ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়: ৭ শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কার

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ফাইল ছবি

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন, অসদাচরণ ও শৃঙ্খলাপরিপন্থী বিভিন্ন অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় সাত শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে।

এ ছাড়া পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বনের দায়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও অধিভুক্ত কলেজগুলোর ৬০ শিক্ষার্থীকে বিভিন্ন মেয়াদে বহিষ্কারের শাস্তি দেওয়া হয়েছে।

শৃঙ্খলা পরিষদের সুপারিশ অনুযায়ী গত রোববার সন্ধ্যায় এক সভায় বহিষ্কারের এসব সিদ্ধান্ত নেয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম সিন্ডিকেট। আজ মঙ্গলবার সকালে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বহিষ্কৃতদের নাম প্রকাশ করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তর।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সাময়িক বহিষ্কৃত সাত শিক্ষার্থী হচ্ছেন মৃৎশিল্প বিভাগের জাহিদ শেখ ও মো. শাহরিন ইসলাম, ফলিত গণিত বিভাগের মো. আযহা ইসলাম, সংগীত বিভাগের মর্তুজা হাসান খান, ইতিহাস বিভাগের মো. আজিম মাহমুদ, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের মো. রিয়াদ মাল, ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের মো. আব্দুল ওহেদ।

পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বনের দায়ে বিভিন্ন মেয়াদে বহিষ্কৃত ৬০ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে দুজনকে পরীক্ষাসহ তিন সেমিস্টারের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে। ৪০ জনকে পরীক্ষাসহ দুই সেমিস্টার এবং ১৮ জনকে পরীক্ষাসহ এক সেমিস্টারের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে।

অপহরণ-ছিনতাইয়ে সাময়িক বহিষ্কৃত ৬ জন
সাময়িক বহিষ্কৃত জাহিদ ও শাহরিন বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। জাহিদ হাজী মুহম্মদ মুহসীন হল, শাহরিন স্যার এ এফ রহমান হলের ছাত্র। অভিযোগ ওঠে, গত ডিসেম্বরের শেষ দিকে তাঁরা শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজের এক শিক্ষার্থীকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শাহনেওয়াজ ছাত্রাবাসে আটকে রেখে ১০ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেন। মুক্তিপণ হিসেবে ২০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর বাবা তাঁদের নামে লালবাগ থানায় মামলা করেন। প্রাথমিক তদন্তে অভিযোগের প্রমাণ পাওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তাঁদের সাময়িক বহিষ্কার করেছে।

সাময়িক বহিষ্কৃত আযহা, মর্তুজা, আজিম ও রিয়াদ ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। আযহা ফজলুল হক মুসলিম হল, মর্তুজা শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হল, আজিম মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হল, রিয়াদ মাস্টারদা সূর্য সেন হলের ছাত্র। অভিযোগ ওঠে, গত জানুয়ারিতে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ঘুরতে আসা পুলিশের এক নারী কনস্টেবলসহ দুজনের পথ রোধ করেন তাঁরা। তাঁদের এলোপাতাড়ি মারধর করে ৫ হাজার ৫০০ টাকা ছিনিয়ে নেন তাঁরা। এ ঘটনায় শাহবাগ থানায় মামলা হয়। প্রাথমিক তদন্তে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় এই চার শিক্ষার্থীকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মান-মর্যাদা ক্ষুণ্ন, অসদাচরণ ও শৃঙ্খলাপরিপন্থী কাজে জড়িত থাকার অভিযোগে ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের ছাত্র ওহেদকে সাময়িক বহিষ্কৃত করা হয়েছে। ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের এই ছাত্র কয়েক মাস আগে ফেসবুকে এক ভিডিওতে বিশ্ববিদ্যালয়ের মল চত্বরে শতবার্ষিক স্তম্ভ ও সৌন্দর্য বর্ধনের চলমান প্রকল্পের সমালোচনা করতে গিয়ে প্রশাসনসহ বিভিন্ন পক্ষকে গালাগাল করেন বলে অভিযোগ।

সাময়িক বহিষ্কারের চিঠি সংশ্লিষ্ট থানা, শিক্ষার্থীর স্থানীয় অভিভাবক ও স্থায়ী ঠিকানায় পাঠানো হবে বলে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে। এতে আরও বলা হয়, বহিষ্কারাদেশ চলাকালে এই সাত শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে অবস্থান করতে পারবেন না। তাঁদের ‘কৃত অপরাধের’ জন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কেন স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হবে না, সে বিষয়ে সাত কার্যদিবসের মধ্যে লিখিত জবাব দিতে বলা হয়েছে।

প্রক্টর কার্যালয়ের কর্মকর্তা চাকরিচ্যুতি
ক্যাম্পাসে ভ্রাম্যমাণ দোকান থেকে চাঁদা নেওয়ার অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় প্রক্টর কার্যালয়ের টোকেনম্যান মো. শামীম হোসেনকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে।

গত বছরের ২৬ ফেব্রুয়ারি একটি ইংরেজি দৈনিকে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের বিভিন্ন অংশে তিন শতাধিক অবৈধ ভ্রাম্যমাণ দোকান বসিয়ে বছরে অর্ধকোটি টাকার বেশি চাঁদা তুলছে প্রক্টরিয়াল টিম। এই চাঁদাবাজির নেতৃত্বে রয়েছেন প্রক্টর কার্যালয়ের শামীম। ক্যাম্পাসের বিভিন্ন পয়েন্টে নির্ধারিত লাইনসম্যানদের মাধ্যমে চাঁদার টাকা তাঁর হাতে এসে পৌঁছায়।

অভিযোগ তদন্তে গত বছরের মার্চে একটি কমিটি করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তদন্তে অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় শামীমকে স্থায়ীভাবে চাকরিচ্যুত করার সিদ্ধান্ত হয় সিন্ডিকেট সভায়।

উপাচার্য এ এস এম মাকসুদ কামালের সভাপতিত্বে সিন্ডিকেট সভা হয়। সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য (প্রশাসন) মুহাম্মদ সামাদ, সহ-উপাচার্য (শিক্ষা) সীতেশ চন্দ্র বাছারসহ সিন্ডিকেটের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।