পাঠক ও দর্শনার্থীদের পদচারণে মুখর বিজয় দিবসের বইমেলা
মহান বিজয় দিবসে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে আয়োজিত ‘বিজয় বইমেলা, ২০২৫’ দিনভর ছিল পাঠক ও দর্শনার্থীদের পদচারণে উৎসবমুখর। সরকারি ছুটির দিন হওয়ায় আজ মঙ্গলবার সকাল ১১টা থেকেই মেলায় নামে বইপ্রেমীদের ঢল।
মেলায় আসা পাঠকদের বড় অংশের আগ্রহ ছিল মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার ইতিহাসের বই ঘিরে। প্রকাশকেরা জানান, অন্য দিনের তুলনায় আজ বিক্রি ছিল বেশ ভালো। বই কেনার পাশাপাশি অনেকে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে সাংস্কৃতিক আয়োজন উপভোগ করেন। বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির উদ্যোগে দর্শনার্থীদের মধ্যে গাছের চারাও বিতরণ করা হয়।
বিকেল বিজয় মঞ্চে ‘সমকালীন বাংলা সাহিত্য এবং মুক্তিযুদ্ধ’ শীর্ষক এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। মুহাম্মদ আহসান নাহিয়ানের সঞ্চালনায় এতে আলোচনা করেন কথাসাহিত্যিক সুহান রিজওয়ান ও সাদাত হোসাইন।
আলোচনায় সুহান রিজওয়ান মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ে তাঁর প্রিয় বই হিসেবে জাহানারা ইমামের ‘একাত্তরের দিনগুলি’ এবং মঈদুল হাসানের ‘মূলধারা ’৭১’-এর নাম উল্লেখ করেন।
সুহান রিজওয়ান বলেন, ফিকশন বা গল্প কখনোই ইতিহাসের মাপকাঠি হতে পারে না। ফিকশনে লেখকের স্বাধীনতা থাকে। উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, অনেক ফিকশনে দেখা যায় জার্মানি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জিতেছে। তবে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ক্ষেত্রে লেখকেরা সচরাচর এমন স্বাধীনতা নেননি।
ইতিহাসচর্চার সংকট নিয়ে সুহান রিজওয়ান বলেন, ‘আমাদের ইতিহাস নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলো ভিন্ন ভিন্ন কথা বলে। এর মধ্যবর্তী বা সঠিক অবস্থান অনেক সময় পাওয়া যায় না।’
পড়ার পদ্ধতি নিয়ে সুহান রিজওয়ান আরও বলেন, পাঠককে কীভাবে পড়তে হবে, তা নিয়ে উপদেশ দেওয়া ঠিক নয়।
সাদাত হোসাইন তাঁর আলোচনায় শহীদুল্লাহ কায়সারের ‘সংশপ্তক’ বইয়ের কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, এ বই দিয়েই তাঁর মুক্তিযুদ্ধের বই পড়া শুরু।
সাদাত হোসাইন বলেন, মানুষকে বই পড়ানো বর্তমানে সবচেয়ে কঠিন কাজ।
সাম্প্রতিক মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক লেখা প্রসঙ্গে সাদাত হোসাইন বলেন, ‘গত কয়েক বছরে মুক্তিযুদ্ধের বইগুলো অনেকটা দায়সারাভাবে লেখা হয়েছে। এগুলো পাঠকের মনে গভীর দাগ কাটতে পারছে না।’
ফরাসি বিপ্লবের উদাহরণ দিয়ে সাদাত হোসাইন আরও বলেন, লেখকেরা সমাজের প্রকৃত চিত্র তুলে ধরেছিলেন বলেই মানুষ বই পড়েছিল এবং বিপ্লবের দিকে গিয়েছিল।
সাদাত হোসাইন বলেন, ‘আমরা ইতিহাস ও সাল মুখস্থ করাই, কিন্তু শিক্ষার্থীদের মধ্যে সেই সময়ের অনুভূতিটা জাগাতে পারি না। জ্ঞান ছড়িয়ে দেওয়ার প্রক্রিয়া আনন্দদায়ক হলে সবাই তা গ্রহণ করবে।’
আলোচনা ছাড়াও মেলায় ছিল নানা সাংস্কৃতিক আয়োজন। সকালে শিশুদের জন্য ছিল আঁকিবুঁকি ও গুড্ডু টয়েসের খেলাধুলার আসর। সন্ধ্যায় ‘খেলার শৈশব’ ও ‘পেন্টোমাইম মুভমেন্ট’–এর মূকাভিনয় পরিবেশন করা হয়। এ ছাড়া মজার ইশকুলের শিশুশিল্পীরাও পরিবেশনায় অংশ নেয়।
রাতে ম্যাড থিয়েটার মঞ্চস্থ করে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক নাটক ‘ঘরে ফেরা’।
আয়োজকেরা জানান, আগামীকাল বুধবার বিজয় মঞ্চে ‘বিশ্ব সাহিত্য ও দলিলে মুক্তিযুদ্ধ’ বিষয়ে আলোচনা হবে।
এতে অংশ নেবেন গবেষক আরিফ রহমান, লেখক ও কবি তুহিন খান এবং গবেষক সহুল আহমদ। এ ছাড়া সন্ধ্যা সাতটায় নজরুল মঞ্চে গান গাইবেন ফারজানা ওয়াহিদ সায়ান এবং রাত আটটায় থাকবে মৃত্যুঞ্জয় কুমার দাস ও বিদ্যুৎ সরকারের যুগল বাঁশি বাদন।