চট্টগ্রামের চার হিমাগারে নেই আলু, কমেছে সরবরাহ

আলুর দাম বেড়ে যাওয়ায় বিক্রি কমেছে। বৃহস্পতিবর সকাল সাড়ে নয়টায় চট্টগ্রাম নগরের উত্তর কাট্টলী এলাকায়
ছবি: জুয়েল শীল

চট্টগ্রামের চারটি খাদ্যগুদামে খাওয়ার আলু নেই। ওই সব গুদামে কেবল বীজ আলু রয়েছে। এ ছাড়া দুই মাস ধরে কমেছে আলুর সরবরাহও। ব্যবসায়ীরা বলছেন, দুই মাস আগের তুলনায় দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আলুর সরবরাহ পাঁচ ভাগের এক ভাগে দাঁড়িয়েছে। এ জন্য সারা দেশের মতো চট্টগ্রামেও বাড়ছে আলুর দাম। বর্তমানে প্রতি কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ৪৫ থেকে ৫০ টাকায়। ব্যবসায়ী ও আড়তদারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত ছয় মাসে প্রতি কেজি আলুর দাম বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। এ ছাড়া গত এক মাসেই দাম বেড়েছে অন্তত পাঁচ টাকা।

বাজারে সাধারণত সাদা রঙের অ্যাসটরিক-গ্র্যানুলা ও লাল রঙের কার্ডিনাল জাতের আলু পাওয়া যায়।

তবে দামে তেমন বড় কোনো পার্থক্য নেই। গতকাল বুধবার ও আজ বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম নগরের পাঁচটি বাজারে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, কোথাও ৪৫ টাকার নিচে আলু বিক্রি হচ্ছে না। বেশির ভাগ বাজারেই ৫০ টাকায় আলু বিক্রি হচ্ছে। ক্রেতারা বলছেন, দাম বাড়ায় আলু কেনা কমিয়ে দিয়েছেন তাঁরা। পেঁয়াজ, চিনির পর আলুর দাম বাড়ার পেছনেও বড় ব্যবসায়ীদের কারসাজি রয়েছে বলে ক্রেতা ও খুচরা বিক্রেতাদের অভিযোগ। কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে খুচরা পর্যায়ে প্রতি কেজি আলুর দাম ছিল ২০ থেকে ২৫ টাকার মধ্যে। গত জুন পর্যন্ত সর্বোচ্চ ৩০ টাকার মধ্যেই আলুর দাম স্থির ছিল। তবে জুলাই মাসে একলাফে দাম বেড়ে ৪০ টাকায় বিক্রি হয়েছে আলু।

পাইকারি পর্যায়ে সে সময় আলুর দাম ছিল ৩০ থেকে ৩২ টাকা।

পাইকারি বিক্রেতারা বলছেন, নতুন আলু বাজারে এলে দাম কমতে শুরু করবে। যদিও আলুর মৌসুম শুরু হতে আরও কয়েক মাস বাকি। রিয়াজউদ্দিন বাজারের পাইকারি আলু ব্যবসায়ী মো. ওবাইদুল হক প্রথম আলোকে বলেন, আজ পাইকারি পর্যায়ে প্রতি কেজি আলু ৩৯ থেকে ৪২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

আড়ত থেকে কিনতে হচ্ছে বেশি দামে। বাজারের আলুর সরবরাহও কমেছে।

মো. ওবাইদুল হক বলেন, কোরবানির ঈদের আগে শহরে দৈনিক ২২ থেকে ২৩ ট্রাক আলু আসত বাইরের জেলাগুলো থেকে, বর্তমানে আসছে ৮-১০ ট্রাকের মতো। এ কারণে বাড়ছে দাম।

রিয়াজউদ্দিন বাজার আড়তদার কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক ফারুক শিবলী প্রথম আলোকে বলেন, গত দুই মাস আগেও প্রতিদিন রিয়াজউদ্দিন বাজারে আলু এসেছে ৪০ থেকে ৬৮ টন। গতকাল বুধবার ও আজ বৃহস্পতিবার এসেছে কেবল ৬ থেকে ৮ টন। চাহিদার তুলনায় এই আলু অতি সামান্য।

হিমাগারে নেই খাওয়ার আলু

সরবরাহের ঘাটতি পোষানোর জন্য হিমাগারেরও নেই পর্যাপ্ত আলু। চট্টগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, ২০২১-২২ অর্থবছরে চট্টগ্রাম জেলায় মোট আলুর উৎপাদন হয়েছিল ৫৯ হাজার ৫৪৫ টন। ২০২২-২৩ অর্থবছরে উৎপাদন কমে দাঁড়িয়েছে ৫৭ হাজার ২৪০ টনে। এক বছরে আলুর উৎপাদন কমেছে ২ হাজার ২১৪ টন।

চট্টগ্রাম কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, চট্টগ্রামের সাতকানিয়া, দোহাজারী, হাটহাজারী ও লোহাগাড়া উপজেলায় চারটি আলুর হিমাগার রয়েছে। চারটি হিমাগারের একটিতেও বর্তমানে খাওয়ার আলু নেই। মোট ধারণক্ষমতা সাড়ে ১১ হাজার টন হলেও সেখানে কেবল ২ হাজার ৬২৮ টন বীজ আলু রয়েছে।

চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলার মেসার্স বার আউলিয়া হিমাগারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ মাসুম প্রথম আলোকে বলেন, চারটি কক্ষে আলু সংরক্ষণ করা হয়, বেশির ভাগই বীজ আলু। চলতি বছরে একটি কক্ষও ঠিকমতো পূর্ণ হয়নি। ধারণক্ষমতা ৫ হাজার টন হলেও কেবল ৭৫০ টন বীজ আলু আছে।

চট্টগ্রামের জ্যেষ্ঠ কৃষি বিপণন কর্মকর্তা শাহ মোহাম্মদ মোর্শেদ কাদের প্রথম আলোকে বলেন, চারটি হিমাগারে খাওয়ার আলু গত মাসেই শেষ হয়ে গেছে। বর্তমানে সামনের মৌসুমের জন্য বীজ আলু সংরক্ষণ করা হয়েছে।

বাজার তদারক করে সরকারি সংস্থা

এদিকে দেশে চলমান আলুর ঊর্ধ্বগতির বিষয়ে গত মঙ্গলবার সরকারি দপ্তর ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি ও ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করেছেন জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের পরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান। সভায় জানানো হয়, খুচরা বাজারে আলুর দাম ৩৬ টাকার বেশি হওয়া উচিত নয়।

পরিচালকের এ বক্তব্যের পর গতকাল বুধবার চট্টগ্রাম নগরের পাহাড়তলী বাজারে অভিযান পরিচালনা করেছেন সংস্থাটির চট্টগ্রাম জেলা ও বিভাগীয় কার্যালয়ের কর্মকর্তারা। এ সময় ক্রয় রসিদ সংরক্ষণ না করায় ৩ প্রতিষ্ঠানকে ১৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।

জানতে চাইলে সংস্থাটির চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয়ের উপপরিচালক মোহাম্মদ ফয়েজ উল্যাহ প্রথম আলোকে বলেন, বাজারে অধিকাংশ বিক্রেতা কমিশনভিত্তিক ব্যবসা করেন। মোকাম পর্যায়ের ব্যবসায়ীরাই দাম নির্ধারণ করেন। কয়েক ব্যবসায়ীর তথ্য সংগ্রহ করে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।