জীবনের লক্ষ্য নির্ধারণ করতে হবে। জীবনের একটা উদ্দেশ্য থাকবে। ছোটবেলা থেকে সেই উদ্দেশ্যকে লালন করবে। লক্ষ্য সামনে রেখে এগিয়ে যেতে হবে।
গতকাল রোববার নোয়াখালীতে এসএসসি বা সমমানের পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন বক্তারা। গতকাল জয়পুরহাটেও কৃতী শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা দেওয়া হয়। প্রথম আলোর আয়োজনে ও শিক্ষার ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ‘শিখো’র পৃষ্ঠপোষকতায় শিক্ষার্থীদের এই সংবর্ধনা দেওয়া হয়।
নোয়াখালীতে সংবর্ধনা দেওয়া হয় জিলা উচ্চবিদ্যালয়ে। জেলার ৯টি উপজেলার ১ হাজার ১২০ কৃতী শিক্ষার্থী সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়ার জন্য নিবন্ধন করে। দিনের শুরুতে বিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে নিবন্ধন কপি স্ক্যান করে শিক্ষার্থীরা অনুষ্ঠানস্থলে প্রবেশ করে। এরপর লাইনে দাঁড়িয়ে তারা ক্রেস্ট ও সার্টিফিকেট গ্রহণ করে।
অনুষ্ঠানে জেলা পুলিশ সুপার মো. শহীদুল ইসলাম শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, এখন ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ফেসবুক, ইউটিউব, হোয়াটসঅ্যাপ, যেটিই তুমি ব্যবহার কর, তোমার উদ্দেশ্য থাকতে হবে একটাই, জ্ঞান আহরণ।
নোয়াখালী সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ সালমা আক্তার বলেন, জীবনের লক্ষ্য নির্ধারণ করে সেটাকে সামনে নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে।
ভালো–খারাপ, ন্যায়–অন্যায় অনুধাবন করে শিক্ষার্থীদের জীবন পরিচালনার তাগিদ দেন প্রবীণ শিক্ষাবিদ ও নোয়াখালী সরকারি কলেজের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ কাজী মুহাম্মদ রফিক উল্যাহ।
নোয়াখালী জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা নূর উদ্দিন মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, তোমাদের পড়ালেখার পাশাপাশি ভালো মানুষ হিসেবে গড়ে উঠতে হবে। ভালো মানুষ হয়ে তোমরা সামনে এগিয়ে যাবে, এই দেশের নেতৃত্বে থাকবে।
অনুষ্ঠানে প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক বিশ্বজিৎ চৌধুরী বলেন, ‘আমাদের শুধু প্রতিযোগিতা করলে হবে না। তোমাদের যেসব বন্ধু আজ জিপিএ-৫ পায়নি, তারা কি ধ্বংস হয়ে গেছে? না। তাদের কেউ মায়ের অসুখ, বাবার অসুখ, নিজের অসুস্থতা কিংবা কোনো না কোনো পারিবারিক বিপর্যয়ের কারণে জিপিএ-৫ পায়নি। এমন হতে পারে, ভবিষ্যতে তারা অনেক বড় কিছু হয়ে উঠবে। সুতরাং আমরা অহংকারী হয়ে উঠব না।’
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন নোয়াখালী জিলা স্কুলের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ মীর হোসেন। স্বাগত বক্তব্য দেন প্রথম আলোর নোয়াখালীর নিজস্ব প্রতিবেদক মাহবুবুর রহমান। কৃতী শিক্ষার্থীদের পক্ষে ইনান হোসেন ও তানজিনা চৌধুরী প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে।
অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন পুলিশের বিশেষ শাখার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান ভূঁইয়া, সুধারাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনোয়ারুল ইসলাম, প্রথম আলো বন্ধুসভার উপদেষ্টা ও নোয়াখালী জিলা স্কুলের অবসরপ্রাপ্ত সহকারী প্রধান শিক্ষক মাফুজের রহমান, বন্ধুসভার আরেক উপদেষ্টা কামাল হোসেন প্রমুখ।
