বাংলাদেশ প্রটেস্ট আর্কাইভের উদ্বোধন
জুলাই গণহত্যার বিচারে ছবি-ভিডিওর পদ্ধতিগত আর্কাইভ গড়ে তোলা জরুরি
জুলাই গণ-অভ্যুত্থান চলাকালে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে পরিচালিত গণহত্যার বিচারে আন্দোলনকালীন ছবি-ভিডিও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। সেসব ছবি যথাযথভাবে সংগৃহীত করতে হবে। বিচার ছাড়াও এ দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের জন্য এসব ছবি ও ভিডিও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে থাকবে।
গতকাল শনিবার বিকেলে রাজধানীর পান্থপথে দৃকে ‘বাংলাদেশ প্রটেস্ট আর্কাইভ’–এর (বিপিএ) উদ্বোধনী উপলক্ষে এক আলোচনায় বক্তারা এ কথা বলেন। আন্দোলনের সময় তোলা ছবি ও ভিডিও বিপিএর কাছে জমা দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়।
প্যানেল আলোচনায় আলোকচিত্রী শহিদুল আলম বলেন, ‘এত বড় একটা অন্যায় আমাদের দেশে হয়ে গেছে। আরেকবার যেন কোনো সরকার কোনোভাবেই এই জিনিস না করতে পারে। এমন করে কেউ যেন পার পেয়ে না যেতে পারে।’
শহিদুল আলম আরও বলেন, ‘কোনো গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার সময়ে একজন ব্যক্তি স্রেফ দাঁড়িয়ে আছে, সেটির ছবি বা ভিডিও-ও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে। সেই ব্যক্তি ওই ঘটনার সময়ে ছিলেন কি ছিলেন না, সেটিই তখন প্রমাণ করবে ওই ছবি বা ভিডিও। আমরা সব সময় উপলব্ধি করি না, আমার কাছে যেটি (ছবি বা ভিডিও) আছে, এটি যে গুরুত্বপূর্ণ।’
বাংলাদেশ প্রটেস্ট আর্কাইভ প্রসঙ্গে এই খ্যাতিমান আলোকচিত্রী বলেন, ‘আর্কাইভ আয়োজনটিতে যারা ছবি-ভিডিও দিচ্ছে, তাদের ব্যক্তিগত গোপনীয়তা ও নিরাপত্তার বিষয়টি যেন গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হয়। সে যেন বিপদে না পড়ে।’
অনুষ্ঠানে লেখক ও গবেষক আলতাফ পারভেজ বলেন, ‘বাংলাদেশ মানবাধিকার লঙ্ঘনের বধ্যভূমি হয়ে থাকবে আরও বহু বছর। না হলে দেখুন, এই সরকারের আমলেও বিচারবহির্ভূত হত্যা হচ্ছে।’
আলোচনা সভায় সংবিধান সংস্কার কমিশনের সদস্য মুসতাইন জহির বলেন, ‘আন্তর্জাতিক পরিসরে বা দেশের ভেতরে অনেকেই বলছেন, গণহত্যা হয়েছে। আমরা ভবিষ্যতেও বলব, আওয়ামী লীগ গণহত্যা করেছে। কিন্তু আওয়ামী লীগের কোন নেতা গণহত্যা ঘটিয়েছে।...এসব বিস্তারিত যখন আপনি জানতে পাারবেন না, আমরা তখন আবার একটা জাতীয় সমস্যার মধ্যে পড়ব।’
বিপিএর লিড ইনভেস্টিগেটর কদরুদ্দিন শিশির বলেন, ‘সামাজিক মাধ্যম থেকে ভিডিও নিয়ে তার বিস্তারিত লিখে একটা জায়গায় রাখা একটা প্রাথমিক কাজ হিসেবে ঠিক আছে। কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে, একটা ভিডিও ধরে ধরে পুরো ঘটনা নিয়ে একটা রিপোর্ট তৈরি করা। আমাদের উদ্দেশ্য সেটাই।’
ইনভেস্টিগেটর মিনহাজ আমান বলেন, ‘আমরা জুলাই আন্দোলনের সময়কার ছবি-ভিডিও নিয়ে কাজ করছি এখন। কিন্তু আর্কাইভ করার বিষয়টি আমার অনেক দিনের আগ্রহের। ওপেন সোর্স থেকে আর্কাইভ করতে গেলে শুরুতেই আমরা পত্রিকাগুলোর শরণাপন্ন হই। আমি গত ২২ বছরের হত্যাকাণ্ডের একটা আর্কাইভ করছি। সেটা করতে গিয়ে দেখতে পেলাম, দেশের দুটি পত্রিকা প্রথম আলো ও ডেইলি স্টারের বাইরে সিস্টেমেটিক আর্কাইভ নেই।’
অনুষ্ঠানে আন্তর্জাতিক ডিজিটাল রাইটস সংগঠন এঙ্গেজ মিডিয়ার প্রতিনিধি রেজওয়ান ইসলাম বলেন, জুলাই গণহত্যা নিয়ে আর্কাইভিংয়ের কাজ করতে গিয়ে মানসিক সমস্যায় পড়েছেন, এমন অনেক তরুণকে পেয়েছেন তাঁরা। তাঁদের অনেককে মনোচিকিৎসাগত সহায়তা দেওয়া হয়েছে। এর ফলে ভুক্তভোগীরা উপকৃত হয়েছেন।
ভিজ্যুয়াল মাধ্যম ব্যবহার করে মানবাধিকার রক্ষায় কাজ করা আন্তর্জাতিক সংগঠন উইটনেসের সিনিয়র কর্মসূচি ব্যবস্থাপক (এশিয়া অ্যান্ড প্যাসিফিক) অরুল প্রকাশ সিন্নাপ্পান ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে উদ্বোধনী উপলক্ষে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন।
পরে উইটনেস কর্মকর্তা হুয়ে শিন চাও ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন।
অনুষ্ঠানের শুরুতে বিপিএর সহপ্রতিষ্ঠাতা শোয়েব আবদুল্লাহ তাঁদের কার্যক্রম তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘আমরা সবচেয়ে বেশি করে যেটি চাই, বিচারের কাজে যুক্ত যাঁরা রয়েছেন। তদন্তসংশ্লিষ্টরা যদি এসব ভিডিও থেকে উপকৃত হন, তাহলে আমাদের এ উদ্যোগ সার্থক হবে।’