প্রথম আলো সাহসের সঙ্গে সত্য প্রকাশ করে যাবে বলে জানিয়েছেন সম্পাদক মতিউর রহমান। প্রথম আলোর ২৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত কর্মী সম্মেলনে তিনি বলেছেন, ‘মুক্তিযুদ্ধ, জাতীয়তাবাদ, প্রগতিশীলতা, অসাম্প্রদায়িকতাকে মনে রেখে আমাদের সামনের দিনে কাজ করতে হবে। পিছু হটা যাবে না। নতুন পথের সন্ধান করতে হবে।’
আজ মঙ্গলবার সকালে রাজধানীর খামারবাড়ির কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ মিলনায়তনে এই কর্মী সম্মেলন হয়। প্রথম আলোর ঢাকা কার্যালয়ের সব কর্মীর পাশাপাশি সারা দেশের সব জেলা-উপজেলা প্রতিনিধি; যুক্তরাজ্যের লন্ডন, জার্মানির হ্যানোভার, অস্ট্রেলিয়ার সিডনি এবং ভারতের দিল্লি, কলকাতা ও মুম্বাই প্রতিনিধিরা এ সম্মেলনে যোগ দেন।
প্রথম আলো পরিবারের আট শতাধিক সদস্যের এই সম্মেলনে গণমাধ্যমটির ২৭ বছরের পথচলার গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তগুলো তুলে ধরেন সম্পাদক মতিউর রহমান। সত্য প্রকাশের মাধ্যমে সাহসী সাংবাদিকতায় অবিচল থাকার কথা উল্লেখ করে বর্তমান সময়ের সাংবাদিকতার চ্যালেঞ্জগুলো তুলে ধরেন তিনি। সামনের দিনগুলোতে কীভাবে সাহসের সঙ্গে সত্য খবর প্রকাশ করে যেতে হবে, সে বিষয়ে দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য তুলে ধরেন প্রথম আলো সম্পাদক।
সুশাসন ও গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের প্রত্যাশা তুলে ধরে মতিউর রহমান বলেন, ‘আমাদের প্রগতিশীলতা, মুক্তিযুদ্ধের আদর্শকে সমুন্নত রাখতে হবে। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামকে অব্যাহত রাখতে হবে। জাতীয় সমঝোতা, ঐক্যের চেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে।’
বাংলাদেশের জয়, বাংলাদেশের সফলতা, অগ্রগতি, উন্নতিকে সামনে রেখে এগিয়ে যাওয়াই প্রথম আলোর লক্ষ্য বলে উল্লেখ করেন সম্পাদক মতিউর রহমান। তিনি বলেন, ‘এর বাইরে প্রথম আলোর আর কোনো এজেন্ডা ছিল না, ভবিষ্যতেও থাকবে না। আমরা গণতন্ত্র চাই, আমরা আইনের শাসন চাই। আমরা একটা সামাজিক সমঝোতাও চাই, জাতীয় ঐক্যও আমরা চাই। এগুলোই আমাদের এজেন্ডা। আমরা শ্রমিকের, কৃষকের জীবনে উন্নতি চাই, নারীর অধিকার চাই। সকল ক্ষেত্রে আমরা বাংলাদেশের জয় চাই।’
এসব লক্ষ্য অর্জনের জন্য সত্য প্রকাশ ও সাহসী সাংবাদিকতার ওপর গুরুত্বারোপ করেন প্রথম আলো সম্পাদক। তিনি বলেন, ‘আমাদের সত্য সাহসের প্রমাণ দিতে হবে।’
সমাজে চিন্তার চর্চা বাড়াতে ভূমিকা রাখার জন্য কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান মতিউর রহমান। তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশে এখন চিন্তাভাবনা কমে যাচ্ছে। নতুন ধারণা তৈরি হচ্ছে না। আমাদের নতুন প্রজন্মকে চিন্তা করতে শেখাতে হবে। প্রচলিত কথাগুলো নতুনভাবে বলতে হবে। ভুলগুলো স্বীকার করে এগোতে হবে। আমাদের সামনে অনেক সংকট, কিন্তু সুযোগও আছে। আমরা সবাই মিলে যদি ভাবি, তাহলে নতুন পথ খুঁজে পাওয়া সম্ভব।’
প্রথম আলোর পথচলা নিয়ে সম্পাদক মতিউর রহমান বলেন, ‘কোনো দলীয় রাজনীতি, দেশের বাইরে কোনো রকম কোনো যোগাযোগ রেখে আমরা চলি নাই। আমরা স্বাধীন, এটা আমাদের শক্তি।’
অতীতে সরকারি চাপ ও রাজনৈতিক প্রতিকূলতা সামলে আসার কথা তুলে ধরে মতিউর রহমান বলেন, ‘আমাদের অফিসে হামলা হয়েছে, মামলা হয়েছে। কিন্তু আমরা ভয় পাইনি। কাজ করেছি স্বাভাবিকভাবে। কারণ, আমরা কোনো অন্যায় করি না। ইচ্ছাকৃত কোনো ভুল করি না। আমরা যদি সত্যের পক্ষে থাকি, তাহলে কোনো ভয় নেই। আক্রমণ হতে পারে, মামলা হতে পারে, কিন্তু সত্যকে থামানো যাবে না।’
স্বচ্ছতার কথা উল্লেখ করতে গিয়ে গণমাধ্যম শ্রেণিতে প্রথম আলো ও নিজে আটবার ‘সেরা করদাতা’ নির্বাচিত হওয়ার কথা তুলে ধরেন সম্পাদক মতিউর রহমান। তিনি বলেন, ‘আমাদের আয়-ব্যয়ের হিসাব একদম পরিষ্কার। এটা আমাদের সাহসের জায়গা। আগামীতেও সত্যই সাহস—এই চিন্তা নিয়েই এগিয়ে যাব।’