একটি সোয়েটারের কারণে যেভাবে বেঁচে গেলেন চট্টগ্রামের এক তরুণ

অপহরণপ্রতীকী ছবি

স্নাতকপড়ুয়া আইমান রশিদকে চট্টগ্রামের কর্ণফুলী টানেল এলাকা থেকে মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। দাবি করা হয়েছিল পাঁচ লাখ টাকা চাঁদা। যাঁরা তুলে নিয়েছিলেন, তাঁরা সবাই পুলিশ সদস্য। তাই আইমানের পরনে পুলিশের সোয়েটার দেখে চিনতে অসুবিধা হয়নি তাঁদের। সোয়েটারের বিষয়ে তাঁরা আইমানকে জেরা করলে তিনি জানান, তাঁর ভাই পুলিশে কর্মরত। এরপর বিষয়টি খতিয়ে দেখতে অপহরণকারীরা চার ঘণ্টা সময় নেন। নিশ্চিত হয়ে চার ঘণ্টা পর আইমানকে তাঁরা নামিয়ে দেন নগরের সিআরবি এলাকায়।

আইমান রশিদের ছোট ভাই নোমান রশিদ ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নে কনস্টেবল পদে কর্মরত রয়েছেন। ভাইয়ের দেওয়া সোয়েটার পরনে না থাকলে হয়তো অন্য রকম হতে পারত তাঁর কাহিনি। এ ঘটনায় পাঁচ পুলিশ কনস্টেবলসহ আটজনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। আজ বুধবার চট্টগ্রামের জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শাহরিয়ার ইকবালের আদালতে মামলাটি করেন ভুক্তভোগী আইমান রশিদের বাবা হুমায়ুন রশিদ।

বাদীর আইনজীবী জুবাইর আলম প্রথম আলোকে বলেন, আদালত বাদীর বক্তব্য গ্রহণ করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগকে (সিআইডি) তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। মামলায় অভিযুক্ত ব্যক্তিরা হলেন পুলিশ কনস্টেবল নুর মোহাম্মদ, আবিদ আল মাহমুদ, আরিফ হোসেন, টিপু দাশ ও নুরনবী। তাঁদের মধ্যে নুরনবী নগর পুলিশে, অপর চারজন চট্টগ্রাম রেঞ্জ রিজার্ভ ফোর্সে (আরআরএফ) কর্মরত। তাঁদের সহযোগী সাইফুল ইসলাম, মো. রুবেল ও অপু পাল।

মামলার অভিযোগে বলা হয়, বাদীর বড় ছেলে স্নাতকপড়ুয়া আইমান রশিদ চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলে হাঁটতে বের হন গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর। ওই সময় (চট্ট মেট্রো-৫১-৩১০২) মাইক্রোবাস এসে তাকে তুলে নিয়ে যায়। গাড়িতে তাঁকে মারধর করে পাঁচ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়। আইমানের পরনে পুলিশের সোয়েটার দেখে তাঁকে জেরা করেন অপহরণকারীরা। আইমান তাঁর ভাই নোমান রশিদ পুলিশে কর্মরত আছে জানানোর পর অপহরণকারীরা সে বিষয়ে খোঁজখবর নেন। এ বিষয়ে নিশ্চিত হয়ে চার ঘণ্টা পর নগরের সিআরবি এলাকায় আইমান রশিদকে নামিয়ে দেওয়া হয়। পরে মাইক্রোবাসের নম্বরপ্লেটের সূত্র ধরে চালক ও অপহরণকারীদের চিহ্নিত করা হয়।

মামলায় অভিযোগের বিষয়ে পুলিশ কনস্টেবল নুর মোহাম্মদের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি না ধরায় তাঁর বক্তব্য পাওয়া যায়নি। আরআরএফ চট্টগ্রাম রেঞ্জের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) মো. শাহজাহান গতকাল মঙ্গলবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ আমাদের কাছে রয়েছে। এটি তদন্ত করা হচ্ছে। তদন্ত শেষ হওয়ার পর পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

এর আগে চট্টগ্রামে এক ফ্রিল্যান্সারের কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে নগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের এক পরিদর্শক, ছয় পুলিশ সদস্যসহ আটজনের বিরুদ্ধে নালিশি মামলা হয়েছে। গত মঙ্গলবার চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট কাজী শরীফুল ইসলামের আদালতে মামলাটি করেন ওই ফ্রিল্যান্সারের স্ত্রী হুসনুম লুবাবা। বাদীর আইনজীবী শওগতুল আনোয়ার খান প্রথম আলোকে বলেন, আদালত বাদীর বক্তব্য গ্রহণ করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।