চট্টগ্রামে সংস্কৃতির টুকরো খবর

মনজুর মুন্নার একক আবৃত্তিসন্ধ্যা ‘তাহলে সময়, অর্জুন!’

টানা দুই ঘণ্টা একটানা আবৃত্তি করে দর্শক শ্রোতাদের মোহাবিষ্ট করে রেখেছিলেন আবৃত্তিশিল্পী মনজুর মুন্না। গত শুক্রবার সন্ধ্যায় তাঁর একক আবৃত্তির অনুষ্ঠানটির আয়োজক আবৃত্তি সংগঠন প্রমা। শিল্পকলা একাডেমির সুসজ্জিত এবং পরিকল্পিত মঞ্চে মনজুর যখন আবৃত্তি শুরু করেন, তখন সন্ধ্যা সাতটা।

বিরতিহীনভাবে তিনি একে একে আবৃত্তি শুরু করেন বাংলা সাহিত্যের বিখ্যাত সব কবিতা। মাঝেমধ্যে গল্প ও মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক উপন্যাসের অংশবিশেষও পাঠ করেছেন। পুরো অনুষ্ঠানে দর্শক শ্রোতা ছিল মিলনায়তনভর্তি। শিল্পীর পরিবেশনার প্রতিটা কবিতায় ফুটে উঠেছে প্রকৃতি, প্রেম, জীবনবোধ ও মুক্তিযুদ্ধের বিষয়।

গতানুগতিক অনুষ্ঠানের সাজসজ্জার বাইরে এসে মঞ্চসজ্জায় প্রমা আবৃত্তি সংগঠন ভিন্নতা এনেছে। সুন্দর মঞ্চসজ্জায় কাজ করেছেন পার্থ প্রতিম মহাজন, সঞ্জীত কুমার দে, রূপশ্রী ভৌমিক, আবীর বড়ুয়া তুষার। আলোক পরিকল্পনায় ছিলেন ফাইয়ায রাকিন নুর, সুমন বিশ্বাস। আবহ সংগীতে ছিলেন সৃজন রায় ও সারা বিশ্বাস। অনুষ্ঠানের শুরুতে প্রমার সভাপতি বাচিকশিল্পী রাশেদ হাসান তাঁর স্বাগত বক্তব্যে বলেন, আবৃত্তিচর্চা যেন হয় মানুষকে ভালোবাসার মাধ্যম, নিজের জীবনবোধকে শাণিত করার মাধ্যম। প্রমার সাধারণ সম্পাদক বিশ্বজিত পাল সঞ্চালিত অনুষ্ঠানটির শিরোনাম ছিল, ‘তাহলে সময়, অর্জুন।’ মনজুর মুন্না তাঁর আবৃত্তি শেষ করার পর উপস্থিত দর্শক শ্রোতাদের মধ্য থেকে কয়েকজন প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন।

প্রকাশনা উৎসব

মোহাম্মদ আলম চৌধুরীর লেখা ‘আসহাবউদ্দীন আহমদ ও মানবসমাজের মুক্তিভাবনা’ গ্রন্থের প্রকাশনা অনুষ্ঠান গত শুক্রবার চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের এস রহমান মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয়। পরিবেশবিষয়ক পত্রিকা প্রকৃতির সম্পাদক মুশফিক হোসাইনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অনুপম সেন। তিনি বলেন, ‘বর্তমানে আমাদের সমাজের সবচেয়ে বড় সমস্যা দুর্নীতি। এই দুর্নীতির বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন করতে না পারলে মানুষের স্বপ্নের লক্ষ্যে পৌঁছানো কঠিন হবে।’ তিনি আরও বলেন, মানুষের সব মৌলিক চাহিদা পূরণ করতে পারে, এমন একটি ব্যবস্থার জন্য আজীবন কাজ করে গেছেন আসহাব উদ্দীন আহমদ। কিন্তু তিনি এখন বিস্মৃতপ্রায় একজন মানুষ। আর তাঁকে নিয়ে একটি বই লেখা হয়েছে, এটা বড় আনন্দের সংবাদ। লেখক শামসুদ্দিন শিশিরের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বইটি নিয়ে আলোচনা করেন অধ্যাপক সিদ্দিক আহমেদ চৌধুরী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন সিরাজ উদ দৌল্লাহ, চা বিশেষজ্ঞ ও প্রাবন্ধিক আমিনুর রশীদ কাদেরী, প্রাবন্ধিক ও সাংবাদিক সুভাষ দে এবং কবি ও সাংবাদিক ওমর কায়সার। বইয়ের লেখক মোহাম্মদ আলম চৌধুরী স্বাগত ভাষণ দেন।

লেখক, সম্পাদক, বাম রাজনীতিক, সংগঠক আসহাব উদ্দীন আহমদ মারা যান ১৯৯৪ সালে। তিনি যুক্তফ্রন্টের প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য ছিলেন। অনেক গ্রন্থের লেখক। এ ছাড়া চট্টগ্রাম শহর ও বাঁশখালীতে বেশ কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেন।

সম্মিলিত আবৃত্তি জোটের সম্মেলন

আবৃত্তিশিল্পী ফারুক তাহের সম্মিলিত আবৃত্তি জোটের সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন। গত শুক্রবার সকালে চট্টগ্রাম জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত জোটের দ্বিবার্ষিক সম্মেলনে তিনি এই পদের জন্য নির্বাচিত হন। বাচিকশিল্পী মুজাহিদুল ইসলাম সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। নতুন কমিটি নির্বাচনের আগে শুক্রবার সকাল ১০টায় ২১টি সংগঠনের আবৃত্তি কর্মীর অংশগ্রহণে সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। আবৃত্তিশিল্পী অঞ্চল চৌধুরীর সভাপতিত্বে উদ্বোধন পর্বে প্রধান অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন। বিশেষ অতিথি ছিলেন কবি ওমর কায়সার।
সম্মেলনের দ্বিতীয় পর্বে ছিল সাংগঠনিক সভা। শুরুতে অঞ্চল চৌধুরীর সভাপতিত্বে সাধারণ সম্পাদকের প্রতিবেদন পেশ করেন মো. মুজাহিদুল ইসলাম। পরে জোটের ২০২২-২৪ কার্যবছরের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এতে নির্বাচন কমিশনারের দায়িত্ব পালন করেন অধ্যাপক মাসুম আহমেদ, সংগঠক আবদুল হালিম দোভাষ, মাসুদ বকুল ও আবৃত্তিশিল্পী মিলি চৌধুরী। নতুন কমিটিতে সহসভাপতি হন প্রণব চৌধুরী, বনকুসুম বড়ুয়া ও সংসদের মছরুর হোসেন। যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন শাহরিয়ার তানজিম ও আলী প্রয়াস। অর্থ সম্পাদক পদে নির্বাচিত হন অনির্বাণ চৌধুরী, সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন উম্মে সালমা, অনুষ্ঠান সম্পাদক হয়েছেন ইকবাল হোসেন, দপ্তর সম্পাদক হলেন সুপ্রিয়া চৌধুরী, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক হয়েছেন বর্ষা চৌধুরী, প্রশিক্ষণ সম্পাদক হয়েছেন ঐশী পাল এবং নির্বাহী সদস্য হয়েছেন অঞ্চল চৌধুরী, মিলি চৌধুরী, ইসলাম বাপ্পী, আসাদ উজ্জ্বল, শাহেদুল ইসলাম, মোহাম্মদ সেলিম ভূঁইয়া, মাহফুজা হক ও আবদুল্লাহ ফারুক রবি।