাকাটাও এখানে সেভ হতো। সে সময় কিছু না করে ভবন নির্মাণ হওয়ার পরে এটি বলার অর্থ কী? এ ধরনের কথা বলা, দোষারোপ করা—এটি শুধু অন্তঃসারশূন্য কথা। উনি কোনো কিছু না দেখে এভাবে কথা বলেছেন। আমার কাছে মনে হয়, এভাবে অভিযোগ করা ঠিক না।’

অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘উনি যে দুর্নীতির কথা বলছেন, দুদক যদি তদন্ত করতে চায়, যেকোনো বিষয়ে তদন্ত করতে পারে। এ নিয়ে আমার কোনো বক্তব্য নেই। একটা ১৫ তলা ভবন, সম্পূর্ণভাবে ফার্নিশড। এখানো শুধু ভবনের কাঠামো বানানো না। এখানে ভবনের সঙ্গে এসি লাগানো, চেয়ার-টেবিল, আইনজীবীদের থাকার জন্য আসবাবপত্রসহ ব্যবস্থা রাখা—সবকিছু মিলিয়ে। এই টাকাটা সরকার দিয়েছে আইন মন্ত্রণালয় বাজেট থেকে। এটি বাস্তবায়ন করেছে পূর্ত মন্ত্রণালয় দরপত্রের মাধ্যমে।’

বার কাউন্সিলের চেয়ারম্যান অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন বলেন, উনি যেহেতু বার কাউন্সিলের একজন সদস্য, উনার উচিত বার কাউন্সিলে গিয়ে দেখা, কী কাজ করার কথা ছিল এবং কী কী কাজ হয়েছে বা অসম্পূর্ণ আছে কি না। প্রাক্কলিত ব্যয়টাও এখানে আছে। কোন খাতে কত ব্যয়, সেটিও আছে। যদি ১৫ কোটি টাকায় করা যেত, তাহলে উনি সেদিন কেন দরপত্রে অংশ নিলেন না, বা যে করে দিতে পারতেন, তাঁকে অংশগ্রহণ করালেন না?    

 উল্লেখ্য, এই ভবনে প্রশস্ত অফিস স্পেস, মিটিং রুম, দুটি কনফারেন্স রুম, রেকর্ড রুম, স্টোর রুম, ওয়েটিং এরিয়া, ক্যাফেটেরিয়া, ডে কেয়ার সেন্টার, প্রদর্শনী স্থান, রেজিস্ট্রেশন রুম, ব্যাংক, অ্যাকাউন্টস বিভাগ, আইটি বিভাগসহ অন্যান্য সুবিধা রয়েছে। টিভি লাউঞ্জ, রান্নাঘর, ডাইনিং হলসহ বার ভবনে শতাধিক আইনজীবীর থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। আইন ও বিচার বিভাগের তত্ত্বাবধানে নির্মিত এবং স্থাপত্য বিভাগের নকশাকৃত ভবনটিতে পাঁচটি ট্রাইব্যুনাল কক্ষ, মাল্টিপারপাস হল ও আলাদা প্রার্থনা কক্ষ রয়েছে।