‘দায়ী কর্মকর্তাদের’ খুঁজে বের করবে রাজউকের তদন্ত কমিটি

ফাইল ছবি : প্রথম আলো

রাজধানীর বেইলি রোডে গ্রিন কোজি কটেজ ভবনটি রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) অনুমোদন নিয়ে করা হয়েছে। তবে ভবনটির ব্যবহারের ক্ষেত্রে ব্যত্যয় (অনিয়ম) ঘটেছে বলে রাজউকের প্রাথমিক তদন্তে উঠে এসেছে। এখানে কার কী দায়িত্ব, কারও অবহেলা আছে কি না, সেটি নিরূপণ করতে একটু সময় লাগছে বলে রাজউকের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

রাজউক বলছে, নকশা অনুমোদন প্রক্রিয়া থেকে শুরু করে অকুপেন্সি সার্টিফিকেট (ব্যবহার সনদ) ছাড়া বাণিজ্যিক কার্যক্রম পরিচালনা পর্যন্ত কোন সংস্থার কোন কোন কর্মকর্তার দায়িত্বে অবহেলা ছিল, সেটি নিরূপণ করা হচ্ছে। আগুনে পুড়ে যাওয়া ভবনে ব্যবসা পরিচালনার অনুমোদন–সংক্রান্ত নথিগুলো সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর কাছে চাওয়া হয়েছে। ওই নথিগুলো পেলে অবহেলা ও গাফিলতিতে জড়িতদের চিহ্নিত করা সম্ভব হবে।

রাজউকের সদস্য (উন্নয়ন নিয়ন্ত্রণ) মোহাম্মদ আবদুল আহাদ প্রথম আলোকে বলেন, রাজউকের অনুমোদন নিয়েই ভবন তৈরি করা হয়েছিল। তবে ভবন ব্যবহারের ক্ষেত্রে নিয়ম মানা হয়নি। এখানে কার কী দায়দায়িত্ব ছিল, সেটি নিরূপণের পাশাপাশি বিশেষজ্ঞ অভিমত নেওয়া হবে। এ ক্ষেত্রে নগর বিশেষজ্ঞ এবং ফায়ার সার্ভিসের মতামত নেওয়া হবে। এসব কার্যক্রম শেষ করে তদন্ত প্রতিবেদন প্রস্তুত করা হবে।

গত ২৯ ফেব্রুয়ারি বেইলি রোডের এই ভবনে আগুনে ৪৬ জনের মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় ঢাকার রমনা থানায় ২ মার্চ অবহেলাজনিত হত্যার অভিযোগে মামলা হয়। মামলায় বলা হয়, রাজউকের দোকান-পরিদর্শকদের ‘ম্যানেজ’ করে সেখানে রেস্তোরাঁ ব্যবসা (আটটি রেস্তোরাঁ, চা-কফিসহ বিভিন্ন ধরনের দোকান ছিল) চলছিল। মামলায় গ্রেপ্তার ভবনটির ব্যবস্থাপক মুন্সি হামিমুল আলমসহ চারজনকে রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে কারাগারে পাঠিয়েছে পুলিশ।

এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অকুপেন্সি সার্টিফিকেট ছাড়াই ভবনটিকে ফায়ার লাইসেন্স দিয়েছে ফায়ার সার্ভিস। আর ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন রেস্তোরাঁসহ অন্য দোকানগুলোকে ব্যবসা করার অনুমতি দিয়েছে। এ ঘটনায় রাজউক ও ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে আলাদা দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।

ফায়ার সার্ভিসের তদন্ত কমিটির একজন সদস্য প্রথম আলোক বলেন, ভবনের নিচতলার ‘চুমুক’ নামের চা-কফির দোকানের চুলা থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে। সেখানে গ্যাসের উপস্থিতি থাকায় আগুন দ্রুত পুরো ভবনে ছড়িয়ে পড়ে। ভবনে জরুরি বহির্গমন সিঁড়ি না থাকায় মানুষ চেষ্টা করেও বের হতে পারেনি।

ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে গঠন করা পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটির প্রধান সংস্থাটির পরিচালক (অপারেশন ও মেইনটেন্যান্স) লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম চৌধুরী। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, তদন্ত এখনো শেষ হয়নি।

এদিকে মামলাটি থানা-পুলিশ থেকে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগে (সিআইডি) হস্তান্তর করা হয়েছে। সিআইডির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আজাদ রহমান প্রথম আলোকে বলেন, সিআইডি আগুনের ঘটনায় দায়ের করা মামলার তদন্ত শুরু করেছে। তদন্তের অগ্রগতি পরে জানানো হবে।