‘তরুণেরা এগিয়ে গেলে দেশও এগিয়ে যাবে’
জয়পুরহাটের অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, যে স্বপ্ন ঘুমাতে দেয় না, সেটিই আসল স্বপ্ন। জীবনের লক্ষ্যে পৌঁছাতে হলে ভালো স্বপ্ন দেখতে হবে। স্মার্টফোনের ভালোটা গ্রহণ করে খারাপটা পরিত্যাগ করতে হবে।
জয়পুরহাট সদর উপজেলা পরিষদের মোহাম্মদ মুজিবর রহমান ঢালী স্মৃতি মিলনায়তনে এ সংবর্ধনার আয়োজন করা হয়। সকাল থেকেই জয়পুরহাট সদর, পাঁচবিবি, কালাই, ক্ষেতলাল ও আক্কেলপুর উপজেলার কৃতী শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকেরা সংবর্ধনাস্থলে আসতে থাকেন। সকাল আটটা থেকে তিনটি বুথ থেকে নিবন্ধিত শিক্ষার্থীদের সনদ, ক্রেস্ট ও স্ন্যাকস বক্স সরবরাহ করা হয়। সকাল ১০টায় উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে শুরু হয় মূল অনুষ্ঠান।
অনুষ্ঠানে জয়পুরহাটের জেলা প্রশাসক (ডিসি) সালেহীন তানভীর গাজী বলেন, স্মার্টফোনের ভালো-খারাপের ব্যবহার আছে। তোমাদের স্মার্টফোনের ভালোটা নিতে হবে আর খারাপটা পরিহার করতে হবে।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ফারজানা হোসেন বলেন, ‘স্বপ্ন বাস্তবায়নে ভালো পড়াশোনার বিকল্প নেই। আবার শুধু মেধাবী শিক্ষার্থী হলেই চলবে না, সুন্দর ও পরিচ্ছন্ন সমাজ গড়তে ভালো মানুষও হতে হবে।
পাঁচবিবি সরকারি লাল বিহারী পাইলট উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আমিনুল ইসলাম বলেন, প্রথম আলো মানবিক সমাজ বিনির্মাণে বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। এই কৃতী সংবর্ধনা তার একটি উজ্জ্বল উদাহরণ।
প্রথম আলোর ক্রীড়া সম্পাদক তারেক মাহমুদ বলেন, আজকের অনুষ্ঠানের সব বক্তাই বলেছেন, কৃতী ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের মেধা বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে ভালো মানুষ হতে হবে। শুধু পাঠ্যপুস্তক পড়লে চলবে না। বাইরের বই বেশি বেশি পড়তে হবে। এ সময় তিনি মিথ্যা, মুখস্থ ও মাদককে না বলতে কৃতী শিক্ষার্থীদের অঙ্গীকার করান।
জান্নাতুল ফেরদৌস বেবীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন প্রথম আলোর জয়পুরহাট প্রতিনিধি রবিউল ইসলাম।
অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইশতিয়াক আহাম্মেদ, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আরাফাত হোসেনসহ কৃতী শিক্ষার্থীদের অভিভাবকেরা উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের জন্য ছিল প্রথম আলো ই-পেপার (১ মাস) ও চরকির (১৫ দিন) ফ্রি সাবস্ক্রিপশন, শিখোর সৌজন্যে বিনা মূল্যে কোর্স এবং ফ্রেশের সৌজন্যে স্ন্যাকস বক্স।
সারা দেশের ৬৪টি জেলায় প্রথম আলোর আয়োজনে ও শিক্ষার ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ‘শিখো’র পৃষ্ঠপোষকতায় জিপিএ-৫ প্রাপ্ত কৃতী সংবর্ধনা উৎসব অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এ আয়োজনে সহযোগিতা করছে ফ্রেশ, এটিএন বাংলা ও প্রথম আলো বন্ধুসভা।