ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে শীত নামতে দেরি 

ঘূর্ণিঝড় ‘মিগজাউম’ শীতের আগমন কিছুটা পিছিয়ে দিয়েছে। তবে দু-তিন দিনের মধ্যে তাপমাত্রা দ্রুত কমতে শুরু করবে।

সিলেটে ধানের শীষে জমে থাকা কুয়াশা শীতের বার্তা দিলেও ঢাকায় এখনো শীত অনুভূত হচ্ছে না। ছবিটি ৩ ডিসেম্বরের
ছবি: আনিস মাহমুদ

এই মৌসুমে শীত কম পড়বে—এ পূর্বাভাস আগেই দিয়েছিলেন আবহাওয়াবিদেরা। তবে শীত দেরিতে আসবে—এমনটা ধারণার বাইরে ছিল। সাধারণত ডিসেম্বরের এই সময়ে উত্তরাঞ্চলে শৈত্যপ্রবাহ শুরু হয়ে যায়। শহরগুলোতেও হালকা শীত নামা শুরু করে। কিন্তু ঘূর্ণিঝড় ‘মিগজাউম’ শীতের আগমন কিছুটা পিছিয়ে দিয়েছে।

গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে ঘূর্ণিঝড়টি ভারতের অন্ধ্র প্রদেশে আঘাত হানে। তবে ঘূর্ণিঝড়ের সঙ্গে আসা বিপুল পরিমাণ মেঘ আর জলীয় বাষ্প বাংলাদেশেও প্রবেশ করেছে। এতে হিমালয় পর্বতমালা পেরিয়ে আসা শীতের শুষ্ক বাতাস বাংলাদেশে ঢুকতে পারছে না। এতে শীত নামতে দেরি হচ্ছে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের হিসাবে, চলতি ডিসেম্বর মাসে রাজধানীর গড় তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে সাড়ে ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি। সারা দেশে সামগ্রিকভাবে এই সময়ের তুলনায় প্রায় ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি তাপমাত্রা বিরাজ করছে। সাধারণত এ সময়ে শীত নামতে শুরু করলেও এ বছর আবহাওয়ায় এখনো বর্ষাকালের তাপমাত্রা রয়ে গেছে। ফলে রাতে হালকা শীত পড়লেও দিনের বেলা রীতিমতো গরম অনুভূত হচ্ছে।

ডিসেম্বরে দেশের গড় তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি।

পুরোদমে শীত নামতে পারে ১০-১২ ডিসেম্বর নাগাদ।

আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব কাটতে আরও দু-তিন দিন লাগবে। এরপর তাপমাত্রা দ্রুত কমতে থাকবে। ১০-১২ ডিসেম্বর নাগাদ শীত বাড়তে থাকবে। আর মাসের শেষ দিকে দেশের উত্তরাঞ্চলসহ কয়েকটি জায়গায় শৈত্যপ্রবাহ শুরু হয়ে শীত ঋতু স্বরূপে হাজির হবে। তবে এবার সামগ্রিকভাবে শীত কম পড়তে পারে বলে আবহাওয়াবিদেরা যে পূর্বাভাস দিয়েছিলেন, এখনো তাঁরা সে অবস্থানেই আছেন।

এ ব্যাপারে আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ বজলুর রশীদ প্রথম আলোকে বলেন, এখনো দেশের বেশির ভাগ এলাকায় স্বাভাবিকের চেয়ে তাপমাত্রা বেশি। তবে আগামী দু-তিন দিনের মধ্যে তাপমাত্রা দ্রুত কমতে শুরু করবে। এতে উত্তরাঞ্চলসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে শীত বাড়তে পারে।

তবে বজলুর রশীদ বলেন, বৈশ্বিক আবহাওয়ায় ‘এল নিনো’ পরিস্থিতি বিরাজ করছে। এর প্রভাবে বঙ্গোপসাগরেও তাপমাত্রা বেড়ে গেছে। এতে একের পর এক ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হচ্ছে। সাগর থেকে জলীয় বাষ্প আসার পরিমাণও বেড়েছে। ফলে শীত কম পড়তে পারে।

বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা বলছে, এ বছর এল নিনো বেশ শক্তিশালী অবস্থায় আছে। পূর্ব ও মধ্যাঞ্চলীয় প্রশান্ত মহাসাগর এলাকায় সমুদ্রপৃষ্ঠের উষ্ণতা যখন স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি থাকে, তখন এ পরিস্থিতিকে এল নিনো বলা হয়। এর বিপরীত অবস্থার নাম ‘লা নিনা’। পূর্ব ও মধ্যাঞ্চলীয় প্রশান্ত মহাসাগর এলাকায় সমুদ্রপৃষ্ঠের উষ্ণতা যখন স্বাভাবিকের চেয়ে কম থাকে, তখন লা নিনা বলা হয়। গত বছর থেকে আবহাওয়ায় এল নিনোর প্রভাব শুরু হয়ে এ বছর তা তীব্র আকার নিয়েছে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের হিসাবে, চলতি বছরের অক্টোবর পর্যন্ত দেশে স্বাভাবিকের চেয়ে ৭০-৯০ শতাংশ পর্যন্ত বৃষ্টি কম হয়েছে। বিপরীতে নভেম্বরে শীত শুরু হওয়ার সময়ে বৃষ্টি বেশি হয়েছে। এ মাসে স্বাভাবিকের চেয়ে ৬৫ শতাংশ বেশি বৃষ্টি হয়েছে। আর নভেম্বরে সামগ্রিকভাবে তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে ১ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি ছিল।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, ডিসেম্বরেও স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি বৃষ্টি হতে পারে। বেশি থাকতে পারে তাপমাত্রাও। তবে মাসের শেষ দিকে উত্তরাঞ্চলসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে এক থেকে তিনটি শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে।

এদিকে গতকাল দেশের উপকূলীয় এলাকা এবং ময়মনসিংহে হালকা বৃষ্টি হয়েছে। দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল কক্সবাজারে ৩০ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় ১৩ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আজ বুধবার দেশের বেশির ভাগ এলাকায় দিনের তাপমাত্রা ১-২ ডিগ্রি সেলসিয়াস কমতে পারে। রাতের তাপমাত্রা কমবে সামান্য।